Advertisement
E-Paper

ভারত-রুশ শিক্ষা-মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গের সাত প্রতিষ্ঠান

আর পাঁচ বছর! ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন পণ করেছে, তার মধ্যে রাশিয়ার অন্তত একশোটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের প্রথম একশোর মধ্যে তুলে আনবে! ও দিকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় লাগাতার আক্ষেপ করে চলেছেন, বিশ্বের প্রথম দুশোটির মধ্যে শিক্ষাগত উৎকর্ষে ভারতের একটিও বিশ্ববিদ্যালয় নেই! গত আড়াই বছরে অন্তত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে এই একই বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি। কিন্তু এই দুই ছবির মাঝে কোনও সেতুবন্ধ হতে পারে কি?

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ২১:০৪
প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ডক্টরেট সম্মানে সম্মানিত করার সেই মুহূর্ত।

প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ডক্টরেট সম্মানে সম্মানিত করার সেই মুহূর্ত।

আর পাঁচ বছর! ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশাসন পণ করেছে, তার মধ্যে রাশিয়ার অন্তত একশোটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের প্রথম একশোর মধ্যে তুলে আনবে! ও দিকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় লাগাতার আক্ষেপ করে চলেছেন, বিশ্বের প্রথম দুশোটির মধ্যে শিক্ষাগত উৎকর্ষে ভারতের একটিও বিশ্ববিদ্যালয় নেই! গত আড়াই বছরে অন্তত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে এই একই বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি।

কিন্তু এই দুই ছবির মাঝে কোনও সেতুবন্ধ হতে পারে কি?

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পাঁচ দিনের রাশিয়া সফরকালে সেই সেতুবন্ধ রচনারই চেষ্টা করল মস্কো-নয়াদিল্লি। রাশিয়ার প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে আটটি চুক্তি সই করল বম্বে ও মাদ্রাজ আইআইটি-সহ ভারতের বেশ কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-রুশ সহযোগিতার মানচিত্রে রইল কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সাতটি প্রতিষ্ঠানও। কলকাতার ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট এবং মধ্য কলকাতা-স্থিত সেন্ট্রাল গ্লাস অ্যান্ড সেরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং খড়্গপুর আইআইটি, ভেরিএবেল এনার্জি সাইক্লোট্রন, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স।

ভারতের বিদেশ সচিব জয়শঙ্করের কথায়, ‘‘মূল উদ্দেশ্য হল রাশিয়ার প্রযুক্তিগত শিক্ষার সুযোগ ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেই সঙ্গে দু’দেশের সন্মিলিত বিজ্ঞান গবেষণার বিকাশ ঘটানো। এই সহযোগিতায় সামিল হবে রাশিয়ার টমস্ক বিশ্ববিদ্যালয়, স্কলকোভা ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, লমনসভ মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়, উরাল ফেডারেল ইউনিভার্সিটি, হায়ার স্কুল অফ ইকনমিক্স অফ মস্কো সমেত কমবেশি ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আবার ২০১৫ সালে ভারত-রাশিয়া ৩৩টি নতুন গবেষণার বিষয়ও নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে সারাটভ স্টেট টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যৌথ গবেষণা করবে কলকাতার আইএসআই। মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথ গবেষণা করবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কলকাতার আরও পাঁচটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যৌথ গবেষণার তালিকায় রয়েছে।’’

ক্রেমলিনের থেকে প্রথম ভারতীয় হিসেবে ডক্টরেট সম্মান পাওয়ার পর।

ক্রেমলিনের তরফে বলা হচ্ছে, রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে ৫০ বিলিয়ন রুবেল বরাদ্দ করেছে পুতিন প্রশাসন। সাউথ ব্লক মনে করছে, পুতিন প্রশাসনের এই লক্ষ্যই নয়াদিল্লির সামনে সুযোগ এনে দিয়েছে। রাশিয়ার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সহযোগিতায় ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যৌথ গবেষণাগার গড়ে তুলতে পারবে, যৌথ শিক্ষা কমর্সূচিও নিতে পারবে তারা। তা ছাড়া মেধাগত উৎকর্ষ থাকলেও ভারতের প্রচুর ছাত্রছাত্রী রয়েছেন, যাঁরা বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পান না। অর্থসঙ্কট বড় হয়ে দাঁড়ায়। নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপে সেই প্রতিবন্ধকতা কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে বিদেশ মন্ত্রক জানাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ‘উপ মহাদেশে শান্তি কায়েম রাখা ও ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কাণ্ডারি হিসাবে’ রাশিয়ার ডিপ্লোম্যাটিক আকাদেমি শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রণববাবুকে ডক্টরেট সম্মানে সম্মানিত করেন। প্রণববাবুই প্রথম কোনও ভারতীয় যাঁকে এই মর্যাদা দিল ক্রেমলিন। ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এই নিয়ে তৃতীয় কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করলেন প্রণব। (যদিও এ ধরনের বহু অনুরোধ তিনি সাম্প্রতিক কালে ফিরিয়ে দিয়েছেন।) পরে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এক আলোচনাচক্রে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রশাসনিক প্রধান নন। তাই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। কিন্তু রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মানোন্নয়নের চেষ্টা করছি।’’ বিদেশ সচিব জয়শঙ্কর বলেন, শুধু কথায় নয়, তা কাজেও করে দেখাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। ইদানিং কালে তাঁর সব ক’টি বিদেশ সফরে দেশের প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে সফর করেছেন। তাঁর উদ্যোগে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পথে পা বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লি। ভবিষ্যৎ ভারত ও নতুন প্রজন্মের জন্য যে পদক্ষেপ খুবই ইতিবাচক।

ছবি: সমর মণ্ডল, সৌরভ কর্মকার।

shankadeep das indo russia educational ties eight treaties west bengal institutions kolkata isi calcutta university russia bengal education ties
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy