Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মালদহ-কাণ্ডে প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা

অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার বদলে সারা রাত থানায় বসিয়ে রাখা হল মালদহ-কাণ্ডের অভিযোগকারিণীকেই। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁকে ইংরেজবাজার থানা থেকে পৌঁছে দেওয়া হয় তাঁর বাবার কাছে। গুরুতর জখম অবস্থায় যিনি এখনও মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। এ দিন সকালে অভিযুক্ত রিন্টু শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ আনার পর খোদ অভিযোগকারিণীকে থানায় রাতভর বসিয়ে রেখে হেনস্থার প্রতিবাদে এ দিন পথে নেমেছে জেলা কংগ্রেস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ১০:৫০
Share: Save:

অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার বদলে সারা রাত থানায় বসিয়ে রাখা হল মালদহ-কাণ্ডের অভিযোগকারিণীকেই। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁকে ইংরেজবাজার থানা থেকে পৌঁছে দেওয়া হয় তাঁর বাবার কাছে। গুরুতর জখম অবস্থায় যিনি এখনও মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি। এ দিন সকালে অভিযুক্ত রিন্টু শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ আনার পর খোদ অভিযোগকারিণীকে থানায় রাতভর বসিয়ে রেখে হেনস্থার প্রতিবাদে এ দিন পথে নেমেছে জেলা কংগ্রেস। জেলা সভাপতি মৌসম বেনজির নুর বলেন, “এমন অমানবিক জুলুমের প্রতিবাদে আমরা পুলিশ সুপারের পদত্যাগ দাবি করছি।” একই সুরে গলা চড়িয়েছে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতিও। এ দিন বিকেলে জেলা জুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা। জেলা সম্পাদক রত্না ভট্টাচার্য বলেন, “অবর্ণনীয় এবং অমানবিক কাজ করেছে পুলিশ। মন্ত্রীর বক্তব্যকে সত্যি প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি।”

মঙ্গলবার দুপুর দুটো নাগাদ মালদহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ইংরেজবাজার থানায় কার্যত তুলে নিয়ে আসা হয় ওই মহিলাকে। তাঁকে যখন থানা থেকে ফের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয় তত ক্ষণে কেটে গিয়েছে প্রায় ২০ ঘণ্টা।

কিন্তু কেন?

এর কোনও উত্তর মেলেনি পুলিশের তরফে। পুলিশের বিরুদ্ধে মানসিক চাপ তৈরি করার অভিযোগ এনে ওই মহিলা বলেন, “আমাকে সারা রাত কিছু খেতে না দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এমনকী, বাবার কাছেও যেতে দেয়নি।” অভিযোগ, সারা রাত ধরে বয়ান বদলের জন্য তাঁর উপর চাপ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করেননি বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারিণী।

অন্য দিকে, এ দিন সকালে পুকুরিয়া থানার পুলিশ ‘গোপন ডেরা’ থেকে গ্রেফতার করে অভিযুক্ত রিন্টুকে। সকাল ৯টা নাগাদ তাকে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশি খাতায় সময় পাল্টে বেলা ১২টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এ দিন তাকে আদালতে পেশ করেনি পুলিশ। এরই মধ্যে পুকুরিয়া থানায় ডেকে পাঠানো হয় অভিযুক্তের স্ত্রী বিবি মনজুরাকে। একটি সাদা কাগজে তাঁর টিপসই নেওয়া হয়। পরে তিনি বলেন, “আমি লেখাপড়া জানি না। পুলিশ বলল কাগজে একটা টিপসই দিতে। তাই দিয়েছি।” কিন্তু তিনি কেন থানায় এলেন? মনজুরা জানান, পুলিশই তাঁকে ডেকে এনেছে। পুলিশ যদিও এ কথা উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, অভিযোগকারিণী মহিলার বিরুদ্ধে রিন্টুর স্ত্রী ঘরভাঙার অভিযোগ জানাতেই থানায় এসেছিলেন। ঘটনাচক্রে ওই থানাতেই আপাতত আটকে রাখা হয়েছে তাঁর ধৃত স্বামীকে। এ দিন তাঁর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথাও বলেন মনজুরা।

তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে যিনি ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করেছেন, তাঁকে তিনি চেনেন বলে এ দিন দাবি করেন রিন্টুর স্ত্রী। কী ভাবে? তিনি বলেন, “আমাদের বাড়িতে দু’ এক বার রাজমিস্ত্রির কাজ করতে এসেছিল।” কেমন ওই মহিলা? উত্তরে মনজুরা বলেন, “ভাল। আমি তো কোনও খারাপ কিছু দেখিনি।” আপনার স্বামীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল? এ বার কার্যত বিরক্ত হলেন তিনি। বললেন, “কোনও ভাবেই না।” অথচ জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনও দাবি করেছেন, অভিযোগকারিণী মহিলার সঙ্গে অভিযুক্তের অবৈধ সম্পর্ক ছিল।

পুলিশ সুপারের এই দাবি যদিও মিলে যাচ্ছে রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি মঙ্গবারই জানিয়েছিলেন, রিন্টুর সঙ্গে ওই মহিলার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। তাঁর মতে, স্বেচ্ছায় সহবাসকে ধর্ষণ বলা যায় না। পুলিশ সুপারের মুখেও একই সুর শুনে কংগ্রেসের কটাক্ষ মন্ত্রীর মন্তব্য সত্য প্রমাণ করার দায় তো এই রাজ্যে পুলিশেরই।

প্রশ্ন উঠেছে, মনজুরার বয়ানে কোনও অভিযোগ আনতেই কি তাঁকে থানায় ডাকা হয়েছিল? তাই কি সাদা কাগজে তাঁর টিপ সই নেওয়া হল? এর আগে ভাঙড়ের জোড়া খুনের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাঁদের সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয়। পরে সেই কাগজেই অভিযোগের বয়ান লেখেন তৃণমূলের এক নেতা। অভিযোগ ওঠে, তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের নির্দেশেই ওই কাজ করে পুলিশ। পরে যদিও আরাবুলকে বহিষ্কার করে দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE