জয়ের পর ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানেয়াহু। ছবি: রয়টার্স।
জনমত সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণিত করে আবার ইজরায়েলে ক্ষমতায় রয়ে গেলেন বেঞ্জামিন নেতানেয়াহু। এই নিয়ে চার বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন তিনি। যদিও তাঁর দক্ষিণপন্থী দল লিকুদ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। অন্য দলকে সঙ্গে নিয়েই জোট সরকার গড়তে হবে নেতানেয়াহুকে। তবে ইজরায়েলের পার্লামেন্ট কেনাসেটে-র নির্বাচনের এই ফল আমেরিকা-ইজরায়েল সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
এই নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৭০ শতাংশ। ফলাফলে দেখা গেল কেনাসেটে-র ১২০টি আসনের মধ্যে লিকুদের দখলে এসেছে ৩০টি আসন। লেবার পার্টি পেয়েছে ২৪টি আসন। তৃতীয় স্থানে আছে আরব দলগুলির জোট। তাদের ঝুলিতে এসেছে ১৪টি আসন।
ইজরায়েলের ৬৭ বছরের ইতিহাসে কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এ বারও তাই জোট গড়তে হবে নেতানেয়াহু-কে। ইজরায়েলে দক্ষিণপন্থী দলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নেতানেয়াহু-র সুবিধা হবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। এ ক্ষেত্রে লিকুদ দলের প্রাক্তন সদস্য এবং নতুন মধ্যপন্থী দল কুলানুর নেতা মোসে খালোন বড় ভূমিকা নেবেন। তাদের দখলে আছে ১০টি আসন। তবে তারা কোন পক্ষকে সমর্থন করবে তা এখনও ঠিক করতে পারেনি। দু’-তিন সপ্তাহের মধ্যে জোট তৈরি হয়ে যাবে বলে নেতানেয়াহু আশা প্রকাশ করেছেন। ফল সামনে আসার পরে বিরোধী নেতা হারজগ ফোনে নেতানেয়াহুকে শুভেচ্ছা জানান।
এই নির্বাচনে বেশ পিছিয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নেতানেয়াহু। তাঁর প্রায় ন’বছরের শাসনে আম-ইজরায়েলির জীবনযাত্রার খরচ বেশ বেড়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি নেতানেয়াহু-র প্যালেস্তাইন ও ইরান নীতি নিয়েও বীতশ্রদ্ধ ছিল ইজরায়েলি নাগরিকদের বড় অংশ। এরই প্রতিফলন পাওয়া গিয়েছিল নির্বাচনের আগে চালানো জনমত সমীক্ষায়। নেতানেয়াহু-র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন বাম-ঘেঁষা জিনয়িস্ট ইউনিয়ন পার্টি-র (লেবার) নেতা ইতঝ্যাক হারজগ। দেখা যায়, জনমত সমীক্ষায় তাঁর দলই বেশ খানিকটা এগিয়ে আছে। কিন্তু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ১৫ শতাংশ ভোটার তখনও সিদ্ধান্ত নেননি।
জনমত সমীক্ষার ফল সামনে আসার পরে নির্বাচনী প্রচারে আরও জোর দেন নেতানেয়াহু। তিনি বেশ কিছু ‘প্রবল’ দক্ষিণপন্থী নীতির কথা ঘোষণা করেন। যেমন, বির্তকিত এলাকায় আবাসন তৈরি, প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে বাস্তবায়িত হতে না দেওয়া, বা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি যে কোনও মূল্য আটকানো। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইজরায়েলের সাধারণ নাগরিকদের মধ্য এক ধরনের ভীতির সঞ্চার করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এই কাজে তিনি খানিকটা হলেও সফল হয়েছেন বলে মেনে নিয়েছেন তাঁর বিরোধীরাও।
কিন্তু নির্বাচনের এই ফল হোয়াট হাউস-এর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। নেতানেয়াহু তাঁর ‘প্রবল’ দক্ষিণপন্থী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি বাস্তবায়িত করলে তা ওই অঞ্চলের মার্কিন নীতির সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে আমেরিকার পারমাণবিক চুক্তির ক্ষেত্রে বড়সড় সমস্যা তৈরি হবে বলে অনেকের আশঙ্কা। এর মধ্যেই মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষ কংগ্রেসে এই আলোচনার প্রবল বিরোধিতা করে ভাষণ গিয়ে এসেছেন নেতানেয়াহু। এর পরেই আমেরিকার রিপাবলিকান দলের বেশ কয়েক জন সেনেটর এই আলোচনার বিরোধিতা করে ইরানকে খোলা চিঠি লেখেন। জবাব দেয় ইরানও। ওবামা প্রশাসন এর পরেও আলোচনা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর থাকলেও নেতানেয়াহুর জয় মার্কিন প্রশাসনের ‘শক্তিশালী’ ইহুদি লবিকে আরও সক্রিয় করে তুলবে। ফলে ওবামার সামনে বেশ বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ তৈরি হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy