(বাঁ দিকে) সুজাতা মণ্ডল। সৌমিত্র খাঁ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা ভোটে জমজমাট লড়াই বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে বিদায়ী সাংসদ তথা বিজেপি প্রার্থী সৌমিত্র খাঁর সঙ্গে ভোট যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছেন তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল। সেই লড়াইয়ে প্রার্থী সৌমিত্রকে সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোট ষষ্ঠ দফায়। আগামী ২৫ মে এই লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। বিজেপি এবং তৃণমূল তো বটেই এই কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিএম প্রার্থী হয়েছেন শীতল কৈবর্ত। বাম প্রার্থী এই ভোটযুদ্ধে থাকলেও প্রকৃত লড়াই সৌমিত্র বনাম সুজাতার মধ্যেই। অথচ পাঁচ বছর আগে এই লড়াইয়ে সৌমিত্রের সঙ্গে ছিলেন তাঁর প্রাক্তন সহধর্মিণী সুজাতা। আদালতে নির্দেশে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের ছ’টি বিধানসভা এলাকায় প্রচার করতে পারেননি সৌমিত্র। কেবলমাত্র বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ বিধানসভাতেই প্রচার করতে পেরেছিলেন তিনি।
ফলস্বরূপ, বড়জোড়া, ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর, ইন্দাস এবং সোনামুখী বিধানসভা এলাকায় সৌমিত্রের হয়ে জনতার কাছে ভোট চাইতে গিয়েছিলেন তাঁর তৎকালীন স্ত্রী সুজাতা। জয়ের পর সুজাতাকে দেবী দুর্গার সঙ্গে তুলনাও করেছিলেন সৌমিত্র। কিন্তু এ বারের ভোটে সেই সহযোদ্ধাই প্রতিপক্ষ। আর শীর্ষ নেতৃত্বের দেওয়া ৪০০ আসনের লক্ষ্যপূরণে বিষ্ণুপুর আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি। তাই সুজাতার কোনও ব্যক্তি আক্রমণ কিংবা অসংলগ্ন মন্তব্যের জবাব দিতে সৌমিত্রকে নিষেধ করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁকে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র, নরেন্দ্র মোদী সরকারের ১০ বছরের কাজের হিসাবনিকেশের পাশাপাশি সাংসদ হিসেবে তিনি কী কাজ করেছেন, তা-ই প্রচার করবেন। সঙ্গে রাজ্য সরকারের দুর্নীতির কথা তুলে ধরে ভোট চাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের এই লড়াই কোনও ভাবেই ব্যক্তিগত স্তরে যাক, তা চাইছে না বিজেপি।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে সৌমিত্রের হয়ে ভোট চাইলেও, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন সুজাতা। এর পর বিবাহবিচ্ছেদের মামলা হয় দু’পক্ষের মধ্যে। তিক্ততার সূচনা সেখান থেকেই, বর্তমানে দু’জনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। সৌমিত্র-ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, সুযোগ পেলেই সুজাতা সৌমিত্রের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হন। পিছপা হন না ব্যক্তি আক্রমণ থেকেও। এমনই পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বিজেপি নেতৃত্ব বিদায়ী সাংসদ তথা প্রার্থী সৌমিত্রকে কোনও রকম প্ররোচনায় পা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিজেপি। এ প্রসঙ্গে সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামী বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী সব সময় আমাদের দল এবং সরকারের সাফল্য নিয়ে কথা বলবেন। মানুষের কাছে ভোট চাইতে গিয়ে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর উপলব্ধির কথা বলবেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বিপরীত শিবিরের প্রার্থী যতই ব্যক্তি আক্রমণে নামুন না কেন, আমাদের প্রার্থী তাঁর কোনও আক্রমণের জবাব দেবেন না। তাঁর এবং আমাদের লক্ষ্য কেন্দ্রে তৃতীয় বারের জন্য নরেন্দ্র মোদীর সরকার গঠন করতে বিষ্ণুপুর লোকসভায় জেতা। তাই অহেতুক কোনও বিতর্ক যাতে না তৈরি হয়, আমাদের প্রার্থী সৌমিত্র সে দিকেই নজর রেখে চলবেন।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতীকে আরামবাগ থেকে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের কাছে পরাজিত হন সুজাতা। তবে ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বাঁকুড়া থেকেই শাসকদলের টিকিটে জেলা পরিষদ সদস্য হয়েছেন তিনি। আর এ বার সেই সুজাতা লোকসভা নির্বাচনে তাঁর প্রাক্তন স্বামীর মুখোমুখি। সেই ভোট যুদ্ধ নিয়ে বিষ্ণুপুরের রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ চড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy