মাছ চাষ করে খাবে পড়ুয়ারা! মিড-ডে মিলের জন্য প্রায় তেমনই নির্দেশ এল সমগ্র শিক্ষা মিশনের তরফ থেকে। এক বিজ্ঞপ্তিতে স্কুলগুলির উদ্দেশে জানানো হয়েছে টাটকা সব্জির পাশাপাশি এ বার পুকুরে মাছ চাষও করতে হবে। আর সেই মাছই পড়ে পড়ুয়াদের মধ্যাহ্ন ভোজনের পাতে।
তবে এই নির্দেশিকা পালন করা সম্ভব নয় বেশির ভাগ স্কুলের পক্ষেই। তাই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, রাজ্যের যে সমস্ত স্কুলের জমি বা সংলগ্ন এলাকায় পুকুর থাকবে সেখানে মাছ চাষ করতে হবে।
আরও পড়ুন:
কিন্তু হঠাৎ এমন ভাবনা এল কোথা থেকে? জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক মাস আগে রাজ্য শিক্ষা দফতরের তরফ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার কনকনগর সৃষ্টিধর ইনস্টিটিউশনে পরিদর্শনের যান প্রতিনিধিরা। সেখানেই দেখা যায় শিশুদের মিড-ডে মিলে দেওয়া হচ্ছে মাছ। খোঁজ নিয়ে পরিদর্শক দল জানতে পারেন, ওই স্কুল নিজের জমিতেই একটি পুকুর খনন করে ফেলেছে। সেখানে রীতিমতো মাছ চাষ করা হয়। পড়ুয়াদের পরিবেশনও করা হয় সেই মাছ। তার পরই আলোচনা হয় এ বিষয়ে। স্থির হয়, যে সমস্ত স্কুলে পুকুর রয়েছে বা পুকুর খনন করার মতো পরিস্থিতি রয়েছে, তারা এই মৎস্যচাষে যুক্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমগ্র শিক্ষা মিশনের এক কর্তা বলেন, “আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিলে পুষ্টিকর খাদ্য তুলে দেওয়া। শহরে না গ্রামাঞ্চলে বহু স্কুলেই জমি ও পুকুর রয়েছে। আমরা চাই পুকুরগুলিতে মাছ চাষ করে তা পড়ুয়াদের খাবারে তা পরিবেশন করা হোক।”
মিড-ডে মিল নিয়ে জেলায় জেলায় অভিযোগের শেষ নেই। খাবারের মান থেকে রান্নাঘরের পরিচ্ছন্নতা— সর্বত্রই রয়েছে সমস্যা। কিন্তু হিঙ্গলগঞ্জের ওই স্কুলটির পরিস্থিতি সত্যিই আদর্শ বলে মনে করছেন দফতরের কর্তারা। উত্তর ২৪ পরগনার ওই স্কুলে দু’বিঘা একটি পুকুরে চাষ করা হয় মাছ। পুকুরের লাগোয়া জামিতে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, নারকেল— নানা রকম ফলের গাছও লাগানো হয়েছে। সেই ফলের ভাগও পায় পড়ুয়ারা।
শহর বা শহরতলীর বহু স্কুলেই রয়েছে ‘কিচেন গার্ডেন’। সে সব স্কুলের পড়ুয়াদের সমস্যা কমানো চেষ্টা অনেক সময় এ ভাবেই করেন শিক্ষকেরা। কিন্তু সর্বত্র তা সম্ভব নয়। কলকাতার স্কুলগুলিতে অনেক সময় খেলার মাঠই পাওয়া যায় না। শ্যামবাজারের শতাব্দী প্রাচীন স্কুল পার্ক ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা করানোর জায়গা থাকে না। সেখানে পুকুর কেটে মাছ চাষ হবে কোথায়?”
তবে শিক্ষকমহল মনে করছেন, যেখানে সীমিত বরাদ্দে মিড-ডে মিলে ভাল খাবার দেওয়াই বড় সমস্যা, সেখানে মাছ চাষ করে ছাত্রছাত্রীদের খাওয়ানোর উদ্যোগ সাধুবাদ যোগ্য। কিন্তু, শুধু মাছ চাষ করলেই তো হল না। মাছ রাঁধার জন্য জ্বালানি বা অতিরিক্ত তেলের বরাদ্দ আসবে কোথা থেকে? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “এক দিকে বলা হচ্ছে মাছ খাওয়াতে, আবার কোনও জেলার ডিআই-রা বলছেন তেলের খরচ কমাতে। এ কেমন কথা? মাছ খাওয়াতে হলে তো তেলের খরচ বাড়বেই। তার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার।”