Advertisement
E-Paper

মোবাইলে আটকে চোখ, রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে-মনে! কী ভাবে সম্ভব পড়ুয়াদের ‘ডিজিটাল ডিটক্স’?

ঘুম থেকে উঠে অনলাইনে ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্টের জন্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সমাজমাধ্যমে— ইন্টারনেটই যেন গোটা একটা জীবন। স্বাভাবিক ভাবেই মাথায় বাড়তি চাপের বোঝা, বাড়ছে দুশ্চিন্তাও।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০২
ছোটরা আসলে মোবাইল হাতে সব ভুলে থাকতেই চায়!

ছোটরা আসলে মোবাইল হাতে সব ভুলে থাকতেই চায়! ছবি: সংগৃহীত।

দিন-রাত চোখের সামনে জ্বলছে নীল আলো। হাতে খোলা মোবাইল বা ট্যাব। কী চলছে সেখানে, সে দিকে নজর রাখা সব সময় সম্ভব নয় অভিভাবকের পক্ষে। পাঠ্যক্রম হোক বা পাঠ্যক্রম বহির্ভূত পড়াশোনা— সব কিছুর জন্যই ভরসা ইন্টারনেট। খাতায়-কলমে লেখা বা ব্ল্যাকবোর্ড থেকে পড়াশোনা করার অভ্যাস ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। সেই সুযোগে শিশু বা কিশোর শরীরে ও মনে ঢুকে পড়ছে নানা সমস্যা।

এ সমস্যা শুধু ছোটদের নয়। সমস্ত বয়সের মানুষের মধ্যে রয়েছে। কাজ বা পড়াশোনার প্রয়োজনে ইন্টারেনট, মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়। তাই একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োজন ‘ডিজিটাল ডিটক্স’।

ইন্টারনেটের প্রতি তীব্র আসক্তি, মোবাইল নিয়ে খেতে বসা, ঘুমোতে যাওয়ার সময় অবিরাম রিল দেখতেই থাকা— এর নেপথ্যে কোন কাজ করে কোন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া? আমেরিকান সাইকিয়াট্রিস্ট জর্জ এল এনগেল-এর ‘বায়ো-সাইকো-সোশ্যাল মডেল’ অনুযায়ী, যে কাজ করলে ডোপামিন, সেরোটনিন, এন্ডোরফিনের মতো ‘হ্যাপি হরমোন’ ক্ষরণের গতি বৃদ্ধি করে, সেই কাজ বেশি করতে চায় মানুষ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার মনের মধ্যে ক্রিয়া করে ‘অন্যেরা করছে, আমি কেন পিছিয়ে থাকব’ ভাবনা। ফল অনলাইন গেমিং কিংবা অবিরাম স্ক্রোলিং, পোস্টিং এবং তার পর লাইক ও শেয়ার গুনে চলা।

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

শরীরে কেমন সমস্যা হচ্ছে?

ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্থির হয়ে থাকছে চোখ স্ক্রিনে। অতিমারি পরবর্তী পর্বে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি, স্কুলেও শুরু হয়েছে ইন্টারনেট মাধ্যমে ক্লাস। অবসর সময়ে বাইরে গিয়ে ক্রিকেট ফুটবলের বদলে জায়গা করে নিয়েছে স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বা সার্টিফিকেট কোর্সের টিউশন। কমেছে শারীরিক কসরত, বাড়ছে স্থূলতা, কমেছে ঘুম আর পাল্লা দিয়ে মনখারাপ।

মনোবিদ জয়িতা সাহা বলেন, “স্কুলের পঠনপাঠন এমন হয়ে গিয়েছে, বাড়ি ফিরেও স্ক্রিনে নজর রাখতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। অনেক বাবা-মা সন্তানের জন্য ৩০ মিনিট স্ক্রিন টাইম বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই সময়ের মধ্যে সত্যিই শেষ করা যাচ্ছে না কাজ। ইন্টারনেট-এর প্রতি আসক্তি বেড়েই চলেছে।”

সব থেকে বড় বিষয়, বাবা-মা নিজেও তো সেই অন্তর্জালে আবদ্ধ। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্মও মোবাইল ছাড়া প্রায় অসম্ভব। তার উপর রয়েছে সমাজমাধ্যম। ফলে তাঁদের জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহারের বাড়বাড়ন্ত থাকলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাচ্চাদের উপরেও।

এ প্রসঙ্গে বেথুন কলেজের মনোবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান নীলাঞ্জনা বাগচীর মতে, লাগাতার স্ক্রিনে চোখ থাকলে পড়ুয়াদের ‘কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট’ অর্থাৎ সৃজনশীল মনোভাব তৈরি হতে পারে না। তারা নতুন করে কিছু ভাবতেই পারে না। তিনি বলেন, “ইন্টারনেটের অর্ধসত্য জীবনকেই বাস্তব বলে মনে করে। এ থেকে বাড়ছে একাকিত্বের সমস্যা।”

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট তপোলগ্না দাস জানিয়েছেন, কোনও কিছুতেই মনোসংযোগ করতে পারছে না পডু়য়ারা। ক্লাসে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ার মতো সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে।

কেন বাড়ছে মোবাইল আসক্তি?

মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, “খুব ছোট ঘটনাও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে ছোটদের মনে। তা থেকে রাগ, দুঃখ, ভয়, আতঙ্ক, দুশ্চিন্তার মতো অনুভূতি প্রবল হয়ে ওঠে। যা এক সময় তাকে গ্রাস করে ফেলতে চায়। সেই অনুভূতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতেই হয়তো শিশুটি মোবাইলের শরণপন্ন হয়।” অর্থাৎ, আসলে সে ভুলে থাকতেই চায়।

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

পড়ুয়াদের ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী ভাবে সম্ভব?

প্রায় সব মনোবিদই মনে করেন, স্কুল বা সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছেন, এমন পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ খুবই প্রয়োজন। মনে রাখা প্রয়োজন, বড়দের দেখেই তারা মোবাইল বা ল্যাপটপ বা ট্যাব-এর মতো যন্ত্রকে বিনোদন ভাবতে শুরু করে। তাই, অভিভাবকদেরই অভ্যাস বদলাতে হবে প্রথমে। আরও সময় দিতে হবে সন্তানকে। ডায়েরি লেখা, কোনও বই পড়া, বিশেষ কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। জোর দিতে হবে মাঠে খেলার দিকে।

মনোবিদ জয়িতা সাহা বলেন, “স্কুলগুলিরও দায়িত্ব রয়েছে। মাঠে খেলার বিষয়ে জোর দিতে হবে। অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে পড়াশোনার বাইরে ক্রিকেট, টেনিস, সাঁতার, দাবা— যে কোনও খেলায় বাচ্চাদের উৎসাহ প্রয়োজন।”

পড়াশোনার কাজের জন্য ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল না হয়ে উপায় নেই। কিন্তু অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কাটাতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট তপোলগ্না দাস বলেন, “স্ক্রিন থেকে দূরে থাকার জন্য নিজের মনকে শান্ত করা প্রয়োজন। দিনের কোন সময়টুকু ফোন ব্যবহার করা দরকার, কতটুকু সময় খরচ হল তার জন্য— সেটা নিজেকে মেপে চলতে হবে।”

মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মনে করেন, পড়াশোনার সঙ্গে বাড়ির কিছু কাজ— জল ভরা হোক, খাবার টেবিলে এক সঙ্গে বসে একবেলার অন্তত খাবার খাওয়া এবং পরিবেশন করা, খাওয়ার পর টেবিল পরিষ্কার করার মতো কাজে ছোট থেকেই যুক্ত করে নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে প্রয়োজন প্রশংসাও।

প্রয়োজন ভোরের আলো দেখা। তাই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বেশি করে জল খাওয়া, যোগাসন করা, সম্ভব হলে বারান্দা বা ছাদে গিয়ে সূর্যোদয় দেখা যেতে পারে। খাতায় সারাদিনের রুটিন আগে থেকে লিখে রাখা যেতে পারে।

Digital Detox Tips Education Tips for Students Wellness Mindful Parenting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy