শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করবে এসএসসি, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞপ্তি। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ২০১৬ সালে কাজে যোগ দেওয়া, বর্তমানে চাকরিহারা প্রার্থীরা। তাঁদের একাংশের দাবি, এই আবেদন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ফের মামলা হতে পারে আদালতে। কারণ কমিশনের তরফে এখনও প্রকাশ করা হয়নি ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’দের নির্দিষ্ট তালিকা।
২০১৬-এর প্যানেল বাতিল হওয়ায় যেমন ১৫,৪০৪জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছিল, তেমনই কাজ হারিয়েছিলেন স্কুলে কর্মরত ১০,৩৪৮জন গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি কর্মীও। এর আগেই সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি মিলিয়ে ‘যোগ্য’ চাকরিহারার সংখ্যা ৩,৩৯৪। এর মধ্যে গ্রুপ সি-তে রয়েছেন ১,২৫৫ জন। গ্রুপ ডি-তে ২১৩৯ জন। অর্থাৎ, বাকিরা সকলেই ‘অযোগ্য’। এদের মধ্যে ওএমআর শিট-এ কারচুপির অভিযোগ ৭৮২ জন গ্রুপ-সি এবং ২,১৩৯ জন গ্রুপ ডি কর্মীর বিরুদ্ধে। প্যানেলে নাম না থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাওয়ার অভিযোগ ছিল ৯৯০ জন শিক্ষাকর্মীর বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন:
আদালতের তরফে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যত শীঘ্র সম্ভব ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’দের স্পষ্ট তালিকা প্রকাশ করার। গত সেপ্টেম্বরে ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ‘অযোগ্য’ শিক্ষাকর্মীদের যথাযথ তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন।
এ দিকে নতুন করে পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে বৃহস্পতিবার। কিন্তু চাকরিহারাদের অনেকেই আশঙ্কা করছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ না করায় ফের মামলা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া ফের থমকে যাবে।
চাকরিহারা গ্রুপ-সি শিক্ষাকর্মী অমিত মণ্ডল বলেন, “সুনির্দিষ্ট ভাবে ‘অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ না করে আবেদন গ্রহণ করছে এসএসসি। এটা কাম্য নয়। ফর্ম পূরণের আগেই এই তালিকা প্রকাশ করা উচিত।” তাঁর অভিযোগ, গত সাত মাসে তাঁরা এক টাকাও বেতন পাননি। আবার পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। অথচ, এসএসসি-র কাজকর্মে সেই রাস্তাও বন্ধ হতে চলেছে। তিনি বলেন, “ফের নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে গেলে আমরা মহাবিপদে পড়ব।”
গত মে মাসে রাজ্য সরকার ঘোষণা করে, চাকরিহারা গ্রুপ-সি কর্মীদের প্রতি মাসে ২০ হাজার এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদের ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে মামলায় করেন ‘ওয়েটিং লিস্ট’-এ থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। ‘যোগ্য’- ‘অযোগ্য’দের তালিকা প্রকাশ না করে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেয় হাই কোর্ট।
গ্রুপ-ডি কর্মী সুব্রত সিকদার বলেন, “আমরা ফের মামলার আশঙ্কা করছি। সরকার প্রথম থেকেই ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’ মিলিয়ে জলঘোলা করে রেখেছে। এ ভাবে চলতে থাকলে নিয়োগ তো দূরের কথা, আইনি জটিলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।”
যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন এসএসসি কর্তৃপক্ষ। তবে এক কর্তার কথায়, “যা হবে তা আইন মেনেই হবে।”
২০১৬-এ গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদের জন্য আবেদন জমা পড়েছিল ১৮ লক্ষেরও বেশি। গত ৯ বছরে কোনও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত না হওয়ায় প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। মনে করা হচ্ছে, এ বার আবেদনকারীর সংখ্যা ২৫ লক্ষ ছাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার কমিশনের তরফে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত জানানো হয়েছে, কোথায় কত শিক্ষাকর্মীর পদ খালি রয়েছে। হিসাব বলছে, গ্রুপ-সির শূন্যপদ রয়েছে ২৯৮৯ টি এবং গ্রুপ-ডি ৫৪৮৮টি। আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে ৩ নভেম্বরে থেকে। চলবে ৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
গত অগস্টে অবশ্য এসএসসি-র তরফে জানানো হয়েছিল, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আবেদন গ্রহণ করা হবে, চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ে আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ফের এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, এখনই আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।