Advertisement
১৭ মে ২০২৪

‘ডাকাতরানি’ মমতা, ফের তোপ আসিফের

তোপের পর তোপ। তৃণমূলকে এ বার ‘ডাকাতরানির দল’ বললেন দলের প্রাক্তন নেতা আসিফ খান। কিন্তু, ‘ডাকাতরানি’ কে? এ বার আর কোনও রাখঢাক না রেখে সরাসরি বলে দিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’-এর নাম। সোমবার এ ভাবেই ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমা ফাটালেন জমি সংক্রান্ত প্রতারণা মামলায় ধৃত প্রাক্তন এই দলীয় নেতা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ১৪:০০
Share: Save:

তোপের পর তোপ। তৃণমূলকে এ বার ‘ডাকাতরানির দল’ বললেন দলের প্রাক্তন নেতা আসিফ খান।

কিন্তু, ‘ডাকাতরানি’ কে?

এ বার আর কোনও রাখঢাক না রেখে সরাসরি বলে দিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’-এর নাম। সোমবার এ ভাবেই ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমা ফাটালেন জমি সংক্রান্ত প্রতারণা মামলায় ধৃত প্রাক্তন এই দলীয় নেতা।

গত বৃহস্পতিবারই বারাসত আদালতে ঢোকার সময় তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘রাম-সীতা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর হনুমান হাজতে।’’ ‘রাম’ বা ‘সীতা’ কে ওই দিন সে বিষয়ে কিছু ভেঙে বলেননি তিনি। শুধু জানিয়েছিলেন, দলের অনুগত ‘হনুমান’ হয়েও তাঁকে হাজতবাস করতে হচ্ছে। এ দিন যদিও ‘ডাকাতরানি’র নাম তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন।

আসিফের এই বিস্ফোরক অভিযোগ প্রসঙ্গে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা বলেছেন, আসিফ তৃণমূলের কেউ নয়। ও টাকা রাখতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিল। যে আসিফ উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ছিলেন, সেই আসিফই দলের কেউ নয় বলে জানিয়ে দেন মমতা।

জমি সংক্রান্ত প্রতারণার অভিযোগে গত ৬ নভেম্বর আসিফ খানকে তিলজলা থেকে গ্রেফতার করে বিধাননগর কমিশনারেট। যে অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়, রাজারাম শরাফ নামে এক ব্যক্তির হয়ে সেটি করেছিলেন তাঁরই সংস্থার কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ সিংহ। যদিও কমিশনারেটের দাবি, ওয়াইদুর হাসান সিদ্দিকী নামে উত্তরপ্রদেশের এক তৃণমূল নেতাও প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন আসিফের বিরুদ্ধে। এ দিন তদন্তের প্রয়োজনেই তাই আসিফকে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজও করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এর আগে বারাসত আদালতে এই মামলার সরকারি কৌঁসুলি শান্তময় বসু জানিয়েছিলেন, ওড়িশা এবং উত্তরপ্রদেশের দুই ব্যক্তির কাছে আসিফের ৮ কোটি টাকা রাখা আছে। সেই টাকা উদ্ধারের জন্য আসিফকে গত বৃহস্পতিবার পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।

এ দিন পুলিশি প্রহরায় বিধাননগর কমিশনারেট থেকে আসিফ খানকে উত্তরপ্রদেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করা হয়, ওখানে কার টাকা রাখা আছে? জবাব আসে, “মুকুল রায়ের।” এর পরেই তিনি বলেন, “মুকুল রায়ের হাজার হাজার কোটি টাকা রয়েছে।” তিনি কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন জিজ্ঞাসা করায় আসিফ বলেন, “সব মুকুল রায়ের সাজানো গল্প।” কিন্তু কেন? জবাব, “দল ছাড়লে যা হয়।” তা হলে সারদার টাকা কোথায় গেল? আসিফের উত্তর, “সব ডাকাতরানির দল নিয়েছে।” তিনি কে? চটজলদি জবাব আসে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”

সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই নেওয়ার পর বিরোধীদের একাধিক সভা তো বটেই, প্রতারিতদের সভাতেও একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘সারদা-রানি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। এ দিন সেই শব্দকেই একটু ঘুরিয়ে আসিফ ব্যবহার করেছেন বলে বিরোধীদের দাবি। দীর্ঘ দিন ধরেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব দলের প্রাক্তন এই নেতা। সারদা-কাণ্ডের তদন্তে নেমে সিবিআই যবে থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে, তবে থেকেই তাঁর নিশানায় তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। কখনও দাবি করেছেন, সারদার টাকা নেননি, এমন নেতা বা নেত্রী খুঁজে পাওয়া যাবে না। কখনও বা আক্রমণ শানিয়েছেন মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে। মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশুকেও ছাড় দেননি তিনি। তাঁর নামও বিভিন্ন সময়ে শোনা গিয়েছে আসিফের মুখে। অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে সরাসরি নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মিথ্যেবাদী’ও বলেছিলেন তিনি। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁর এ দিনের মন্তব্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE