বিদেশে গবেষণার পর দেশে ফিরে অনেকেই শুধুমাত্র কোনও নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে চান না। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ হয় না। তাঁদের কথা ভেবে এ বার শুধু গবেষণা এবং উদ্ভাবনী কাজই নয়, উদ্যোগপতি হওয়ার সুযোগও তৈরি করবে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) খড়্গপুর।
কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানের তরফে সম্প্রতি জার্মানির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই মর্মে মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং বা মউ স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর মধ্যে জার্মানির রাইন-মেন বিশ্ববিদ্যালয়, বেইরুথ বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। বৃহস্পতিবার বার্লিনে ভারতীয় দূতাবাস বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির কাউন্সেলর রামানুজ বন্দোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে আইআইটি খড়্গপুরের ডিরেক্টর সুমন চক্রবর্তী প্রথম মউ স্বাক্ষর করেন রাইন-মেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য পদাধিকারীর সঙ্গে। জানা গিয়েছে, এর পর জার্মানির অন্য নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও মউ স্বাক্ষর হবে।
আরও পড়ুন:
এত দিন পর্যন্ত আইআইটি খড়্গপুরের বহু পড়ুয়াই জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন। ‘স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ’-এর মাধ্যমে জার্মানি থেকেও বহু পড়ুয়া আইআইটি খড়্গপুরের নানা গবেষণাধর্মী কাজে যোগ দিয়েছেন। যৌথ ভাবে গবেষণাপত্র লেখার কাজও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের চুক্তি এই প্রথম।
সুমন চক্রবর্তী বলেন, “বিশ্বে ডিপ টেক ইনোভেশন বা টেকনোলজি নির্ভর গবেষণার জন্য জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানেও উন্নতমানের গবেষণাধর্মী কাজ হয়। তাই যদি মিলিত ভাবে নতুন কিছু করা যায়, সেই ভাবনা থেকেই এই আদানপ্রদান।” তিনি জানান, শুধু উন্নত মানের গবেষণাপত্র লেখা, গবেষণার পেটেন্ট নেওয়ার মধ্যেই প্রতিষ্ঠানকে সীমিত রাখা যাবে না। এই গবেষণার উদ্ভাবনী ভাবনাকে কী ভাবে বাণিজ্যিকীকরণ করা যায়, তা-ই মূল উদ্দেশ্য থাকবে এই মউ-এর।
‘আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানে পড়া মানেই কোটি টাকার চাকরি ধারাবাধা’— গতানুগতিক এই ভাবনাকেই বদলাতে চাইছে খড়্গপুর আইআইটি। সুমনের দাবি, “আইআইটি-তে পড়ার সুযোগ পেয়েছে মানে নিশ্চিত ভাবে ভাল চাকরি মিলবে, এ কথা যেমন সত্যি। তেমনি ৭৫তম বর্ষে আমরা চাইছি সকলের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরিতেও আমরা দিশা দেখাতে।”
জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলিতে উন্নতমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণাধর্মী কাজের সুযোগ রয়েছে। ভারতেও গবেষণার পাশাপাশি মানবসম্পদ এবং বিপুল চাকরির বাজার রয়েছে। রয়েছে উৎপাদন ক্ষেত্রও। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব গবেষণাকেন্দ্রের পাশাপাশি কেন্দ্রের ‘স্কিল ইন্ডিয়া মিশন’-এর অধীনে নেওয়া হয়েছে একাধিক উদ্যোগ।
সাম্প্রতিক এই মউ-এ পিএইচডি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, কর্মশালা, গবেষণাপত্র, স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে যেমন জোর দেওয়া হবে। গবেষণার মাধ্যমে নয়া প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং ‘অন্ত্রেপ্রোনিওরশিপ’ নিয়ে উদ্যোগী হবে দুই দেশ। সুমন জানান, বর্তমান পৃথিবীর নানা সমস্যার সমাধান খোঁজার জন্য স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার, ব্যাটারি টেকনোলজি, ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল মোবিলিটি, জল শক্তি এবং পরিবেশ, ডিজিটাল টেকনোলজি এবং এআই নিয়ে কাজ হবে। পাশাপাশি, ভারত সরকারের অনুমতি পেলে নিউটাউনের গড়ে তোলা হবে একটি রিসার্চ সেন্টার। যেখানে গবেষণার কাজের পাশাপাশি উদ্ভাবনী কাজগুলিকে ‘স্টার্ট আপ’ সংস্থার মাধ্যমে কী ভাবে বাণিজ্যিকীকরণ করা যায়, তা নিয়েও উদ্যোগী হবে দুই দেশ। বিদেশ থেকে যে গবেষকরা নতুন ভাবে দেশে ফিরে উদ্যোগপতি হতে চান অথবা গবেষণাধর্মী কাজেই যুক্ত থাকতে চান, তাঁদের জন্য নতুন দিশা দেখাবে এই মউ।