পুজোর আগে এক অন্য পুজো পালন করলেন মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের পড়ুয়ারা। নিজেরাই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে শবর সম্প্রদায়ের সঙ্গে দুর্গাপূজার সূচনা করলেন। সঙ্গে নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে, তা দিয়ে শবরদের একটি গ্রামের কচিকাঁচাদের হাতে তুলে দিলেন জামাকাপড়।
পুজো মানেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা অথবা পুজোর শপিং। কিন্তু এ বছর এই ধরনের আড্ডা বা শপিংয়ে মেতে না উঠে, কলেজের একটি ঘরেই তৈরি করা হল দেড় ফুটের প্রতিমা। এবং সেটি নিয়ে যাওয়া হল পুরুলিয়ার ওন্দায়, শবরদের এক গ্রামে।
দেড় ফুটের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেন কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের চতুর্থ সেমেস্টারের ছাত্র বিবেক সর্দার। তাঁকে সাহায্য করে কলেজের অন্য বন্ধুরা। ছোট থেকে আঁকার প্রতি ঝোঁকছিল তাঁর। তারপর ছোটখাটো মূর্তি তৈরি করতেন। কিন্তু দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা এই প্রথম।
আরও পড়ুন:
এই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে প্রথমে খড়, তার উপরে কাগজের আস্তরণ দিয়ে। কাগজের উপরে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। এই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘আমাদের এই উদ্যোগকে সব রকম ভাবে সাহায্য করেছে ওখানকার শবর সমিতি। দ্বিতীয়ার দিন আমরা চণ্ডীপাঠ করে ওই সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে পুজোর সূচনা করি। এবং শবরদের গ্রামের বাচ্চাদের নতুন জামা দেওয়া হয়। দুর্গা প্রতিমাকে ঘিরে গ্রামে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।’’
দুঃস্থ পথ শিশুদের পুজোর সময় নতুন জামা কাপড় দেওয়ার এই ভাবনা ১৪ বছর আগে শুরু করেছিল মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগ। এ বছর ১৫তম বর্ষে ছাত্রছাত্রীরা নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করেছেন। তেমনি প্রাক্তনীরাও এসে এখানে অর্থ দিয়েছেন। সর্বোপরি বিভাগের শিক্ষকেরা এখানে অর্থ সাহায্য করেছেন। তবে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ছেড়ে বিগত বছরে যাওয়া হয়েছিল জলদাপাড়া, উত্তরবঙ্গের বন্ধ থাকা চা শ্রমিকদের কাছে। ১৫তম বছরে শবরদের গ্রামে গিয়ে সেখানকার ২৫০ বাচ্চাকে নতুন জামাকাপড় দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তাদের জন্য খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়। এই বাচ্চাদের মধ্যে থেকে কিছু বাচ্চাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সারা বছরের লেখাপড়ার খরচ বিভাগের তরফ থেকে দেওয়া হবে। তাদের মধ্যে থেকে পাঁচজনকে উচ্চশিক্ষার জন্য এককালীন স্কলারশিপ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।