অরূপ ভাণ্ডারী।
কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে থাকার পর মারা গেলেন হাওড়ার সালকিয়ার সেই প্রতিবাদী যুবক অরূপ ভাণ্ডারী। সোমবার ভোর সাড়ে ছ’টা নাগাদ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। অরূপের এই মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি গোটা সালকিয়া। সাত সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে গোটা এলাকা। কেননা, মারধরের পর পাঁচ দিন কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত হামলাকারীদের এক জনকেও ধরতে পারেনি পুলিশ। যদিও এ দিন দুপুরে রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী তথা হাওড়ার তৃণমূল সভাপতি অরূপ রায় নিহতের বাড়িতে এসে জানান, অপরাধীরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত বুধবার রাতে ওই যুবককে মারধর করার পর থেকে এ দিন দুপুর পর্যন্ত সরকার বা শাসক দল এ বিষয়ে কার্যত নীরব ছিল। সকালে অরূপের মৃত্যুর পরেও খুব একটা হেলদোল দেখা যায়নি। তবে, এ দিন দুপুর একটা নাগাদ হঠাত্ই নিহতের বাড়িতে পৌঁছন মন্ত্রী অরূপবাবু। তাঁর কথায়: “মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই পরিবারের পাশে রাজ্য সরকার আছে। যে কোনও রকম সাহায্যের জন্য সরকার তৈরি।” এর পাশাপাশি তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রীকে পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা ভিন্ রাজ্যে গা ঢাকা দিয়েছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুঁজে বের করতে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে অরূপবাবু জানান।
গত ২৮ জানুয়ারি রাতে সরস্বতী ঠাকুর বিসর্জন দিতে যাচ্ছিলেন অরূপ। সেই সময় এক দল যুবক রাস্তায় দাঁড়িয়ে কয়েক জন তরুণীকে উত্যক্ত করছিল। ঘটনার প্রতিবাদ করেন তিনি। এর পরে বিসর্জন দিয়ে ফেরার পথে তাঁর উপর হামলা চালায় ওই যুবকেরা। লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। মারধর করা হয় তাঁর বন্ধুকেও। রক্তাক্ত অবস্থায় দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় অরূপকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। কোমায় চলে যান তিনি। পাঁচ দিন টানা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর এ দিন সকালে মৃত্যু হয় তাঁর।
ওই যুবককে মারধরের পর অভিযোগ ওঠে, তাঁর পরিবারকে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেন এলাকার এক তৃণমূল কাউন্সিলর ও তাঁর স্বামী। এ দিন মন্ত্রী বলেন, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনায় যদি দলের কোনও কর্মী জড়িত থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে দল কড়া পদক্ষেপ করবে।”
এলাকার বাসিন্দারা আগে থেকেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন। এ দিন অরূপের মৃত্যু তার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। যদিও পুলিশের তরফে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। শহরের উত্তরাংশের দায়িত্বে থাকা হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি স্পেশাল ব্রাঞ্চ কৃষ্ণকলি লাহিড়ী এ দিন বলেন, “পুলিশ প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিল। নির্দিষ্ট তথ্যের উপর ভিত্তি করে অপরাধীদের খোঁজ চলছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই তারা ধরা পড়বে।” এলাকার বিধায়ক অশোক ঘোষ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা মেনে নিয়েও শেষমেশ সেই পুলিশের পাশেই থেকেছেন। তাঁর কথায়: “পুলিশ প্রথম থেকে সক্রিয় থাকলে অপরাধীরা এত দিনে ধরা পড়ত।” প্রথম দিকে কিছুটা ঢিলে দিলেও পুলিশ এখন যথেষ্ট সক্রিয় বলে তাঁর দাবি।
এ দিন বিকেলে নিহত অরূপের বাড়িতে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। অভিযোগ, বাড়িতে ঢোকার সময় পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়। প্রায় আধ ঘণ্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার পর একা অধীরবাবুকে ঢুকতে দেওয়া হয়। সেখানে ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে বাইরে এসে নৃশংস এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী বুধবার প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে হাওড়া বনধের কথা ঘোষণা করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy