বাকস্বাধীনতায় আপত্তি নেই ওঁদের, আপত্তি নেই ভিন্নমতেও, শুধু ওই আর কী, মাথায় রাখতে হবে স্বাধীনতার নামে যেন উচ্ছৃঙ্খলতা না হয়, ভিন্নমত যেন ক্ষতিকর না হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাস, লক্ষ্মণরেখা টানা হয়ে গেল। ওপারে থাকো, নিরাপদ গণ্ডির মধ্যেই তোমার স্বাধীন বিচরণ। রেখা টপকেছো, তো তোমার রাবণের কাহিনি জানাই আছে।
প্রশ্নটা হচ্ছে, লক্ষ্মণরেখাটা টেনে দিচ্ছে কে, কে স্থির করে দিচ্ছে কোনটা ক্ষতিকর, কোনটাই বা উচ্ছৃঙ্খল? ধরা যাক এই গণতন্ত্রের রিংয়ে এক দিকে রয়েছেন কানহাইয়া নামের এক যুবক, অন্য দিকে অরুণ জেটলি। বাকস্বাধীনতা দু’জনেরই পছন্দ, ভিন্নমতে আস্থা দু’পক্ষেরই। এবং সংবিধান নির্দিষ্ট ভাবে তাঁরা দু’জনেই সমান মর্যাদার অধিকারী। তবু কেন অরুণ জেটলি ঠিক করে দেবেন কোনটা উচ্ছৃঙ্খল, কেন কানহাইয়া স্থির করতে পারবেন না কোনটা ক্ষতিকর? আঙুলটা অন্যের দিকে তোলার আগে আয়নার সামনে দাঁড়ানোরও দরকার পড়ে কখনও। অরুণ জেটলির এই অধিকার স্বোপার্জিত নয়, এই অধিকার দিয়েছি আমরাই।
আসলে আমাদেরই স্থির করতে হবে, আমরা নিজেদের গুপী গাইন-বাঘা বাইনের সেই মূক দেশের নাগরিক হিসেবে দেখব কি না, যেখানে বরফির এক জাদু ধোঁয়ায় গোটা দেশ থাকে নীরব, যেখানে বাক স্বাধীনতাকে নিজস্ব নিয়মে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে রাষ্ট্র। বরফির ধোঁয়াকে তবু দেখা গিয়েছিল, বিপদটা সেখানে বেশি, যেখানে ধর্ম বা জাতীয়তাবাদের আফিমটা দৃশ্যমান নয়।
ভোট আসে, আরও একবার আম আদমির তর্জনীতে নিয়ন্ত্রিত হয় রাষ্ট্রচালনার দণ্ড। অতএব, আম আদমিকেই স্থির করতে হবে। কল্প কথার কোনও গুপী বা বাঘা এসে নিদ্রামুক্তি ঘটাবে না, একথা বোঝার মত যথেষ্ট সাবালক ভারতীয় গণতন্ত্র।
গত এক মাস ধরে জেএনইউ কাণ্ড, রবিবার স্বাধীনতা-ভিন্নমত নিয়ে অরুণ জেটলির মন্তব্য এবং পশ্চিমবঙ্গে ভোটপূর্ব নানান আস্ফালনের পটভূমিকায় এই কথাগুলো মনে এল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy