জলবন্দি শ্রীনগর। ছবি:এএফপি।
বৃষ্টি কমতে থাকায় আস্তে আস্তে বন্যার জল কমতে শুরু করেছে কাশ্মীর উপত্যকায়। সেনা সূত্রে খবর, শুধুমাত্র শ্রীনগরেই ঝিলমের জলস্তর কমেছে পাঁচ ফুট। তবে শহরের বেশির ভাগ জায়গাই এখনও জলের তলায়। শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম বন্যায় এখনও পর্যন্ত কাশ্মীরে মৃত্যু হয়েছে অন্তত দু’শো জনের। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে এখনও সময় লাগবে বলেই আশঙ্কা প্রশাসনের।
উপত্যকা জুড়ে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধারে নাগাড়ে কাজ করে চলেছে সেনা ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আরও দু’হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে সেনা। শুধুমাত্র শ্রীনগর থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে ৮০৭ জনকে। এখনও পর্যন্ত ৯৬ হাজার দুর্গতকে উদ্ধার করা হলেও বন্যায় যে এখনও লক্ষাধিক মানুষ আটকে রয়েছেন তা-ও জানিয়েছে সেনা। উদ্ধার কাজ চালাতে এখনও যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। আটকে থাকা মানুষদের জল, খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করছে সেনা। সেনা সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ৮০৭ টন ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ দিকে জল কমতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে জলবাহিত রোগের প্রকোপ।
পরিস্থিতির সামান্য উন্নতির কথা স্বীকার করেছে সেনাও। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুড়া জানিয়েছেন, “দক্ষিণ কাশ্মীরের অবন্তিপুরা পর্যন্ত জলস্তর কমেছে। ফলে শ্রীনগরের কিছু জায়গায় অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ওই এলাকায় সামান্য উন্নতি হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থারও।” উপত্যকায় ভেঙে পড়া টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। কিছু কিছু এলাকায় জল সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা গিয়েছে বলেও জানিয়েছে সেনা।
দক্ষিণ কাশ্মীরের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও উত্তর কাশ্মীরের অবস্থা এখনও বেশ খারাপ। জটিলতা আরও বাড়িয়েছেন আটকে থাকা এলাকার বাসিন্দারা। সেখানকার বেশ কিছু এলাকা থেকে সকালে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা হলেও বিকাল হতেই তারা আবার তাদের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা জানিয়েছেন, “ওই সব এলাকার মানুষেরা নিজেদের বাড়ি ছাড়তে চাইছেন না। খাবার ও পানীয়ের জন্য সকালে বেরোলেও নিজেদের বাড়ি ও জিনিসপত্রের জন্য ফের তারা ফিরে আসছেন।” এরই মধ্যে উত্তর কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৭১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ দিন রাজ্যের বন্যা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান রাষ্ট্রমন্ত্রী জিতেন্দর সিংহ। সেনাবাহিনীর ত্রাণ শিবিরগুলিও ঘুরে দেখেন তিনি। বন্যায় শ্রীনগর থেকে ৫০০ ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র লেহতে গিয়ে আশ্রয় নেন। তাঁদের অবিলম্বে উদ্ধার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লি থেকে জরুরি ভিত্তিতে নিয়ে আসা হয়েছে বেশ কিছু কাশ্মীরি ডাক্তারকে। স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁদের মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে বলেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
কেন্দ্রের পাশাপাশি কাশ্মীরে বন্যা মোকাবিলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন রাজ্য। এ দিনই পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারকে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ছত্তীসগঢ়। উদ্ধারকাজ চালাতে বিমান ও হেলিকপ্টারগুলির তেলের কোনও সমস্যা যাতে না হয়, সেজন্য শ্রীনগরে তেলের ডিপোগুলি ভর্তি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ। ৫০ লাখ টাকার ওষুধ পাঠিয়েছে হরিয়ানা সরকার। বন্যা বিধ্বস্ত রাজ্যকে সাহায্য করার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছেন কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা।
বন্যা বিধ্বস্ত কাশ্মীরে দশম দিনে পড়ল সেনাবাহিনীর উদ্ধারকাজ। ত্রাণ ও উদ্ধারে কাজ করছেন ৩৫ হাজার সেনা জওয়ান। বায়ুসেনার ৮৪টি কপ্টার এবং ৩৭০টি মোটরবোটকেও কাজে লাগানো হয়েছে। রাজ্য জুড়ে ১৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy