আদালতে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে ছয় অভিযুক্ত। (বাঁ দিক থেকে)আব্দুল হাকিম, খালিদ মহম্মদ, জিয়াউল হক, হাসেম মোল্লা, রাজিয়া বিবি এবং আলিমা বিবি। ছবি: রণজিত্ নন্দী
‘মুখ্যমন্ত্রীই বলেছেন’ কথাটা উচ্চারণ করা মাত্রই শুক্রবার বিচারক তাঁকে থামিয়ে দিলেন বটে, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁর মক্কেলের জামিন চাওয়ার জন্য তিনি যে গত ২২ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দেওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকেই হাতিয়ার করবেন তা জানিয়ে দিলেন রামদুলাল মান্না। রামদুলালবাবু খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত জিয়াউল হকের আইনজীবী।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত সাত জনকে শুক্রবার কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খানের এজলাসে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁর মক্কেল জিয়াউলের জামিনের আবেদন জানাতে উঠে আইনজীবী রামদুলাল মান্না বলতে শুরু করেন, “মুখ্যমন্ত্রীই বলেছেন...।” এর বেশি আর রামদুলালবাবুকে বলতে দেননি বিচারক খান। রামদুলালবাবুকে থামিয়ে দিয়ে বিচারক বলেন, “এটা আদালত। রাজনৈতিক ভাষণ দেওয়ার জায়গা নয়। নথির বাইরে কোনও কথা আদালতে জানাবেন না।”
তাঁর মক্কেলের জামিনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক কোন উক্তিকে হাতিয়ার করতে চেয়েছিলেন খাগড়াগড়-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত জিয়াউলের আইনজীবী? আদালতের বাইরে রামদুলালবাবু বলেন, “এই তো ক’দিন আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ষড়যন্ত্র করে গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-কে দিয়ে খাগড়াগড় কাণ্ড ঘটিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ওই কথা প্রত্যাহারও করেননি।”
রামদুলালবাবুর মন্তব্য, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নিয়ে ওই কথা জানান, তখন বোঝাই যাচ্ছে, জিয়াউলের মতো নির্বিবাদী এক শিক্ষককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমার মক্কেল নির্দোষ। আমি বিচারককে সেটাই জানাতে চেয়েছিলাম।”
২২ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোরের সভায় ঠিক কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী? মমতা বলেছিলেন, “খাগড়াগড়ে হয়তো কেন্দ্রই ‘র’-কে দিয়ে বোমা রাখিয়েছে। মনে রাখবেন, আমি ২৩ বছর কেন্দ্রে ছিলাম। কে কী ভাবে ষড়যন্ত্র করে সব জানি।” খাগড়াগড়-কাণ্ডের ধৃতদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ নিরোধক আইন (ইউএপিএ) ছাড়াও রাষ্ট্রে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার চেষ্টার মতো কঠোর অভিযোগ এনেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। মমতার ওই মন্তব্যে সেই অভিযুক্তরা সুবিধা পাবে সেই সময়েই মন্তব্য করেছিলেন আইনজ্ঞেরা।
জামিনের বিরোধিতা করে এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ আদালতে বলেন, খাগড়াগড়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূল পাণ্ডা শেখ ইউনুস, শেখ বরুণ ও শেখ রিয়াজুলের সঙ্গে একাধিক বার টেলিফোনে যোগাযোগ হয়েছে জিয়াউলের। তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তাই অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া উচিত হবে না।
অভিযুক্তের জামিনের আবেদন খারিজ করে বিচারক এ দিন জিয়াউল-সহ সাত জনকে আগামী ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy