Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মুখ বন্ধ করতে কুণালকে ঘাড়ধাক্কার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে

মুখ থেকে ঝুলছে রাইলস টিউব। গায়ে হাসপাতালের পোশাক। সেই অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্স থেকে তাঁকে পুলিশি প্রহরায় নামানো হচ্ছে। দরজা খোলা মাত্রই ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু। তুমুল হইহট্টগোল এবং ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই শোনা যাচ্ছে কুণাল ঘোষের কণ্ঠস্বর, ‘‘আমাকে মারছেন কেন?’’ তড়িঘড়ি কুণালের মুখ ঢাকার চেষ্টা করলেন এক পুলিশকর্মী, নিজের মাথার টুপি খুলে।

বিধ্বস্ত কুণাল।

বিধ্বস্ত কুণাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ১৮:১১
Share: Save:

মুখ থেকে ঝুলছে রাইলস টিউব। গায়ে হাসপাতালের পোশাক। সেই অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্স থেকে তাঁকে পুলিশি প্রহরায় নামানো হচ্ছে। দরজা খোলা মাত্রই ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু। তুমুল হইহট্টগোল এবং ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই শোনা যাচ্ছে কুণাল ঘোষের কণ্ঠস্বর, ‘‘আমাকে মারছেন কেন?’’ তড়িঘড়ি কুণালের মুখ ঢাকার চেষ্টা করলেন এক পুলিশকর্মী, নিজের মাথার টুপি খুলে। এ সবের মধ্যেই অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামিয়ে তাঁকে প্রায় ঘাড়ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালের ভেতরে। শনিবার দুপুরে এসএসকেএম চত্বরে এ ভাবেই কুণাল ঘোষকে সংবাদমাধ্যম থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হল।

এ দিন সকাল সওয়া ১১টা নাগাদ কুণালকে এসএসকেএম থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে। সেখান থেকে শারীরিক পরীক্ষা শেষে তাঁকে ফের নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম-এ। কুণালকে বাইরে বের করায় স্বভাবতই দুই হাসপাতালেই ছিল সংবাদমাধ্যমের ভিড়। বাঙুরে পৌঁছে কুণাল ফের সরব হন। ট্রলিতে করে তাঁকে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, “যারা দোষী অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করা হোক। সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে বাইরে।” পুলিশ তখনই সতর্ক হয়ে যায়।

এর পরে বেলা সওয়া ১টা নাগাদ কুণালকে ফের নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম চত্বরে। কিন্তু ফের তিনি মুখ খুলতে পারেন সেই আশঙ্কায় পুলিশ প্রায় ৪০ মিনিট তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে বের করেনি। বাইরে থেকে আরও পুলিশ নিয়ে আসা হয়। শেষে বেলা ১টা ৪০ নাগাদ ডিসি (সাউথ) মুরলীধর শর্মার নেতৃত্বে কুণালকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে বের করার চেষ্টা করতেই বিপত্তি বাধে। অ্যাম্বুল্যান্সের চারপাশে তখন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তির মধ্যেই টানাহ্যাঁচড়া করে কুণালকে নামানো হয়। তার মধ্যেই শোনা যায় কুণালের আর্তনাদ, “আমাকে মারছেন কেন?” কখনও বা আবেদন, “দোষীদের গ্রেফতার করতে বলুন।”

সাংবাদিকদের সামনে মুখ খুলতেই শুরু হল টানাহ্যাঁচড়া।

কিন্তু কুণালকে সামলাতে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের আক্রমণ করল কেন পুলিশ?

ডিসি (সাউথ) বলেন, “পুলিশ যদি কিছু করে থাকে তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।” তাঁর সামনেই তো ঘটনাটা ঘটল! এর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমার চোখ তো আর ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘোরে না। কাজেই কোথায় কী হয়েছে তা বলতে পারব না। বললাম তো, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।”

প্রেসিডেন্সি জেলের মধ্যে ঘুমের ওষুধ খেয়ে অসুস্থ কুণালকে শুক্রবার ভোরে এসএসকেএম-এ আনা হয়। সারা রাত তাঁকে রাখা হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। ভর্তি হওয়ার পরে তাঁর সিটি স্ক্যান এবং ইকো-কার্ডিওগ্রাম করা হয়েছিল। এ দিন সকালে তাঁর বুকের এক্স-রে করা হয়। এর পরে, মস্তিষ্ক ঠিকঠাক কাজ করছে কি না তা জানতে ‘ইইভি’ পরীক্ষা করাতে বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ কুণালকে নিয়ে যাওয়া হয় বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে।

কিন্তু শুক্রবার কুণালের জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড তো এমন পরীক্ষার নির্দেশ দেয়নি। তবে কেন ‘ইইভি’ করাতে হল তাঁর? চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শারীরিক সমস্যার কথা বলতে গিয়ে কুণাল জানিয়েছিলেন মাঝে মাঝেই তাঁর প্রচণ্ড মাথা যন্ত্রণা করে। এবং সেই সময় কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখে আঁধার দেখেন। চিকিৎসকদের মতে, মস্তিষ্ক বা হৃদপিণ্ডের যে কোনও একটির কার্যকরী দিক দুর্বল হলেই এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে কারণেই এ দিন ওই পরীক্ষা করা হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

কেমন আছেন কুণাল?

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। পালস রেট ১১৪। রক্তচাপ ১০৯/৬৮। রক্তে অক্সিজেন সরবরাহের মাত্রা ১০০ শতাংশ। আগের তুলনায় ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়ার পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। সব কিছু প্রায় স্বাভাবিক থাকলেও আপাতত তাঁকে সিসিইউ-তেই রাখা হবে। এ দিন সকালে ঠিক হয়েছিল সব কিছুই প্রায় স্বাভাবিক, তাই কুণালের জন্য একটি কেবিনের বন্দোবস্ত করা হবে। কিন্তু বেলার দিকে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু কেন?

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ দিন বাঙুর থেকে ফেরার পথে যে পরিমাণে ধকল সহ্য করতে হয়েছে সারদা-কাণ্ডের অন্যতম প্রধান এই অভিযুক্তকে, তাতে আর তাঁকে সাধারণ বেডে রাখার কোনও পরিকল্পনা নেই। আপাতত যত দিন এসএসকেএম-এ চিকিৎসার কারণে কুণালকে রাখা হবে, তত দিন তিনি সিসিইউ-তেই থাকবেন।

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kunal ghosh sskm saradha scam suicidal attempt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE