Advertisement
০১ মে ২০২৪

দগদগে ঘা আবার বেআব্রু

একটা বই হঠাত্ যেন বিস্ফোরণের মতো সামনে এল! দেশের মহিলা ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সোনা চৌধুরীর বইটা অতি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। ওই বইতে ফুটবলার-লেখিকার অভিযোগ, এ দেশে মহিলাদের ফুটবল জুড়ে শুধুই যৌন নিগ্রহ। কোচ থেকে কর্মকর্তা— সব স্তরের নিয়ন্তাদের যৌন লালসার শিকার হতে হয় মহিলা ফুটবলারদের।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০১:৩৮
Share: Save:

একটা বই হঠাত্ যেন বিস্ফোরণের মতো সামনে এল!

দেশের মহিলা ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সোনা চৌধুরীর বইটা অতি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। ওই বইতে ফুটবলার-লেখিকার অভিযোগ, এ দেশে মহিলাদের ফুটবল জুড়ে শুধুই যৌন নিগ্রহ। কোচ থেকে কর্মকর্তা— সব স্তরের নিয়ন্তাদের যৌন লালসার শিকার হতে হয় মহিলা ফুটবলারদের।

বইটা একটা জ্বলন্ত কয়লার টুকরো বা গনগনে লাভার মতো আছড়ে পড়েছে। আরও এক বার বেআব্রু করে দিয়েছে গোটা ব্যবস্থাটাকেই।

লালসার এই থাবা শুধু মেয়েদের ফুটবলে নয়। খেলা থেকে রাজনীতি, শিক্ষাক্ষেত্র থেকে বলিউড, পেশার জগৎ থেকে প্রশাসনের অন্দরমহল— কোন ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে এমন অভিযোগ ওঠে না? কোথাও একটা ভাল সুযোগ পাওয়ার জন্য ‘কমপ্রোমাইজ’, কোথাও উন্নতি করার জন্য ‘স্যাক্রিফাইস’। করতেই হবে। না হলে ছুড়ে ফেলা হবে। এমন অভিযোগ বার বার উঠেছে। এমন অভিজ্ঞতা অনেকের হয়েছে। সোনা চৌধুরীর বইটা শুধু আরও এক বার উস্কে দিয়েছে আগুনে সেই প্রসঙ্গটাকে।

গণতন্ত্র নিয়ে এত বড়াই আমাদের! গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে কত গর্ব! সেই ব্যবস্থায় যে কত রকমের ফাঁকফোকর, কত যে দগদগে ক্ষত, তা আবার সামনে এনে দিল বইটা।

এত ফাঁপা আমাদের গণতন্ত্রের কাঠামোটা? সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক কাঠামো আর নৈরাজ্যের মধ্যে সীমারেখাটা এত মলিন, এত অস্পষ্ট? সমস্যার শিকড়টা আসলে অন্যত্র। নারী-পুরুষের সমানাধিকার, সামাজিক ন্যায়, অখণ্ড গণতন্ত্র— কথার ফুলঝুরি রয়েছে। কিন্তু, ফুলঝুরির রোশনাইয়ের ও পারের অন্ধকারটাও গাঢ়। পুরুষতন্ত্রের অঙ্গুলিহেলন সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করার মতো সাবালক বোধ হয় এখনও হয়নি এ গণতন্ত্র। এ গণতন্ত্রের গায়ে একটা মৃদু আঁচড় পড়লে যে রক্তবিন্দু বেরিয়ে আসে, সেই বিন্দুতেই পুরুষতান্ত্রিকতার ডিএনএ মিলবে। সে জন্যই তো মিনি স্কার্ট পরা মেয়েকে দেখলে নির্দ্বিধায় চরিত্র তার নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, হাফপ্যান্ট পরে কোনও মহিলাকে রাস্তায় বেরোতে দেখলে বলাই যায়, ধর্ষণের শিকার হওয়া তাঁর পক্ষে অস্বাভাবিক নয়, মেয়েদের সিগারেট খেতে দেখলেই মনে হয় নষ্ট মেয়েদের দেখছি।

সামাজিক নিঃশ্বাসে মিশে থাকা এই বিষ সুযোগ বুঝে গণতন্ত্রের আস্তিন থেকে উঁকি দেয়। ফুলঝুরির ও পারের অন্ধকারটা তখন আরও গাঢ় হয়। এই গাঢ় অন্ধকার কি আমাদের ঘিরে রাখবেই? নাকি মুক্তি সম্ভব? গণতন্ত্র যদি কোনও দিন মুক্তি পায় পুরুষতন্ত্রের বজ্র-নিয়ন্ত্রণ থেকে, যদি কোনও দিন সাবালক হয়, সে দিনই পিছু হঠবে অন্ধকারটা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anjan bandyopadhyay sona chowdhury Gane In Game
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE