গয়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে শিয়ালদহ-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস।
মাও-হামলায় উড়ল রেললাইন। লাইনচ্যুত হল ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের পাইলট ইঞ্জিন। ঘটনাস্থল বিহারের রফিগঞ্জ। যদিও এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলে রেলের দাবি। এর জেরে হাওড়া-দিল্লি রুটে আপ এবং ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বিপর্যস্ত হয়। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন। তিনটি রাজধানী এক্সপ্রেসকেও দাঁড় করিয়ে রাখা হয় দীর্ঘ ক্ষণ। তার মধ্যে ছিল হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী। ওই ট্রেনে কলকাতা আসছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। বৃহস্পতিবার তাঁর শপথ নেওয়ার কথা। ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা দেরিতে কলকাতা পৌঁছবে বলে রেলের তরফে জানানো হয়েছে।
রেল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ঔরঙ্গাবাদ জেলার রফিগঞ্জের কাছে মাওবাদীরা রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই বিস্ফোরণে মোগলসরাই-গয়া রুটের ইসমাইলপুর এবং রফিগঞ্জ স্টেশনের মাঝে প্রায় চার মিটার রেললাইন উড়ে যায়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে ফুট চারেক গভীর গর্তও তৈরি হয় ওই অংশে। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ওভারহেড তারও। ওই সময় এই পথে ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস আসার কথা ছিল। যে হেতু মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা, তাই রেলের নিয়ম মেনেই এই রুটে, বিশেষত রাতে, গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন যাওয়ার আগে পাইলট ট্রেন চালানো হয়। সেই মতো ওই রাতে রেললাইন এবং ওভার হেড তার ঠিক আছে কি না পর্যবেক্ষণ করতে রাজধানীর আগে আগে যাচ্ছিল ইঞ্জিন-সহ দু’বগির একটি পাইলট ট্রেন। পূর্ব-মধ্য রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক অরবিন্দকুমার রজক জানিয়েছেন, বিস্ফোরণস্থলের কিছু অংশে রেললাইন না থাকার কারণে পাইলট ট্রেনের ইঞ্জিনটি লাইন থেকে ছিটকে যায়। রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান অরুণেন্দুকুমার বলেন, “মাওবাদী হানায় রেললাইনের প্রায় চার মিটার অংশ উড়ে গিয়েছে। এমনিতেই বিহারের মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাগুলিতে ট্রেন ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটারের কম গতিতে চালানো হয়। এই ঘটনার পর নতুন করে সেই গতি আরও কমানোর চিন্তাভাবনা চলছে।”
দুর্ঘটনাগ্রস্ত পাইলট ইঞ্জিন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঔরঙ্গাবাদ জেলায় বুধবার মাওবাদীরা এক দিনের বনধ ডাকে। স্থানীয় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিচালনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে বুধবার মধ্য রাত পর্যন্ত ওই বনধ ডাকা হয়। কিন্তু বনধের সময়সীমা শুরুর আগেই এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে পুলিশের দাবি। রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া পাইলট ইঞ্জিনের বেলাইন হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তলব করেছেন। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে মাওবাদীরা রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তার ফলেই এই দুর্ঘটনা হয়েছে।” তবে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, রাজধানী রক্ষার পুরো কৃতিত্ব রেলকর্মীদের দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। এ দিনের ঘটনাস্থলের কাছাকাছি জায়গায় ২০০২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আপ হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস। রফিগঞ্জের কাছে ধাওয়া নদীর উপর একটি সেতু ভেঙে লাইনচ্যুত হয় ট্রেনটি। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন শতাধিক যাত্রী। এ দিন সে ঘটনারও উল্লেখ করেন গৌড়া। তিনি জানান, নীতীশকুমার রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বিহারে এক রেল দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “ওই দুর্ঘটনায় প্রচুর মানুষ মারা গেলেও এ দিনের ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এমনকী, পাইলট ইঞ্জিনের চালকও সুস্থ আছেন।” রেলমন্ত্রী দাবি করেন, দুর্ঘটনাস্থলে লাইন এবং ওভারহেড তার মেরামতির কাজ শেষ হওয়ার পরে আপ এবং ডাউন উভয় লাইনে এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এই ঘটনায় হাওড়াগামী ডাউন দুরন্ত এক্সপ্রেস প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা, ডাউন জোধপুর এক্সপ্রেস ১০ ঘণ্টা, ডাউন কালকা মেল ৯ ঘণ্টা, ডাউন দুন এক্সপ্রেস ৭ ঘণ্টা এবং ডাউন রাজধানী এক্সপ্রেস প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা দেরিতে চলছে। অনেক ট্রেনকেই অন্য পথে ঘুরিয়ে হাওড়ায় আনা হচ্ছে বলে রেল সূত্রে খবর।
ছবি: পিটিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy