Advertisement
০৩ মে ২০২৪

দুষ্কৃতীরা অধরাই, ক্ষোভের পারদ চড়ছে রানাঘাটে

সময়সীমা বহু আগেই শেষ! তবু ধরা গেল না রানাঘাট-কাণ্ডের অভিযুক্তদের। ৪৮ ঘণ্টা তো দূর অস্ত্, ৬০ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ-প্রশাসনের হাত দুষ্কৃতীদের কাছ অবধি পৌঁছল না। ফলে সোমবারও উত্তাল হয়ে রইল রানাঘাট। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাল জনতা।

রাজ্যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় পড়ুয়ারা। মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে রানাঘাট স্কুলের সামনে মিছিল। সোমবার বিতান ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

রাজ্যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কায় পড়ুয়ারা। মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে রানাঘাট স্কুলের সামনে মিছিল। সোমবার বিতান ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ১৪:৩১
Share: Save:

সময়সীমা বহু আগেই শেষ! তবু ধরা গেল না রানাঘাট-কাণ্ডের অভিযুক্তদের। ৪৮ ঘণ্টা তো দূর অস্ত্, ৬০ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ-প্রশাসনের হাত দুষ্কৃতীদের কাছ অবধি পৌঁছল না। ফলে সোমবারও উত্তাল হয়ে রইল রানাঘাট। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাল জনতা।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তেরা ধরা পড়বে বলে শনিবার আশ্বাস দিয়েছিল পুলিশ। সেই আশ্বাস পেয়ে ওই দিন জনতা রেল ও সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। সিসিটিভি ফুটেজে দুষ্কৃতীদের কয়েক জনের ছবি মেলার পরও তাদের কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় এলাকার মানুষ রীতিমতো ক্ষুব্ধ।

ছোট ঘটনার তকমা এঁটে রাজ্যের বহু ঘটনাকে উড়িয়ে দিলেও রানাঘাট-কাণ্ডে প্রথম থেকেই অবশ্য উল্টো পথে হেঁটেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন সেই তত্পরতার রেশ টেনেই রানাঘাটে গিয়ে নির্যাতিতা সন্ন্যাসিনীর পাশে দাঁড়ান তিনি। যদিও এই ঘটনার পর বিরোধীরা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ফের সরব হয়েছেন। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রী দাবি, “কয়েক জনকে ‘অ্যারেস্ট’ করা হয়েছে। মূল অভিযুক্তরাও শীঘ্রই গ্রেফতার হবে।” সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, “তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” যদিও ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েক জনকে আটক করা হলেও পুলিশের তরফে তাদের গ্রেফতারির কোনও উল্লেখ করা হয়নি।

এরই মধ্যে রানাঘাট-কাণ্ড নিয়ে রাজ্যের কাছে সবিস্তার রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।

নদিয়ার জেলাশাসক পি বি সালিম এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলার পরে তাঁরা সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নির্যাতিতা ‘মাদার সুপিরিওর’-এর সঙ্গে দেখা করেন। নির্যাতিতার বিষয়ে তাঁরা কথাবার্তা বলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।

জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার স্কুল থেকে ঘুরে যাওয়ার পরই সেখানে পৌঁছন রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি-সহ পদস্থ কর্তারা। সঙ্গে ছিলেন সিআইডির এডিজি রাজীব কুমারও। তাঁরা বেলা সওয়া ১২ নাগাদ স্কুলে পৌঁছন। মিনিট কুড়ি আলাপ-আলোচনা শেষে সেখান থেকে তাঁরাও হাসপাতালে যান। সুপারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। হাসপাতাল সূত্রে এ দিন জানানো হয়েছে, ‘মাদার সুপিরওর’-এর অবস্থা স্থিতিশীল। সকালের দিকে তাঁর কাউন্সেলিং করানো হয়েছে।

ঘটনার পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও আশ্বাস অনুযায়ী দুষ্কতীদের গ্রেফতার করতে না পারায় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ পুঞ্জিভূত হচ্ছে। তবে, এ দিন বিকেল পর্যন্ত কোনও অবরোধ বা বিক্ষোভ দেখাননি তাঁরা। স্কুলে পরীক্ষা চলায় এখনই বড় কোনও সিদ্ধান্তের কথা ভাবছেন না বলে তাঁরা জানিয়েছেন। পরীক্ষা শেষ হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার আভাস দিয়েছেন। অভিযোগ, স্কুল ক্যাম্পাসে শুধু পুলিশ আনাগোনাই করছে, অথচ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

গত ১৩ মার্চ গভীর রাতে রানাঘাটের একটি কনভেন্টে লুঠপাট চালায় এক দল দুষ্কৃতী। শুধু লুঠপাটই নয়, স্কুলের সত্তরোর্ধ্ব এক সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করে তারা। মারধর করে অন্য সিস্টারদেরও। শনিবার সকালে এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রছাত্রীরা। দুষ্কতীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে চলে রেল ও সড়ক অবরোধ। পরে পুলিশ এসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন তাঁরা। মাঝে তিন দিন পেরিয়ে গেলেও দুষ্কৃতীদের কোনও হদিশই দিতে পারেনি পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ranaghat rape school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE