সরকারি আমলা নিয়োগের পরীক্ষায় মহিলাদের যোগদানের আগ্রহ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বলছে তেমনই। জানা গিয়েছে, ২০১৯-এর পরীক্ষায় ৯০০ জনের মধ্যে ২২০ জন মহিলা উত্তীর্ণ হলেও, ২০২৩ সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষার তিনটি ধাপেই উত্তীর্ণ হয়েছেন ৩৯৭ জন।
কী জানিয়েছে কেন্দ্র?
কেন্দ্রীয় কর্মিবর্গ, জন অভিযোগ ও পেনশন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ শীতকালীন অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় মহিলাদের আবেদন আগের তুলনায় বেড়েছে। একই সঙ্গে তাঁরা প্রিলিমস, মেন এবং ইন্টারভিউ— তিনটি পর্বেই ভাল ফল করছেন।
কী বলছে রিপোর্ট?
রিপোর্ট অনুযায়ী, মহিলা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই প্রথম বারের চেষ্টায় সফল হচ্ছেন। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে তিন-চার বার পরীক্ষা দেওয়ার পর সিভিল সার্ভিসেস-এ চাকরি পেয়েছেন, এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে। তবে, এদের মধ্যে বেশির ভাগই কলা বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ের স্নাতক।
নিয়ম অনুযায়ী, মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে অসংরক্ষিত শ্রেণিভুক্ত প্রার্থীরা ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত সর্বাধিক ৬ বার ইউপিএসসি-র সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিতে পারেন। ওবিসি শ্রেণিভুক্ত এবং বিশেষ ভাবে সক্ষম কিন্তু তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত প্রার্থীরা ৩৭ এবং ৪২ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। অন্য সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা ৩৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত মোট ৯ বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
কোন পথে এগোচ্ছেন মহিলারা?
মহিলাদের সিভিল সার্ভিসেস-এর প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির বিষয়ে কেন্দ্র জানিয়েছে, অতিমারি পরবর্তী পর্যায়ে অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ বেড়েছে। তাতে শহরতলি এবং গ্রামের মহিলারাও চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হয়েছেন।
এ ছাড়াও গত পাঁচ বছরের পরীক্ষায় প্রথম স্থানও অর্জন করেছেন মহিলারাই। এদের মধ্যে রয়েছেন শক্তি দুবে, ঈশিতা কিশোর, শ্রুতি শর্মার মতো আধিকারিকেরাও। তাঁরা যে ভাবে পড়াশোনা করেছেন, কিংবা অন্য চাকরির সঙ্গেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন, তা জেনেও অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয় বারের জন্য নতুন করে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী হয়েছেন।
বাধা কোথায়?
‘জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষা’ রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যায় এখন পুরুষ-নারী অনুপাত ১০০০:১০২০। সেই তুলনায় সরকারের উচ্চপদস্থ আমলা পদে চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন ৪০০-রও কম মহিলা পরীক্ষার্থী।
ইউপিএসসি-র সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষার ক্ষেত্রে গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, উত্তীর্ণ মহিলা পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৫ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছেন না অধিকাংশ মহিলাই। কেন্দ্রের একাধিক রিপোর্টে উঠে এসে এমনই চিত্র।
আবার সফল মহিলা আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্যেও বেশ কিছু সমস্যার কথা উঠে এসেছে। সরকারি পদে চাকরির আকাঙ্ক্ষা থাকলেও কম বয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়া, পরিবারিক দায়িত্ব, কাজের জন্য অন্যত্র পোস্টিং-এর ক্ষেত্রে পারিবারিক বিধিনিষেধ— ইত্যাদি কারণে বেশির ভাগ সময়ই মহিলারা পিছিয়ে আসেন।