একটি বিষয়েও গৃহশিক্ষক ছিল না। শুধু মাত্র কঠোর পরিশ্রম এবং অদম্য ইচ্ছেশক্তির জোরে দেশের মধ্যে নজির গড়ল হরিয়ানার পঞ্চকুলার মেয়ে। সৃষ্টি শর্মা। সেন্টার বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)-র দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে।
পঞ্চকুলার সেক্টর ১৫-এর ভবন বিদ্যালয় থেকে দশমের পরীক্ষা দিয়েছিল। নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাত এক করে প্রস্তুতি নিয়েছিল সে। বরাবর সমাজমাধ্যম থেকেই দূরেই ছিল। অবসরে পছন্দ ছবি আঁকা এবং গান শোনা। পরীক্ষার আগে দিনের প্রায় ২০ ঘণ্টাই বরাদ্দ ছিল পড়াশোনার জন্য। সৃষ্টি বলে, “কোনওদিকে মন দিইনি। শুধু পড়েছি ওই ক’দিন। ওটাই আমার শখ, ধ্যানজ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছিল।” তবে এরপরও এতো ভাল ফলের প্রত্যাশা ছিল না তার। সৃষ্টির কথায়, “ফল ভাল হবে, আশা করেছিলাম। কিন্তু ১০০ শতাংশ নম্বর পাব, একদমই ভাবিনি। তাই ভীষণ খুশি হয়েছি।”

পরিবারের সঙ্গে সৃষ্টি শর্মা। নিজস্ব চিত্র।
বাবা সরকারি সংস্থায় কর্মরত, মা গৃহবধূ। দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে ছোট্ট সংসার। বাড়ির একমাত্র মেয়ে ভাল করে পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হোক, এটাই তাঁদের বরাবরের স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নই এ বার সফল করে দেখাল মেয়ে। তাই উচ্ছ্বসিত দু’জনেই। বাবা-মা মেয়েকে কৃতিত্ব দিলেও এই ফল তার অভিভাবক এবং শিক্ষকদের জন্যই সম্ভব হয়েছে বলে জানায় সৃষ্টি। সে বলে, “পরীক্ষার জন্য আমি খেটেছি ঠিকই। কিন্তু বাবা-মা বা স্কুল শিক্ষকেরা না থাকলেও কখনওই এই রেজ়াল্ট করতে পারতাম না। আমায় বাড়ির কোনও কাজ করতে দিত না বাবা। ভাল ফল করার জন্য চাপও দেয়নি। শুধু নিজের স্বপ্নপূরণের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গিয়েছে আর ভরসা রেখেছে আমার উপর।”
ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেরিয়ার গড়তে চায় সৃষ্টি। আইআইটি মুম্বই থেকে কম্পিউটার সায়েন্স পড়ার ইচ্ছে। তবে সেখানে স্বপ্নের উড়ান থামাতে চায় না। নিজের জ্ঞান এবং পড়াশোনাকে কোনও ছোট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করায় বিশ্বাসী নয় সে।
হবু পরীক্ষার্থীদের জন্য তার বার্তা, এনসিইআরটি-র পাঠ্যবই খুঁটিয়ে পড়ে, বাড়িতে ক্রমাগত অনুশীলন করে এবং সর্বোপরি পড়াশোনাকেই শুধুমাত্র গুরুত্ব দিলে সাফল্য আসতে বাধ্য।
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, এ বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল সিবিএসই-র দশমের পরীক্ষা, যা শেষ হয় ১৮ মার্চ। পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ৭,৮৩৭। মোট ২৬, ৬৭৫টি স্কুলের পড়ুয়া এ বার সিবিএসই-র দশমের পরীক্ষা দিয়েছিল। মঙ্গলবার পরীক্ষা শেষের ৫৬ দিনের মাথায় ফল ঘোষণা করেছে বোর্ড। এ বছর পাশের হার ৯৩.৬৬ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৯৩.৬০ শতাংশ । অর্থাৎ এ বছর পাশের হার বেড়েছে .০৬ শতাংশ ।