জরকা গ্রামে।ছবি: শুভ্র মিত্র।
দলেরই জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি। গ্রামে-গঞ্জে প্রচার করতে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘চোর’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘ধাপ্পাবাজ’-এর মতো বাছা বাছা বিশেষণও প্রয়োগ করছেন ব্লক সভাপতি ও তাঁর অনুগামীরা। এ বার তাই জেলা সভাপতির হয়ে ব্যাট ধরলেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রার্থী যে ‘চোর’ নয়, জোর গলায় তা সভামঞ্চ থেকেই শুনিয়ে দিলেন নেত্রী।
রবিবার বাঁকুড়ার ওন্দার হাইস্কুল ফুটবল মাঠে ওন্দা বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-এর সমর্থনে জনসভা করেন মমতা। ওই সভায় মমতা বলেন, “অরূপ কাজের মানুষ। এটুকু জোর গলায় বলতে পারি, অরূপ চোর নয়!’’
নেত্রীর এই বক্তব্যের সূত্র ধরেই দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত ব্লক সভাপতি তথা এই কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী অশোক চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “এই কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখন অরূপবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়েছে যে, এ বার দলনেত্রীকে বাধ্য হয়ে মুখ খুলে বলতে হল, অরূপবাবু চোর নন।’’
ঘটনা হল, অশোকবাবু-সহ ওন্দা বিধানসভা এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একটা বড় অংশেরই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল এই কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক অরূপবাবুর বিরুদ্ধে। দল তাঁকে ফের এই কেন্দ্রের প্রার্থী করায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন অশোকবাবুরা। যে দিনই প্রার্থী হিসেবে বাঁকুড়া শহরে বিশাল জমায়েত করে মনোনয়নপত্র পেশ করেন অরূপবাবু, তার পর দিনই অশোকবাবুও মিছিল করে জেলাশাসকের দফতরে এসে মনোনয়নপত্র পেশ করেন নির্দল হিসেবে। এর পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য দলীয় ভাবে তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয় বলেও অভিযোগ। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহারের পথে না হেঁটে ভোটে লড়ারই সিদ্ধান্ত নেন অশোকবাবু।
এই ঘটনার পরেই দল তাঁকে বহিষ্কার করে। অশোকবাবুর অনুগামীরা বিভিন্ন এলাকায় পথসভা, মিছিল করে অরূপবাবুর বিরুদ্ধে লাগাতার বিভিন্ন অভিযোগ তোলা শুরু করেন। এই ঘটনায় ক্রমশই চাপে পড়ছিল তৃণমূল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জনসভায় অরূপবাবুর পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি ‘চোর নন’ বলে দাবি করায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। বিরোধীরাও মমতার এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই প্রশ্ন তুলেছেন, দলনেত্রীকে নিজের জেলা সভাপতির হয়ে এমন মন্তব্য করার প্রয়োজনই বা পড়ল কেন? ওন্দা কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী মানিক মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “যে দলের নেত্রীকে সততার প্রতীক বলা হয়, তাঁকে এখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলতে হচ্ছে তাঁর প্রার্থী চোর নন। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে দলের অবস্থা কী হয়েছে!’’
ওন্দায় জনসভার আগে মমতা কোতুলপুর কেন্দ্রের জয়পুর থানার বৈতল সংলগ্ন জরকা গ্রামে জনসভা করেন। দীর্ঘ বাম আমলে ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে বিরোধী দল মাথা তুলেই দাঁড়াতে পারেনি। দিনের পর দিন রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনাও ঘটেছে এই এলাকায়। এ দিনের সভায় সেই প্রসঙ্গে বারবার তুলেছেন মমতায়
তিনি বলেন, “এখানে গোপীনাথপুরে আমাদের দলের কর্মী সালাম খাঁ-র দুই ভাইকে খুন করা হয়েছিল। আমাকে এই গ্রামেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি তখন।” তাঁর সংযোজন, “চমকাইতলা গ্রামে আমাদের মিটিংয়ে মাইক লাগাতে দেয়নি। এত চমকাতো ওই চমকাইতলা, তা এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাব?’’ এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, পরিবর্তনের সরকার এলাকায় শান্তির বাতাবরণ তৈরি করেছে। এলাকায় হয়েছে ঢালাও উন্নয়ণ। তিনি বলেন, “সেই শান্তির বাতাবরণ রক্ষা করতে দিন।”
যদিও কোতুলপুরে তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি নিমাই ঘোষের ওই সভায় অনুপস্থিতি নিয়ে কর্মীদের মধ্যে কথা ওঠে। অনেকে জানান, দলে দায়িত্ব না পাওয়ায় নিমাইবাবু ভোটে সে ভাবে নামেননি। যদিও ওই নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওন্দা ও জরকা গ্রামের দু’টি জনসভাতেই মমতা রাজ্য সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে কৃষি ব্যবস্থা সবেতেই উন্নয়নের কাজ হয়েছে। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল হয়েছে।”
ওন্দার জনসভায় আসা মানুষ এলাকায় মহিলাদের জন্য কলেজ গড়ার দাবি করেন। সেই শুনে মমতা বলেন, “অরূপকে আপনারা জেতান। বিষয়টি আমার মাথায় রইল। অরূপ দেখবে। আমি আবার এখানে আসব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy