Advertisement
E-Paper

ফের জনরোষে পুলিশ, যৌননিগ্রহে ভাঙচুর স্কুলে

আলিপুর কাণ্ডের পর ফের এক বার উত্তেজিত জনতার সামনে কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গেল পুলিশ। এ বারের ঘটনাস্থল বহরমপুর। ছাত্রীদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগে একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল তথা কর্ণধার গ্রেফতার হয়েছেন আগেই। মঙ্গলবার বহরমপুরের সেই স্কুলে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। আর পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশ উত্তেজিত সেই জনতার হাত থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে কার্যত লুকিয়ে পড়তে বাধ্য হল। ঘটনায় মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:৪০

আলিপুর কাণ্ডের পর ফের এক বার উত্তেজিত জনতার সামনে কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গেল পুলিশ। এ বারের ঘটনাস্থল বহরমপুর। ছাত্রীদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগে একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল তথা কর্ণধার গ্রেফতার হয়েছেন আগেই। মঙ্গলবার বহরমপুরের সেই স্কুলে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। আর পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশ উত্তেজিত সেই জনতার হাত থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে কার্যত লুকিয়ে পড়তে বাধ্য হল। ঘটনায় মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিবিএসই বোর্ড অনুমোদিত বহরমপুরের ওই স্কুলের কর্ণধার সুশান্তকুমার দে-র নামে সম্প্রতি যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তোলে স্কুলেরই পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী। তার পরেই আরও চার আবাসিক ছাত্রী একই অভিযোগ করে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ দায়েরের পর বেশ কয়েক দিন কেটে গেলেও অধরা ছিলেন ওই প্রিন্সিপাল। ওঠে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও। শেষে রবিবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আপাতত পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে তাঁকে।

কী হয়েছিল এ দিন?

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, স্কুল শুরুর আগে এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা হস্টেলে সকালের জলখাবার খাচ্ছিল। তখন সেখানে হাজির হন ধৃত সুশান্তকুমারের স্ত্রী মিঠু দে এবং তাঁর ছেলে সোহম। অভিযোগকারিণী দুই ছাত্রী সেই সময় খাচ্ছিলেন। আচমকাই এক ছাত্রীর চুলের মুঠি ধরে তাকে মারধর শুরু করেন মিঠুদেবী। অভিযোগ, কিল, চড়, ঘুঁষির পাশাপাশি যথেচ্ছ গালিগালাজও করা হয় তাকে। বাদ যায়নি অন্য ছাত্রীটিও। হস্টেলের বাকি ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে কোনও কাজ না হওয়ায় তারা চিত্‌কার শুরু করে।

হস্টেলের চিত্‌কার শুনে ছুটে আসেন স্থানীয়রা। নিমেষের মধ্যে জড়ো হয়ে যায় প্রচুর লোকজন। ওই দুই ছাত্রীকে বাঁচাতে মিঠুদেবী ও সোহমকে সরিয়ে নিয়ে আসে তারা। দু’পক্ষের ধ্বস্তাধ্বস্তি চলতে থাকে। সেই সময় মিঠুদেবীদের ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বহরমপুর থানার পুলিশ এসে জনতার হাত থেকে মিঠুদেবীদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

এর পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জনতা। স্কুলের বিভিন্ন ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। বাদ যায়নি টিচার্স রুমও। চেয়ার-টেবিলের পাশাপাশি সেখানকার কম্পিউটার, ফ্রিজ, দরজা-জানলা ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়। ভেঙে দেওয়া হয় বিশাল আকারের একটি অ্যাকোয়ারিয়ামও। জল, শৌখিন মাছের সঙ্গে স্কুল চত্বরে তখন কাচের টুকরোর ছড়াছড়ি। ভাঙা হয় একটি স্কুল বাস-সহ ওই চত্বরে রাখা সুশান্তকুমারের দুটো গাড়িও। যার একটিতে করে এ দিন সকালে তাঁর স্ত্রী-পুত্র এসেছিলেন।

তখনকার মতো বিষয়টা মিটে গেলেও বেলা ১০টা নাগাদ ডিএসপি (সদর) সৌম্যজিত্‌ বড়ুয়ার নেতৃত্বে দু’গাড়ি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ফের গণ্ডগোল শুরু হয়। তখনও স্কুল চত্বরে ভিড় করে ছিল জনতা। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, শান্ত সেই জনতাকে হঠিয়ে দিতে পুলিশ ধাক্কাধাক্কির পাশাপাশি লাঠিও চালায়। ফলে, ফের ক্ষেপে ওঠে তারা। পুলিশকে রুখতে তারা পাল্টা হামলা চালায়। শুরু হয় ইটবৃষ্টি।

ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে রক্ষা পেতে ছত্রভঙ্গ হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে লুকনোর চেষ্টা করে তারা। স্কুলের তিন তলার ছাদে উঠে কোলাপসিবল গেট আটকে জনতার আক্রমণ থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন কিছু পুলিশকর্মী। পুলিশের ওই দলে দু’জন মহিলা কর্মীও ছিলেন। স্কুলের পাঁচিল টপকে পালাতে গিয়ে তাঁদের এক জনের পায়ে পেরেক ঢুকে যায়। সেখানেই বসে পড়েন তিনি।

অন্য দিকে, ডিএসপি-কে তাড়া করে জনতা। প্রাণ বাঁচাতে তিনি ঢুকে পড়েন স্কুলের উল্টো দিকে অঞ্জনা দাস নামে এক বাসিন্দার বাড়িতে। ঘরের দরজায় তালা দিয়ে বাইরে থেকে জনতাকে আটকানোর চেষ্টা করেন অঞ্জনাদেবী। ভেতর থেকে তখন জনতার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছেন ডিএসপি।

এর পরেই মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরার নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। উত্তেজিত জনতাকে হঠিয়ে দিয়ে উদ্ধার করা হয় আক্রান্ত পুলিশকর্মীদের।

পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “এ দিনের ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৬ জনকে। পাশাপাশি স্কুলে গিয়ে ছাত্রীদের মারধর করার ঘটনায় মিঠুদেবী এবং তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

এ দিনের এই ঘটনার পর স্কুলটি কার্যত শ্মশানের চেহারা নিয়েছে। প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই হস্টেল ছাড়তে শুরু করেছিলেন আবাসিক ছাত্রছাত্রীরা। এ দিনের ঘটনার পর সর্বসাকুল্যে আর ৬ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল গণেশ চক্রবর্তী। অভিযোগকারিণী চার ছাত্রীর মধ্যে এক জন এবং পাঁচ জন ছাত্র তাঁর বাড়িতেই আপাতত রয়েছে। ওই ছাত্রছাত্রীদের পরিবারের লোকজন এসে তাদের নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

berhampur alipur jail V class student molested baharampur school allegedly alipore scam state news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy