পুলিশকে মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে। বুধবার সকালে বহরমপুরের পঞ্চাননতলা রেলগেটের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে এই ঘটনাটি ঘটে। কাঠ-বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মারধর করার ফলে গুরুতর জখম হয়েছেন তিন জন পুলিশ কর্মী। ওই পুলিশ কর্মীদের চিকিৎসার জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “আমি এখন জেলার বাইরে রয়েছি। তবে ওই ঘটনার কথা আমি শুনেছি। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বলেছি। তবে পুলিশ কর্মী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যদিও এই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে যানজট মুক্ত করতে গিয়ে চাঁদা আদায়কারীদের হাতে প্রহৃত হন পুলিশ কর্মীরা। তাঁদের মারধর করা হয়। পুলিশের একটি জিপেও ভাঙচুর চালায় তারা। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে পুলিশকে মারধর ও জিপ ভাঙচুরের ঘটনায় চাঁদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে পণ্যবাহী লরি দাঁড় করিয়ে চাঁদা তুলছিল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ট্রাক ড্রাইভার অ্যান্ড হেল্পার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্যরা। ফলে ওই রাস্তায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ওই যানজট মুক্ত করতে বহরমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত টাউন সাব-ইন্সপেক্টর রবিউল ইসলাম এক জন কনস্টেবল ও এক জন সিভিক পুলিশ কর্মীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। কিন্তু যানজটের কারণে গাড়ি নিয়ে রেলগেট পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি তাঁরা। একটু দূরে গাড়ি রেখে ওই তিন জন পুলিশ কর্মীর মধ্যে দু’জন পুলিশ কর্মী এক জন চাঁদা আদায়কারীকে ধরতেই সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তার পিছনে দু’জন পুলিশ কর্মী ছুটে যেতেই সে ইউনিয়নের কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। সেখানেই ওই পুলিশ কর্মীদের আটকে রেখে ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। টাউন-সাব ইন্সপেক্টর রবিউল ইসলাম বলেন, “ওই দু’জন পুলিশ কর্মীকে আটকে রাখার কথা শুনে আমি তাঁদের ছাড়াতে গেলে ইটবৃষ্টি শুরু করে তারা। এমনকী বাঁশ-লাঠি-কাঠ দিয়ে মারধর করা হয়। কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছি।”
তৃণমূলের ওই সদসদের মারে গুরুতর ভাবে জখম হন পুলিশ জিপের চালক মওলা বক্স মোল্লা, বহরমপুর থানার কনস্টেবল মোজাম্মৎ হোসেন এবং সিভিক পুলিশ কর্মী রবীন পাল। এই ঘটনার পরে শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা পথ অবরোধ করে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। পরে কমব্যাট ফোর্স ও র্যাফ এসে ওই অবরোধ তুলে দেয়।
মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ট্রাক ড্রাইভার অ্যান্ড হেল্পার ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক তাপস বিশ্বাস বলেন, “কোনও পুলিশ কর্মীকে মারধর বা পুলিশের গাড়ি আমরা ভাঙচুর করিনি। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে জনতা ও বিভিন্ন গাড়ির চালক-খালাসি গাড়ি ভাঙচুর করতে পারে। কিন্তু ওই ঘটনায় আমরা জড়িত নই। আমাদের সংগঠনকে দুর্বল করতে কংগ্রেসের হয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কাজ করছে বহরমপুর থানার কয়েক জন নিচু তলার পুলিশ কর্মী।”
আইএনটিইউসি অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সহ-সভাপতি লিয়াকত আলি বলেন, “শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা চাঁদা তোলার নামে জুলুমবাজি করছিল। পুলিশ এসে ওই জুলুমবাজি বন্ধ করতেই স্থানীয় ব্যবসায়ী, পথচারী সকলের সামনেই তৃণমূলের ওই সংগঠনের লোকজন পুলিশকে মারধর করে। লাঠি-বাঁশ-কাঠ নিয়ে যে ভাবে পুলিশের দিকে তেড়ে গিয়েছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। পুলিশ বাধ্য হয় পঞ্চাননতলা দিয়ে পালিয়ে যেতে। পুলিশের কাছেও এ দিনের ঘটনা অত্যন্ত লজ্জার।”
তৃণমূলের প্রাক্তন জেলা কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, “পুলিশকে মারধর করার বিষয়টি কিছুতেই সমর্থনযোগ্য নয়। যাদের নেতৃত্বে ওই ঘটনা ঘটেছে তাদের অবিলম্বে ছাঁটাই করা উচিত।”
তবে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি তৃণমূলের বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি সুবোধ দাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy