সফট্অয়্যার ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স/ মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার— সবেতেই কম্পিউটার সায়েন্সে বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হয়। তাই স্নাতক স্তরে কিংবা স্নাতকোত্তর পর্বে এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনার ঝোঁক বেড়েছে গত কয়েক বছরে।
বিষয়ভিত্তিক চাহিদা বৃদ্ধির নেপথ্যে কী কী কারণ থাকতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে বেশ কিছু কারণ জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রযুক্তি শিক্ষার আগ্রহ:
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মিলি ঘোষের মত, ঘরে বা স্কুলে কম বেশি সর্বত্রই কম্পিউটারের উপস্থিতি উজ্জ্বল। স্কুলের পর কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও নতুন কিছু শেখার চাহিদা তো রয়েছেই। তারই সঙ্গে কৃত্রিম মেধার সহজলভ্যতা পড়ুয়াদের এই বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে।
আইআইটি খড়্গপুরের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ মিশ্র বলেন, “তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘প্যাশন’-কে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ার মানসিকতা থেকেই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়া আগ্রহ বেড়ে থাকে। প্রথমে পেন্টিং, গেমিংয়ে মন দেওয়া থেকে শুরু করে পরে এইচটিএমএল বা হার্ডঅয়্যারের মতো বিষয়ে শেখার ইচ্ছে তৈরি হয়।”
ডিজিটাল যুগে এগিয়ে থাকার ভাবনা থেকেই বিষয় বেছে নিতে চাইছেন পড়ুয়ারা। — ফাইল চিত্র।
পেশাগত নিশ্চয়তা:
সরকারি হোক বা বেসরকারি— কাজের বাজারে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিশেষজ্ঞদের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। তাই পেশা প্রবেশের নিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে বহু শিক্ষার্থীই এই বিষয়টি বেছে নিতে চান।
অধ্যাপক সুদীপ মিশ্রের পর্যবেক্ষণ, “আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বাজারে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে। তাই নিশ্চিত কর্মজীবনের কথা ভেবেই কৃত্রিম মেধা বা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইছেন পড়ুয়ারা।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রাজীব দাস জানিয়েছেন, রোবোটিক্স বা মেশিন লার্নিংয়ের মতো সৃজনশীল বিষয় নিয়ে পড়াশোনার পর নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রতি আগ্রহও রয়েছে বহু শিক্ষার্থীদের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাই চাকরির পাশাপাশি, গবেষণামূলক কাজে নিজেদের দক্ষ করে তুলতে চাইছেন তাঁরা।
পড়াশোনার সঙ্গে হাতে কলমে শেখার সুযোগ দেয় কম্পিউটার সায়েন্স। — ফাইল চিত্র।
দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ:
কম্পিউটার সায়েন্স পাঠ্যক্রমে পড়াশোনার সঙ্গে হাতে কলমে শেখার সুযোগও রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরে যে ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চলছে, তা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে শিখে নিতে পারছেন পড়ুয়ারা। শুধুমাত্র প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পেই নয়, কম্পিউটার সায়েন্স-এর অবদান রয়েছে চিকিৎসা পরিষেবা, পরিবহণ ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি দৈনন্দিন বিকিকিনিতেও।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর রাজীব দাস বলেন, “বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তির ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী ভাবে সম্ভব তা শিখিয়ে দেয় কম্পিউটার সায়েন্স। আবার তা নিয়ে কাজ করার দক্ষতাও তৈরি করে দেয়। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগও মেলে।”
আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক সুদীপ মিশ্র বলেন, “বর্তমানে প্রজন্ম অনেকাংশেই ‘স্টার্টআপ’ ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। সে ক্ষেত্রে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়লে অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায়।”
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মিলি ঘোষের মতে, কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে প়ড়ার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকশন বা সফট্অয়্যার তৈরির মতো কাজও শুরু করা যায়। এতে বহু নিত্য সমস্যার সমাধানও সম্ভব।