কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নেহার বাবা।—নিজস্ব চিত্র।
ঠিক যেন সালকিয়া-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি!
সেই শিশু অপহরণ। পুলিশি তদন্তে গাফিলতি। এবং শেষে অপহৃত শিশুর দেহ উদ্ধার। এ বারের ঘটনা বীরভূমের মুরারই থানার গোয়ালমাল গ্রামে।
গত ১৫ এপ্রিল গ্রামের চৈত্র সংক্রান্তির মেলা দেখার নাম করে অপহরণ করা হয়েছিল নেহা খাতুন (৭) নামে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে। ওই রাতেই নেহার বাবা, পেশায় বিড়ি ব্যবসায়ী মুসা খানের কাছে ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে। ১৭ তারিখ মুরারই থানায় অভিযোগ করেন ওই ব্যক্তি। অভিযোগপত্রে মুক্তিপণ কোন ফোন নম্বর থেকে এসেছিল, তা-ও উল্লেখ করেন। কিন্তু পুলিশ তদন্তে গাফিলতি দেখাতে থাকে। মুসা খান তখন এসডিপিও (রামপুরহাট)-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
২২ এপ্রিল গ্রামেরই যুবক বাচ্চু শেখকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করে পুলিশ। কিন্তু, চার দিন আটক রাখার পরেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বাচ্চুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এর পরেও পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধারের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র তৎপরতা দেখায়নি। পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে ৩০ এপ্রিল মুরারইয়ের ওসি পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের পদাবনতি ঘটিয়ে তাঁকে লাভপুর থানার থার্ড অফিসার করে পাঠিয়ে দেন জেলা পুলিশের কর্তারা। নতুন ওসি পার্থসারথি মণ্ডল দায়িত্ব নেওয়ার পরে নতুন করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। বাচ্চু এবং আর এক সন্দেহভাজন বকুল শেখকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দু’জনকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে লাগাতার জেরা করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে বাচ্চু কবুল করে সে ও কয়েক জন মিলে নেহাকে অপহরণ করেছিল। সেই রাতেই নেহাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে। দেহ লোপাটের জন্য বস্তাবন্দি করে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল তারা। পরের দিন পুকুর থেকে ব়স্তা তুলে গ্রামের দেড় কিলোমিটার দূরে একটি খালে ফেলে দেয় তারা। বস্তা প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে পাথরচারা দিয়ে ফেলে রেখেছিল তারা। বুধবার দুপুরে পুলিশ ওই দেহ উদ্ধার করে। নেহার দেহ এত দিনে পচেগলে গিয়েছিল। পরনের জামা দেখে শনাক্ত করেন বাবা।
চলছে দেহ উদ্ধারের কাজ।
পুলিশের দাবি, গোটা অপহরণ-কাণ্ডের মাথা মালদহের সুজাপুরের বাসিন্দা, বছর চল্লিশের রুকু শেখ। তাকে পুলিশ মুম্বই থেকে আটক করে এনেছে। রুপুর বিয়ে হয়েছে গোয়ালমাল গ্রামে। আরও কয়েক জনকে পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এই ঘটনা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে হাওড়ার সালকিয়ার ঘটনাকে। গত বুধবার ছুটির পরে স্কুলের সামনে থেকে অপহৃত হয় সালকিয়া বিক্রম বিদ্যাপীঠের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র বিশাল শর্মা। শুক্রবার তার মৃতদেহ পাওয়া যায় পাশের পাড়ার একটি নর্দমার ধার থেকে। এই ঘটনায় বিশালেরই মামাতো ভাই রণজয় ঠাকুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ক্ষেত্রেও পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে প্রথম থেকেই। অপহৃত আট বছরের ছেলের মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসার পরে বাড়ির লোকজন এক মুহূর্তও দেরি করেননি। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু দু’দিন আগে অপহরণের খবর পেয়েও পুলিশ কছু করতে পারেনি। বরং ধৃত অপহরণকারীর কথায় নির্ভর করে ‘বিপথে’ যায় পুলিশি তদন্ত। ওই ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রাণাডেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy