(বাঁ দিকে) অর্জুন সিংহ, পবন সিংহ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বিজেপি সাংসদ হয়েও দল ছেড়ে তৃণমূলে ফেরার সময়ে বাবার অর্জুন সিংহকে নিষেধ করেছিলেন ছেলে পবন সিংহ। কিন্তু তা কানে নেননি অর্জুন। আবার বিজেপি বিধায়ক ছেলেকে তৃণমূলে আসতে বলেছিলেন অর্জুন। সাড়া দেননি পবন। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ব্যারাকপুর আসনের টিকিট না দেওয়ায় অর্জুন যখন বিজেপিতে ফিরে যেতে পারেন বলে জল্পনা, তখনই জগদ্দলের মেঘনা মোড়ের কাছে বিখ্যাত মজদুর ভবনের অন্দরের কথা প্রকাশ্যে আনলেন পবন। সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘‘বাবা যখন তৃণমূলে যেতে চাইলেন তখন আমি অনেক বার বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, ৩৫ বছর ওই দল আপনাকে কী দিয়েছে? আপনি যাবেন না। কিন্তু বাবা তা শোনেননি।’’ একই সঙ্গে পবন জানান, তাঁকেও তৃণমূলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন অর্জুন। কিন্তু তিনিও বাবার ডাকে সাড়া দেননি।
রবিবার যখন তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করা হয় তখন ব্রিগেডের মঞ্চে ছিলেন অর্জুন। মঞ্চ থেকে নামার পরে পরেই তিনি ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন। দল তাঁর সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে জানিয়ে বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলে গিয়ে ভুল করেছিলাম।’’ সোমবার সকাল থেকেই জোর জল্পনা শুরু হয়ে যায়, অর্জুন ফের বিজেপিতে যাবেন। ব্যারাকপুরের প্রার্থী হবেন। এমন নানা বার্তা অর্জুনের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়। বিজেপির তরফে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য স্পষ্টই বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ তবে পবন বুঝিয়ে দিলেন বাবা নিজের দলে ফিরে এলেই তিনি সব চেয়ে খুশি হবেন। সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে জগদ্দলে অর্জুনের বাড়িতে একের পর এক নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহ শুরু হয়ে যায়। সকালেই নিজের দফতর থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সরিয়ে দেন। এর পরে দুপুরে সেই জায়গায় চলে আসে প্রাধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি। সেই সঙ্গে অর্জুনের মুখে এমন আক্ষেপ শোনা যায় যে, ‘‘তৃণমূলে ফিরতে নিষেধ করেছিল ছেলেও। সে কথা না শুনে ভুল করেছি।’’ এর পরে একই কথা বললেন পবন। তিনি বলেন, ‘‘বাবাকে আমি অনেক বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম তৃণমূল পদ দেবে, টিকিট দেবে বলছে কিন্তু আসলে দেবে না। তৃণমূলে যাওয়ার জন্য যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল সেটা নিয়েও বলেছি।’’ একই সঙ্গে পবন দাবি করেন, ‘‘বাবা আমাকেও যেতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি বলেছিলাম, আমাকে তো মুখ্যমন্ত্রী করবে না! তার চেয়ে আমি যেখানে আছি, যেমন আছি ভাল আছি। মানুষ এত অত্যাচার সহ্য করেও আমাকে ভোট দিয়েছেন, দু’বার ভাটপাড়া থেকে জিতিয়েছেন, তাতে দলবদল করা আমার ঠিক হত না।’’
বাবার ভুল থেকে তিনি অনেক শিক্ষা নিয়েছেন জানালেও অর্জুন বিজেপিতে ফিরবেন কি না সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি পবন। তবে জানিয়েছেন, ব্যারাকপুর থেকেই অর্জুন জিতবেন। তাঁর দল বিজেপি অর্জুনকে ফিরিয়ে নিতে রাজি কি না সেই প্রশ্নে পবন বলেন, ‘‘আমায় তো প্রথম দিন থেকেই অনেকে বলতেন, তোমার বাবা ফিরে আসবেন না! আমি বলতাম, আমি কী বলব? বাবাই সব বলতে পারবেন।’’ অর্জুনের সঙ্গে কি বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কথা হয়ে গিয়েছে? পবন বলেন, ‘‘সেটা আমি বলতে পারব না। বাবাই বলতে পারবেন। তবে ব্যারাকপুরে বাবা প্রার্থী হলে অবশ্যই জিতবেন। এখানকার মানুষ বাবাকে খুব ভালবাসেন।’’ তবে বাবা বিজেপিতে ফিরতে পারেন জল্পনায় তিনি খুশি বলে স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক পবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy