Advertisement
E-Paper

এসআইআর আবহে নির্দেশ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের! কী পরিস্থিতি প্রাথমিক স্কুলগুলিতে?

৮ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে ১৭ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে জেলা ও অঞ্চল (সার্কল)স্তরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। অথচ, এই সময় বেশির ভাগ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরাই এসআইআর-এর কাজে ব্যস্ত থাকবেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:২৫
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

প্রাথমিক স্কুলগুলির একাংশ ধুঁকছে শিক্ষকের অভাবে। তার উপর চলতি মাস থেকে শুরু হয়েছে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন-এর (এস‌আইআর) কাজ। প্রাথমিক শিক্ষকদের বিএলও বা ব্লক স্তরের আধিকারিক নিযুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে পঠনপাঠন থেকে পরীক্ষাগ্রহণ— সবই প্রভাবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, আগামী ২১ ও ২২ ডিসেম্বর ৪১তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হবে। বিপাকে প্রধানশিক্ষকেরা।

তাঁদের অভিযোগ, ৮ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে ১৭ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে জেলা ও অঞ্চল (সার্কল)স্তরে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। অথচ, এই সময় বেশির ভাগ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরাই এসআইআর-এর কাজে ব্যস্ত থাকবেন।

শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠনই বন্ধ হতে বসেছে বহু স্কুলে, সেখানে ক্রী়ড়া প্রতিযোগিতার জন্য পড়ুয়াদের তৈরি করা প্রায় অসম্ভব, দাবি স্কুলগুলির। আবার কোনও স্কুল যদি প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে অস্বীকার করে, তা হলে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। তাই শিক্ষকেরা চাইছেন প্রতিযোগিতার সময় পিছিয়ে আগামী বছর জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি করা হোক।

বাঁকুড়া জেলার শিমুলকুন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমানে ছাত্রের সংখ্যা ৩৩। প্রধানশিক্ষক-সহ মোট শিক্ষকের সংখ্যাই ২। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে দু’জনেই বিএল‌ও। পরিস্থিতি সামাল দিতে অন্য স্কুল থেকে একজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করেছেন স্কুল ইনস্পেক্টর (এসআই)। প্রধানশিক্ষক সঞ্জয় বাউরি বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোর জন্যই এখন শিক্ষক নেই স্কুলে। এর মধ্যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করব কী ভাবে?”

কোলাঘাটচক্র মুকাডাঙি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৮৩। শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিন জন, প্রত্যেককেই নির্বাচন কমিশনের কাজে নিযুক্ত। প্রধানশিক্ষক মানস ঘাঁটা বলেন, “ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াব, না নির্বাচন কমিশনের কাজ করব! তার উপর এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন— যোগ না দিলে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। আমাদের আবেদন, এটি পিছিয়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে করা হোক।”

হিসাব বলছে, প্রাথমিক স্কুলগুলিতে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তৃতীয় পর্বের পরীক্ষা হয়। তার ফলাফল বাংলার শিক্ষা পোর্টালে আপলোড করা বা ফলাফল প্রকাশের কাজও শিক্ষকদেরই করতে হয়। অর্থাৎ, শুধু নভেম্বর মাসটিতেই পাঠনপাঠনের সময় পাওয়া যায়। এই সময় সে সব কাজই প্রায় বন্ধের মুখে।

বঙ্গীয় শ্রী প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির দাবি, রাজ্যের ৮৬ হাজার মতো নির্বাচনী বুথ রয়েছে। সেখানে যাঁদের বিএলও নিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁদের ৭০ শতাংশই শিক্ষক। সারা রাজ্যে প্রায় দেড় লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন প্রাথমিক। তার মধ্যে ৬০-৬৫ হাজার শিক্ষককেই বিএলও হিসাবে কাজ করতে হচ্ছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা বলেন, “সরকার ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এই প্রতিযোগিতা আগামী শিক্ষাবর্ষে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে আয়োজন করতে পারে। এই মর্মে আমরা ইতিমধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে চিঠিও দিয়েছি।”

যদিও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন বিষয়ে কোনও ইতিবাচক কথা শোনা যায়নি পর্ষদের তরফে। বরং তাদের দাবি, কমিশনের কাজের জন্য পড়াশনাো বন্ধ করে রাখা যায় না। ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও প্রত্যেক বছর হয়। এই শিক্ষাবর্ষেই তার আয়োজন করতে হবে। হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া যায় না।

৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এসআইআরের কাজ। ফর্ম জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হবে ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাজে নিযুক্ত শিক্ষকদের দাবি, সে দিনই তাঁদের কাজ শেষ হয়ে যাবে না। ডেটা এন্ট্রি ও নতুন সংশোধিত ভোটার তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। ফলে স্কুলের নানা দায়িত্বের পাশাপাশি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা প্রায় অসম্ভব।

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “যেখানে স্কুলগুলিতে বর্তমানের শিক্ষক অভাব রয়েছে এই পরিস্থিতিতে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। পর্ষদের বিবেচনা করে এটি স্থগিত রাখা উচিত।”

শিক্ষকমহলের একাংশের অভিযোগ, এক দিকে নির্বাচন কমিশনের চাপিয়ে দেওয়া কাজ, অন্য দিকে রাজ্য সরকারের নানা দাবি-দাওয়ার সাঁড়াশি আক্রমণ তাঁদের জীবন অতিষ্ট করে তুলছে। এরই প্রতিবাদে ১৭ নভেম্বর জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অফিস বিক্ষোভ অভিযানের ডাক দিয়েছে শিক্ষা অনুরাগী ঐক্যমঞ্চ।

WBBPE Sports
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy