বাংলা নিয়ে পড়ে কী হবে? এমন কথারই যেন জবাব দিলেন কাটোয়ার নিলুফা ইয়াসমিন। বই এবং গানের চর্চা বৃথা যায় না— হাতেকলমে সেটাই প্রমাণ করলেন পূর্ব বর্ধমানের এই কৃতী। ২১ জুলাই ইউজিসি নেট-এর ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতেই জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ (জেআরএফ) এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসাবে আবেদনের যোগ্যতা অর্জনে দেশে বাংলা বিষয়ে সর্বভারতীয় স্তরে ৩ হাজার ৬৮৪ জনের মধ্যে প্রথম হয়েছেন নিলুফা। প্রাপ্ত নম্বর ১০০ পার্সেন্টাইল।
সর্বভারতীয় স্তরের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তাক লাগানো ফল রাজ্যের কৃতীদের। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, “২০২৫-এর ইউজিসি নেট জুনের ফলাফলে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার নিলুফা ইয়াসমিনকে বাংলায় ১০০ পার্সেন্টাইল পাওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল। একই সঙ্গে গণজ্ঞাপন এবং সাংবাদিকতায় সর্বভারতীয় স্তরে দ্বিতীয় হওয়ার জন্য রিক্তা চক্রবর্তীকেও অভিনন্দন। তোমাদের কৃতিত্বে রাজ্য গর্বিত। তোমাদের মা-বাবা, অভিভাবক এবং শিক্ষকদেরও অভিনন্দন।”
বর্তমানে নিলুফা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে পদাবলি এবং বিভিন্ন জনগোষ্টীর সঙ্গীতের প্রভাব কতটা, তা নিয়েই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পিএইচডি করছেন। ছোট থেকেই স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত সবেতেই প্রথম হয়েছেন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয়েও স্নাতকোত্তর স্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। এর পর দেশের মধ্যে প্রথম হওয়ার বিষয়টি একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
নিলুফা জানিয়েছেন, দেশের মধ্যে প্রথম হওয়ার সাফল্য অর্জনের বিষয়টি অবশ্যই কৃতিত্বের। কিন্তু তাতে ভাগীদার পরিবার, কর্মক্ষেত্রের সঙ্গীরাও। কারণ, প্রথম দু’বার পরীক্ষা দিলেও জেআরএফ পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ বলে সাহস জুগিয়েছেন সকলেই। গানের প্রতি ভালোবাসাও তাঁর অটুট। কথা প্রসঙ্গেই জানালেন, গান গাইতে ভালোবাসেন বলে ইউটিউবে মাঝেমাঝে তার ভিডিয়োও পোস্ট করেন নিলুফা।
বাংলা বিভাগের কৃতীদের সঙ্গে অধ্যাপক রমেনকুমার সর। ছবিতে নিলুফা ইয়াসমিনের ডানদিকে প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু (২০২৩-এ প্রথম) এবং বাঁদিক থেকে তিন নম্বরে ছন্দমঞ্জরী চট্টোপাধ্যায় (২০২১-এ প্রথম)। নিজস্ব চিত্র।
পিএইচডি-র কাজের মাঝে পড়াশোনা সামলাতেন কী ভাবে নিলুফা? প্রশ্নটা করতেই তাঁর সহাস্য জবাব, বাড়ি থেকে অনেকটা সাহায্য করেছে আমাকে। পড়াশোনায় যাতে মনটা বেশি থাকে, তার জন্য আমার গাইড তথা বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রমেনকুমার সর সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগেও ২০২১-এ ছন্দমঞ্জরী চট্টোপাধ্যায় এবং ২০২৩-এ প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু ইউজিসি নেট জেআরএফ-এ সর্বভারতীয় স্তরে প্রথম হয়েছিলেন। নিলুফা তাঁদের সান্নিধ্যে থেকেও কাজ শেখার সুযোগ পেয়েছেন। অধ্যাপক রমেনকুমার সর জানিয়েছেন, বাংলা বিভাগের ছাত্রীরা বছরের পর বছর এই ধারা বজায় রাখতে পেরেছেন, এটা খুবই আনন্দের বিষয়। তৃতীয় বার পরীক্ষা দেওয়া পর্যন্ত নিলুফা যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। তবে তিনি আরও বলেন, “কৃতীরা বাংলা সাহিত্যের যে সমস্ত বিষয় নিয়ে গবেষণার কাজ করছেন, তাতে লাইব্রেরির উপরই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্ভর করতে হয়। এতে গবেষণার কাজে যথোপযুক্ত তথ্যের ঘাটতি এবং পরবর্তী কালে তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। ফলে কাজের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থেকেই যাচ্ছে।”
চলতি বছরের ইউজিসি নেট-এ জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসাবে আবেদনের যোগ্যতা অর্জন করেছেন ৫ হাজার ২৬৯ জন। তাঁদের মধ্যে রাজ্য থেকে বাংলা বিষয়ে সর্বভারতীয় স্তরে ৩ হাজার ৬৮৪ জনের মধ্যে প্রথম হয়েছেন নিলুফা এবং গণজ্ঞাপন এবং সাংবাদিকতায় দেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন মধ্যমগ্রামের রিক্তা চক্রবর্তী।