নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পরে পার্লামেন্টে বক্তৃতা করছেন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবিদি। ছবি: রয়টার্স।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন হায়দার আল-আবিদি। গঠন করলেন মন্ত্রিসভাও। শপথের পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা টেলিফোনে আবিদিকে অভিনন্দন জানান। আবিদি-র সরকার সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন বলেও ওবামা আশাপ্রকাশ করেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে ইরাকের নির্বাচনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মালিকি-র (শিয়া) দলই সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল। কিন্তু তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল না। কিন্তু কোনও দলই মালিকিকে সমর্থন করতে চাননি। এর মধ্যেই ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জঙ্গিরা ইরাকে অভিযান শুরু করে। ঝোড়ো অভিযানে ইরাকের এক-তৃতীয়াংশই আইএস-এর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। প্রশ্নের মুখে পড়ে মালিকির প্রধানমন্ত্রিত্ব।
মালিকির দশ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে ইরাকে সুন্নি ও অন্য সংখ্যালঘুদের নানা ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে এমনিতেই প্রচুর অভিযোগ ছিল। ফলে তাঁরা মালিকিকে সমর্থন করতে অস্বীকার করেন। আইএস-এর হামলার মুখে অখণ্ড ইরাককে টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া মালিকি-র ইরান-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে আমেরিকার প্রবল আপত্তি ছিল। ফলে আমেরিকা-সহ ইউরোপের নানা দেশই মালিকিকে ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে সবাইকে নিয়ে নতুন নেতার অধীনে সরকার গঠনের অনুরোধ করে। এমনকী, ইরাকে শিয়াদের প্রধান ধর্মগুরু আলি সিস্তানি-ও মালিকিকে সরে যেতে বলেছিলেন।
কিন্তু মালিকি নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। আমেরিকার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বেশ অবনতিও ঘটে। আইএস-কে রুখতেও মালিকি ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত মালিকির দলের মধ্যে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ইরানও মালিকির থেকে সমর্থন সরিয়ে নেয়। তীব্র চাপের মুখে সরে দাঁড়ান মালিকি। নেতৃত্ব যায় আবিদির হাতে। অবশেষে আবিদি-র নেতৃত্বে তৈরি হল সর্বদল সরকার। কুর্দরা প্রথম দিকে জাতীয় সরকারে অংশ নিতে না চাইলেও শেষ পর্যন্ত তাতে সামিল হয়েছে।
আবিদির হাতে ক্ষমতা যাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই আইএস-কে হঠাতে ইরাকে সীমিত বিমান হামলা শুরু করে আমেরিকা। ইরাকি সেনা, শিয়া মিলিশিয়ার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে নামে কুর্দ পেশমেরগা যোদ্ধারাও। সাফল্যও মিলতে শুরু করে। মসুলের পর হাদিথা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করেছে এই যৌথবাহিনী। আমেরলি শহর পুনর্দখল করে বন্দি তুর্কমেনদের উদ্ধারও করে এই বাহিনী। আইএস-কে দমন করতে নতুন সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। তা ছাড়া আইএস দমন করতে বড় জোট গড়ে তোলা হচ্ছে বলে আমেরিকা জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে সুন্নি ও কুর্দ সমর্থিত আবিদি সরকারের পিছনে অনেক দেশ এসে দাঁড়াবে। এর মধ্যেই আরব লিগ আইএস-কে ধ্বংস করতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চলতি সপ্তাহে সৌদি আরব ও জর্ডনের সফরে আসছেন মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি। আবিদি ইরাকের নানা জাতিগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন বলে কেরি আশাপ্রকাশ করেন। তবে মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ দু’টি এখনও ফাঁকা রয়েছে। আবিদি এক সপ্তাহের মধ্যে পার্লামেন্টকে এই দুই পদের জন্য প্রার্থী বেছে নিতে বলেছেন। না হলে তিনি নিজেই প্রার্থী মনোনয়ন করবেন।
ইরাকি মন্ত্রিসভা
প্রধানমন্ত্রী: হায়দার আল আবিদি। শিয়া। প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার
উপ-প্রধানমন্ত্রী: তিন জন।
• হোশিয়ার জেবারি। কুর্দ। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী।
• সালেহ আল-মুতলাক। সুন্নি। প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী।
• বাহা আরাজি। শিয়া। সাংসদ
বিদেশমন্ত্রী: ইব্রাহিম জাফারি। শিয়া। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী: রোওশ্চ শাওইস। কুর্দ। প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী।
তেলমন্ত্রী: আবদেল আব্দুল মাহদি। শিয়া। প্রাক্তন উপ-রাষ্ট্রপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy