বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে! ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে এ পংক্তি নির্মম সত্য হয়ে ওঠে। দিনের পর দিন কেটে যায় মাসের পর মাস, ন্যায় বিচারের আশায় থাকে মানুষ। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনও বিচারপ্রার্থী তাঁর জীবদ্দশায় ন্যায় পেলেন না।
এর অন্যতম কারণ জনসংখ্যার তুলনায় কম বিচারকের সংখ্যা। চলতি বছরে ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্টের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতি ১০ লক্ষ মানুষ পিছু ১৫ জন বিচারক রয়েছেন। অর্থাৎ ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। প্রতিদিন একজন বিচারককে বহু মামলার শুনানি করতে হয়। এই সময়াভাবও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী হয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু বিচারক পদে আসীন হতে গেলে কী করতে হয়?
নিম্ন আদালতে যাঁরা বিচার করেন তাঁদের 'বিচারক' বলা হয়। বিচারপতিদের উচ্চ ও শীর্ষ আদালতেই নিয়োগ করা হয়। অর্থাৎ, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিচারকদেরই যোগ্যতার নিরিখে বিচারপতি পদে নিয়োগ করা হয়।
উচ্চ আদালতের পরমার্শ মেনে রাজ্যপাল নিয়োগ করেন বিচারক। আবার, উচ্চ আদালত ও শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরা নিযুক্ত হন কলেজিয়ামের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিদের দ্বারা।
যে কোনও জনস্বার্থ মামলার শুনানি কেবল মাত্র বিচারপতিরাই করতে পারেন।
বিচারকদের কর্তব্য ও দায়িত্ব:
সমাজে বিচারকের পদটি খুবই সম্মাননীয় পদ। তাঁরা বিচারালয়ে সমস্ত মামলা-মোকদ্দমার শুনানির পর দু'পক্ষের বাদানুবাদের নিরপেক্ষ বিচার করে চূড়ান্ত রায় দেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
প্রার্থীদের স্নাতক স্তরে পাঁচ বা তিন বছরের এলএলবি ডিগ্রি থাকতে হবে।
আবেদনের জন্য প্রার্থীদের এলএলএম ডিগ্রি বা মাস্টার্স ডিগ্রি থাকা জরুরি নয়। তবে যাঁরা আইনে ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স করলে বিচারক পদে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
আরও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য আইন শিক্ষার প্রতিষ্ঠান:
১। ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস।
২। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
৩। সাউথ কলকাতা ল কলেজ
৪। হাজরা ল কলেজ
৫। সুরেন্দ্রনাথ ল কলেজ
প্রবেশিকা পরীক্ষা:
বিভিন্ন রাজ্য সরকারের জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এই পেশায় আসতে পারেন। পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্বে থাকে রাজ্যের পাবলিক সার্ভিস কমিশন।
আবার কিছু ক্ষেত্রে রাজ্যের হাইকোর্টও বিচারক পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষার আয়োজন করে। আইনে স্নাতক হওয়ার পর প্রার্থীরা এই পরীক্ষাটি দিতে পারেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তাঁরা নিম্ন আদালতে কাজ শুরু করতে পারেন।
পরীক্ষার ধরন:
জুডিশিয়াল সার্ভিসেস পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি, মেন এবং ইন্টারভিউ— এই তিনটি পর্যায়ে পরীক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করা হয়। প্রতি ধাপে উত্তীর্ণেরা, পরবর্তী ধাপের পরীক্ষা দিতে পারেন।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা:
আবেদনকারীদের কথা শোনার, কথা বলার, লেখার, যুক্তিসম্মত চিন্তার ক্ষমতা থাকা দরকার। পাশাপাশি অবশ্যই প্রয়োজন আইনের সম্যক জ্ঞান, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, মধ্যস্থতা করার ক্ষমতা, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, খুঁটিয়ে বিচারের ক্ষমতা, সহমর্মিতা-র মতো গুণাবলি।
বিচারকদের প্রকারভেদ:
বিচারকদেরও শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। সেগুলি হল—
১।জেলা আদালতের বিচারক
২।দেওয়ানি আদালতের বিচারক
৩।দায়রা আদালতের বিচারক
৪। উচ্চ আদালতের বিচারপতি
৫। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি
বেতন কাঠামো:
বিভিন্ন রাজ্যের নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেতনে তারতম্য থাকে। উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা পান মোটামুটি ভাবে মাসিক ২,২৫,০০০ টাকা এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা পান মোটামুটি ভাবে মাসিক ২,৫০,০০০ টাকা।