Advertisement
E-Paper

ফার্মাসিস্ট হবেন কী ভাবে, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা চাকরির ধরনই বা কেমন?

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক সময়ই ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা কিছুটা আড়ালে থাকলেও, সাধারণ মানুষের জন্য ওষুধ তৈরি ও বিতরণের ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ১৮:১৬
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

চিকিৎসকেরা রোগ নিরাময়ে ওষুধ দেওয়ার আগেই, সেই ওষুধগুলিকে নানা রকম যাচাই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। প্রথমে ল্যাবরেটরিতে ওষুধের ডোজ ও তার বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। তার পর সেই ওষুধগুলির কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসকেরা রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে থাকেন। এর পরেও ওষুধের নানা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলে এবং শেষমেশ তা খোলা বাজারে বিক্রি হয় সকলের ব্যবহারের জন্য। ওষুধ নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষার কাজ মূলত ফার্মাসিস্টদেরই। তাই চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক সময়ই ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা কিছুটা আড়ালে থাকলেও, সাধারণ মানুষের জন্য ওষুধ তৈরি ও বিতরণের ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

শিক্ষাগত যোগ্যতা:

ফার্মাসি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য পড়ুয়াদের দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা ও অঙ্ক নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। ন্যূনতম নম্বর থাকতে হয় ৫০ শতাংশ বা তার বেশি। এর পর রাজ্য বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে পড়ুয়াদের যোগ্যতা যাচাই করে স্নাতকে ভর্তি নেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গের নামী প্রতিষ্ঠানগুলিতে ভর্তির ক্ষেত্রে যোগ্যতা যাচাই করা হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজ়ামিনেশন (ডব্লিউবিজেইই)-এর মাধ্যমে।

স্কুল স্তরের পরীক্ষা শেষের পর ডিপ্লোমা ইন ফার্মাসি (ডিফার্ম) বা ব্যাচেলর অফ ফার্মাসি (বিফার্ম) বা ফার্ম ডি (ডক্টর অফ ফার্মাসি) কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়।

স্নাতক:

ডিপ্লোমা ইন ফার্মাসি (ডিফার্ম)

ডিফার্ম একটি দু’বছরের ডিপ্লোমা কোর্স। নিজস্ব ফার্মাসি বা ওষুধের দোকান খোলার জন্য এটি ন্যূনতম প্রয়োজনীয় যোগ্যতা বলে বিবেচিত। এর জন্য পড়ুয়াদের বিজ্ঞান নিয়ে দ্বাদশ উত্তীর্ণ হতে হয়। ডিফার্ম কোর্সের পড়ুয়ারা মেধার ভিত্তিতে বিফার্ম কোর্সের দ্বিতীয় বছরের ভর্তির সুযোগ পান। ডিফার্ম কোর্সে ভর্তির জন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের তরফে শুধু ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করা হয়। আবার কোনও ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।

বিফার্ম

বিফার্ম বা ফার্মাসির স্নাতকের কোর্সটি চার বছরের। এ ক্ষেত্রেও পড়ুয়াদের বিজ্ঞান নিয়ে দ্বাদশ উত্তীর্ণ হতে হয়। পাশাপাশি রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা বা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হতে হয়।

ফার্ম ডি

বিজ্ঞান নিয়ে দ্বাদশ উত্তীর্ণ হওয়ার পর পড়ুয়ারা ছ’বছরের ফার্ম ডি কোর্সেও ভর্তি হতে পারেন। এটি একটি পেশাদারি ডক্টরাল প্রোগ্রাম। যেখানে পাঁচ বছরের অ্যাকাডেমিক বিষয়বস্তু পড়ানো ছাড়াও এক বছর ইন্টার্নশিপ করানো হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে এই ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পান পড়ুয়ারা। বিফার্মে পাঠরতরা মেধার ভিত্তিতে ফার্ম ডি কোর্সের চতুর্থ বছরে ল্যাটারাল এন্ট্রির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পান।

স্নাতকোত্তর:

এমফার্ম

পড়ুয়ারা স্নাতকের পর ফার্মাসিতে স্নাতকোত্তরের জন্য মাস্টার অফ ফার্মাসি (এমফার্ম) কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। দু’বছরের এই কোর্সে সুযোগ থাকে একাধিক বিষয়ে স্পেশালাইজ়েশনরও। তবে এমফার্ম পড়ার জন্য উত্তীর্ণ হতে হয় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসি অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট (জিপ্যাট)-এ।

ডিফার্ম (পোস্ট ব্যাকালোরিয়েট)

যাঁদের বিফার্ম ডিগ্রি রয়েছে, তাঁরা এই ডিফার্ম (পোস্ট ব্যাকালোরিয়েট) কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাবেন। এই কোর্স পড়ুয়াদের ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস এবং গবেষণার কাজের মাধ্যমে পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। এটি তিন বছরের কোর্স। যার মধ্যে শেষ এক বছর ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তরফে কোর্সে ভর্তির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।

পিএইচডি ইন ফার্মাসি:

পড়ুয়ারা চাইলে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ফার্মাসিতে পিএইচডি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়া জরুরি। কলেজের তরফে আয়োজিত প্রবেশিকার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা যাচাই করা হবে।

লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা:

শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি পড়ুয়াদের স্টেট লাইসেন্স থাকাও জরুরি। একজন রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট হিসাবে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ফার্মাসি কাউন্সিল প্রদত্ত রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট থাকা জরুরি। তবে এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, স্নাতকের পরই পড়ুয়ারা লাইসেন্সের জন্য আবেদন জানাতে পারেন, স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি যোগ্যতা থাকার প্রয়োজন হয় না।

ফার্মাসি পড়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কলেজ:

১. যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

২. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

৩. ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসিউটিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (নাইপার)

৪.গুরু নানক ইনস্টিটিউট অফ ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি

৫. ডক্টর বি সি রায় কলেজ অফ ফার্মাসি অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস।

চাকরির ধরন ও চাকরি ক্ষেত্র:

ফার্মাসি পড়ে শিক্ষার্থীরা ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পক্ষেত্র, হাসপাতালের ফার্মাসি, গবেষণাক্ষেত্রে, উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনে, পাথলোজিকাল ল্যাবে, ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলিতে চাকরি পেতে পারেন বা স্বাধীন ওষুধ ব্যবসা করতে পারেন। যে পদগুলিতে চাকরি করতে পারেন সেগুলি হল— ফার্মাসিস্ট, ড্রাগ ইনস্পেক্টর, ড্র্যাগ থেরাপিস্ট, বায়োকেমিস্ট, বায়োফিজিসিস্ট, গবেষক, মেডিক্যাল সেলস রিপ্রেসেন্টেটিভ, রেগুলেটরি অফিসার প্রভৃতি। এই চাকরিগুলি আংশিক বা পূর্ণ সময়ের— দুই ধরনেরই হয়।

Pharmacy Pharmacy College Pharmacist Career after 12th
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy