Advertisement
E-Paper

‘এত পড়ে কী করবে মেয়ে!’ কটাক্ষ শুনেও ফাজিল তৃতীয় সেমেস্টারের দশম স্থানে বনগাঁর আফরিন

চিকিৎসক হতে পারবে না আফরিন! তবু লড়াইয়ের ময়দানে জমি ছাড়তে নারাজ সে। এর আগে আলিম পরীক্ষায় সারা রাজ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। এ বার লক্ষ্য চূড়ান্ত পরীক্ষা। ইংরেজি নিয়ে উচ্চশিক্ষার কথা ভাবছে আফরিন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:৫৪
পরিবারের সঙ্গে আফরিন মণ্ডল।

পরিবারের সঙ্গে আফরিন মণ্ডল।

মেয়ের বয়স বেড়ে চলেছে ক্রমশ। অথচ, তার বিয়ে দেওয়ার নাম নেই! বনগাঁর নাসিরুদ্দিন মণ্ডলের আত্মীয়-প্রতিবেশীরা নিত্য কথা শোনাতেন। কিন্তু তাঁর বড়মেয়ে আফরিন মণ্ডল যে পড়াশোনায় ভাল!

চিকিৎসক হতে চেয়েছিল মেয়ে। আপাতত সেই স্বপ্ন শিকেয় উঠেছে। তবে, পড়াশোনায় এতটুকু খামতি নেই আফরিনের। এর আগে আলিম পরীক্ষায় সারা রাজ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিল। বুধবার, ফাজিল পরীক্ষার তৃতীয় সেমেস্টারের ফলপ্রকাশ পেতেই দেখা গেল, তার স্থান দশম। মেধাতালিকায় একমাত্র ছাত্রী।

কিন্তু মন ভাল নেই আফরিনের। আরও ভাল ফলের প্রত্যাশা ছিল। আপাতত, চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। ভাল ফল তাকে করতেই হবে। ভাল পড়াশোনা করলেই তো পাওয়া যাবে সরকারি চাকরি। সে-ই একমাত্র লক্ষ্য। বাড়িতে অসুস্থ মা, ছোট্ট বোন। দু’বেলার খাবার জোগাড় করতে দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন বাবা। সামান্য একফসলি জমিই তাঁর সম্বল।

বুধবার পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ ফাজিল পরীক্ষার তৃতীয় সেমেস্টারের ফলঘোষণা করেছে। এ বছরই প্রথম বার ওএমআর শিটে সেমেস্টার পদ্ধতিতে ফাজিল পরীক্ষা দিচ্ছে মাদ্রাসা পড়ুয়ারা। ফলপ্রকাশের পরই দেখা যায় বনগাঁর হজরত পীর আবু বকর দারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে দশম হয়েছে আফরিন মণ্ডল। খুশির হাওয়া পরিবারে।

আফরিন বলে, “ছোটবেলা থেকে আমি চিকিৎসক হতে চাইতাম। সে জন্যই আলিমের পর বাংলামাধ্যম উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু পরে বুঝলাম আমার বাড়ির পরিস্থিতি তেমন নয়, যে আমি চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুনবো। তাই সে স্কুল ছেড়ে আবার ফাজিলের জন্য ভর্তি হই।’’

পড়াশোনার পাশাপাশি আফরিন ভালবাসে ছবি আঁকতে। তাই বাবা তাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন এক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। কিন্তু এত খরচ করার সাধ্য যে নেই বাবার, বুঝতে অসুবিধা হয়নি সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া মেয়েটির। মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে আশাবাদী তার বাবা নাসিরুদ্দিন মণ্ডল। তিনি বলেন, “আলিম পরীক্ষাতেও চতুর্থ হয়েছিল আমার মেয়ে। আমরা জানতাম ফাজিলও ওর ভালই হবে। আমি মেয়েকে আরও পড়াতে চাই, কিন্তু চিন্তা তো টাকা-পয়সা নিয়ে। জানি না কী ভাবে কী করব!’’

মেয়ের কথা বলার সময় গর্বিত বাবার গলা যতটা উৎফুল্ল ছিল, পরের কথাগুলি বলার সময় সেখানে জমল খানিক মেঘ। আফরিনের মা গৃহিণী, ছোটবোন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সামান্য জমিতে চাষাবাদ করে উপার্জন করেন। বছর দুয়েক আগে স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে খরচ হয়ে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। জমানো পুঁজি বলতে প্রায় কিছুই নেই। তাই মেধাবী মেয়ের উচ্চশিক্ষা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই।

তিনি বলেন, “মেয়ে চায় ফাজিল পাশের পর ইংরেজি নিয়ে পড়বে। ভাল নম্বর নিয়ে ভাল কলেজে পড়তে চায়। পাশাপাশি সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেবে বলেছে। এত কিছু কী ভাবে করব জানি না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চেষ্টা তো আমাকে করতেই হবে।”

আঁকা শেখা না হলেও অবসরে নিজের মতো ছবি আঁকে আফরিন। জীবনের সঙ্গে আপোস করেও তার দু’চোখে টলটল করে স্বপ্ন।

madrasah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy