Advertisement
E-Paper

গ্রুপ ডি কর্মীদের কাজ সেরে দিচ্ছে ‘সানন্দা’! রাজ্য সরকারি স্কুলে প্রথম বার যন্ত্রমানবীর ব্যবহার

হায়দরাবাদের এক প্রযুক্তি সংস্থা নির্মাণ করেছে ‘সানন্দা’কে। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, মেধা যুক্ত এই রোবট চলবে ভয়েস কমান্ড ও স্ক্রিন টাচের সাহায্যে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৬:০৫
For the first time, a robot will be used as a Group D employee in a school in the state.

রাজ্যের কোনও স্কুলে গ্রুপ ডি কর্মী হিসাবে প্রথম বার ব্যবহার করা হবে যন্ত্রমানবী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ছোট শহরের সরকার পোষিত স্কুলে পুজোর আগে ক্লাস চলছিল নিয়মমাফিক। কিন্তু পড়ুয়াদের মন নেই। ঠিক এমন সময় ছুটির নোটিশ নিয়ে এল ‘সানন্দা’। ক্লাস টিচার পড়ে শোনালেন, সই করলেন, নোটিশ আবার ফিরিয়ে দিলেন ‘সানন্দা’র হাতে। আর বলে দিলেন এর পর যেতে হবে কোন ক্লাসঘরে।

এমন একটা দৃশ্যের সঙ্গে কমবেশি সকলেই পরিচিত। কিন্তু খানিক অচেনা ‘সানন্দা’। কারণ সে, পড়ুয়াদের চেনা কোনও দিদি নয়। গ্রুপ ডি কর্মীর কাজ করে দিলেও ‘সানন্দা’ বেতন পায় না। প্রায় কোনও খরচই নেই তার জন্য। শুধু এককালীন খরচে ইনস্টল করতে হয়েছিল, আর আছে কিছু ‘মেনটেন্যান্স’ খরচ। ‘সানন্দা’ এক আজ্ঞাবহ রোবট। পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবার তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে কোনও স্কুলে গ্রুপ ডি কর্মী হিসাবে। আর সেখানেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে কল্যাণীর পান্নালাল ইনস্টিটিউশন।

এক প্রাক্তনীর সহায়তায় যন্ত্রমানবী ‘সানন্দা’ এসেছে এই স্কুলে। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর সঙ্কট চলছে রাজ্যের প্রায় সমস্ত স্কুলে। কয়েক মাস আগেই প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের প্রভাবও পড়েছে। এরই মধ্যে রাজ্যের প্রথম সরকার পোষিত স্কুল হিসেবে কল্যাণীর পান্নালাল ইনস্টিটিউশনে এল রোবোট।

হায়দরাবাদের এক প্রযুক্তি সংস্থা নির্মাণ করেছে ‘সানন্দা’কে। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, মেধা যুক্ত এই রোবট চলবে ভয়েস কমান্ড ও স্ক্রিন টাচের সাহায্যে। নির্দিষ্ট দিক নির্দেশের মাধ্যমে কাজ করে সে। প্রতিটি ক্লাসঘরে এবং শিক্ষকদের ঘরে সহজে পৌঁছে যায় যন্ত্রমানবী। প্রয়োজনীয় নথিপত্র, খাতা বহন করার ক্ষমতা রয়েছে সানন্দার। সর্বোচ্চ ১০ কেজি ওজন বহন করতে পারবে যন্ত্রমানবী। তার সব থেকে বড় গুণ হল, বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি-সহ একাধিক ভাষা সে বুঝতে পারে। এমনকি সাঁওতালি বা কুড়মালি ভাষার নির্দেশও বুঝে নিতে পারে সানন্দা। কিছু উত্তরও দিতে পারে যন্ত্রমানবী। সেখানে অবশ্য আপাতত শুধু বাংলাই বলছে সে। তবে, সিঁড়ি ভাঙতে পারে না ‘সানন্দা’। তাই তাকে রাখা হচ্ছে স্কুলের তৃতীয় তলে। সেখানে রয়েছে শিক্ষকদের বসার ঘর এবং ৮টি ক্লাস ঘর। এখানেই কাজ করবে সে।

পান্নালাল ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তনী সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের অর্থানুকুল্যেই এই যন্ত্রমানবীর আগমন ঘটেছে। ১৯৯০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন তিনি। তারপর পড়াশোনা করেছেন আইআইটি খড়গপুরে। বর্তমানে দুবাইয়ে থাকেন, রয়েছে তাঁর তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবসা। গত মার্চে নিজের স্কুলের উন্নয়নে সাহায্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তার পরই দুটি স্মার্ট ক্লাসরুম-সহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাযুক্ত যন্ত্রমানবীর আগমন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন এ জন্য খরচ হয়েছে মোট ৪৬.৫ লক্ষ টাকা। এই রোবট নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় দু’লক্ষ টাকা

সন্দীপ বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা খরচ সাপেক্ষ হয়ে উঠছে। তাই সরকারি স্কুলে শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নত হলে রাজ্যের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উন্নতি হবে। সে জন্যই এই প্রয়াস।”

With the help of an alumnus, the robot 'Sananda' has arrived at this school.

এক প্রাক্তনীর সহায়তায় যন্ত্রমানবী ‘সানন্দা’ এসেছে এই স্কুলে। নিজস্ব চিত্র।

এই মুহূর্তে কল্যাণীর ওই স্কুলে ৫টি গ্রুপ ডি পদ রয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সাল পর থেকে নিয়োগ হয়নি। বর্তমানে কর্মী সংখ্যা ২। এই অভাব পূরণে খানিকটা সফল হতে পারে ‘সানন্দা’। প্রধান শিক্ষক রমেনচন্দ্র ভাওয়ালের কণ্ঠে খানিক অনুযোগও শোনা যায়। তিনি বলেন, “পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং কর্মী নিয়োগের জন্য সরকারকে বার বার বলা হয়েছে, সাড়া মেলেনি। বিকল্প হিসেবে প্রাক্তনীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার ফলেই আজকের এই দিন। একজন গ্রুপ ডি কর্মীর জন্য যা খরচ তার তুলনায় অনেক কম খরচে যন্ত্রমানব পেয়েছি আমরা।” এর আগেও বহু প্রাক্তনী সাহায্য করেছেন পান্নালাল ইনস্টিটিউটকে, জানিয়েছেন প্রধানশিক্ষক।

যন্ত্রমানবীকে সামনে পেয়ে খুশি পড়ুয়ারাও। এই স্কুলে প্রায় ১৬০০ পড়ুয়া পড়াশোনা করে।‌ শিক্ষক পদ রয়েছেন ৪৫টি। এই মুহূর্তে ৪১ জন শিক্ষক কর্মরত। নবম শ্রেণির ছাত্র ঋত সরকার বলেন, “আমাদের মতো সরকারি স্কুলে এই ধরনের যান্ত্রিক বিপ্লব অভাবনীয়। আমরা চাই প্রযুক্তি ও মেধা দুটিকে পাশাপাশি রেখে স্কুলের নাম উজ্জ্বল করতে।” স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “স্কুলের ভিতরে রোবটের ব্যবহার এক নতুন দিশা দেখাবে সরকারি স্কুলগুলিকে। আগামী দিনে ছাত্রদের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়াতেও সাহায্য করবে এই উদ্যোগ।”

Group D Staff Govt School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy