Advertisement
E-Paper

পুলিশ নিরপেক্ষ হতেই দিদির মুখে ভূতের নাম

সোমবার সুনাম কুড়িয়েছে পুলিশ। শনিবার সেই সুনাম ধরে রাখার পরীক্ষা। এ রাজ্যে গত পাঁচ দশকের মধ্যে সোমবারই প্রথম প্রায় সর্বত্র ভূতেদের ভাগিয়ে মানুষ নিজেদের ভোট নিজেরা দিয়েছেন। তার কৃতিত্ব যেমন কেন্দ্রীয় বাহিনীর, তেমনই রাজ্য পুলিশের। শাসক দলের ফরমান ছুড়ে ফেলে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৩৭

সোমবার সুনাম কুড়িয়েছে পুলিশ। শনিবার সেই সুনাম ধরে রাখার পরীক্ষা।

এ রাজ্যে গত পাঁচ দশকের মধ্যে সোমবারই প্রথম প্রায় সর্বত্র ভূতেদের ভাগিয়ে মানুষ নিজেদের ভোট নিজেরা দিয়েছেন। তার কৃতিত্ব যেমন কেন্দ্রীয় বাহিনীর, তেমনই রাজ্য পুলিশের। শাসক দলের ফরমান ছুড়ে ফেলে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে তারা।

রবিবার, উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার ৪৯টি আসনে ভোটগ্রহণের আগের দিন, রাত থেকেই অধিকাংশ দাদাকে এলাকাছাড়া করে দিয়েছিল পুলিশ। ভোটের দিন দেখা মেলেনি ‘বাবা’-রও (বাইক বাহিনী)। ফলে বুথে বুথে ভূতের উপদ্রব ছিল না। সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছেন নির্বিঘ্নে। আর দিনের শেষে এত দিনের আত্মগ্লানি ঘোচাতে পারার তৃপ্তি ফুটে উঠেছে পুলিশের গলায়। দক্ষিণ কলকাতার এক থানার সাব-ইনস্পেক্টরের কথায়, ‘‘এই সে দিনও রুলিং পার্টির হেঁজিপেঁজি নেতারা আমাদের চমকে গিয়েছে! গায়ে হাত তুললেও কিছু করা যেত না। কিন্তু ২১ তারিখে আমাদের এক বড় সাহেব এক জনের কলার পাকড়েছেন। আর এক সাহেব লাঠি মেরে লোক তাড়িয়েছেন। দেখে ভরসা পাচ্ছি।’’

পঞ্চম দফার ভোটপর্ব মেটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য ভূতেরা ফিরেছে! দিদির গলায়। মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি, বারুইপুর ও ভাঙড়ে পরপর তিনটি সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সিপিএম নেতারা ভোট লুঠ করতে পারেন। সুতরাং তৃণমূল কর্মীরা সাবধান থাকুন। দলীয় কর্মীদের সাহস জোগাতে দিদির পরামর্শ, ‘‘ভয় পাবেন না, ঠান্ডা মাথায় ভোট করুন।’’ ভোটে শাসক দলের দাদা ও ভূতদের নিয়েই নির্বাচন কমিশনের মাথাব্যথা ছিল। তাদের চাপে পুলিশ স্বধর্মে ফিরে দাদাগিরি ঠেকাতেই কাতর সুর দিদির দলে!

তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবারের ভোটের পরে ভীতি ছড়িয়েছে দলের আনাচেকানাচে। দিদি নিজেই এ দিন বলেছেন, ‘‘অনেক ভোট দেখেছি, কিন্তু এমন জুলুম কখনও দেখিনি। ভোটে তাণ্ডব করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়াবাড়ি করছে। সিপিএমের অফিসে লোক থাকছে না বলে আমাদের ক্যাম্প ভেঙে দেবে?’’ দিদি প্রকাশ্যে রাজ্য পুলিশের সমালোচনা করেননি। কিন্তু প্রশাসন সূত্র বলছে, কলকাতা ও বিধাননগরে অবাধ ভোট করিয়ে সব স্তরের মানুষের প্রশংসা কুড়নো কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র এবং বিধাননগর কমিশনারেটের কমিশনার জাভেদ শামিম আপাতত তাঁর চক্ষুশূল। ওই দুই জেলার অন্য পুলিশ আধিকারিকদের ভূমিকাও চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে শাসক দলের নেতাদের কপালে। সপ্তাহখানেক আগে অবধি দিদি যাঁদের ‘আমাদের লোক’ বলে দাবি করছিলেন, দেখা যাচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগই রাতারাতি নির্বাচন কমিশনের আজ্ঞাবাহী অফিসার হয়ে গিয়েছেন। নিরপেক্ষ ভাবে ভোট পরিচালনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন রাজ্য পুলিশের উঁচুতলা থেকে নিচুতলার অধিকাংশ কর্মী ও অফিসার। এমনকী উত্তর চব্বিশ পরগনার এক বিধায়ক সোমবার ভোট চলাকালীন পুলিশ অফিসারদের হুঁশিয়ারি বার্তা দিতে গেলে, তাঁকে পাল্টা হুঁশিয়ার করেছেন রাজ্য পুলিশের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার।

ভোট এখনও বাকি কলকাতার একাংশ-সহ পাঁচ জেলায়। এখন প্রশ্ন হল, বাকি দু’দফাতেও রাজ্য পুলিশের এই শিরদাঁড়ার জোর দেখা যাবে তো?

নির্বাচন কমিশন, নবান্ন ও লালবাজার সূত্র জানাচ্ছে, আগামী শনিবার এবং ৫ মে-র ভোটে আগের দিনের মতো কড়াকড়ি তো থাকবেই, এমনকী আরও বেশি হতে পারে। ৩০ এপ্রিল, ষষ্ঠ দফায় ভোট হবে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হুগলি ও কলকাতার বাকি আসনে। তা নিয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরের কর্তাদের সঙ্গে এ দিন ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। স্থির হয়েছে এই তিন জেলায় যথাক্রমে ২০৮, ১০৯ এবং ৩০৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হবে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় সাড়ে ১১ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। সেই সঙ্গে কলকাতা ও হুগলিতে যথাক্রমে ৬ হাজার ও সাড়ে ৮ হাজার রাজ্য পুলিশ থাকবে। আজ, বুধবার থেকেই এই বাহিনী টহল দেওয়া শুরু করবে।

কমিশনের পাশাপাশি ষষ্ঠ দফার ভোট প্রস্তুতি নিয়ে এ দিন তাঁর অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সৌমেন মিত্র। সেখানে তিনি পই পই মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাহিনী এখন কমিশনের অধীন। তাই নির্বাচনী বিধি হুবহু মেনে চলতে হবে। আগাম সতর্কতা হিসেবে মঙ্গলবারই শহরে শুরু হয়েছে বিশেষ বাহিনীর রাত-টহল। ওই ‘নাইট ইন্টারভেনশন টিম’-এ থানার পুলিশের পাশাপাশি থাকছে আধা সেনাও। প্রতিটি ডিভিশনে পাঁচ-ছ’টি এমন টিম গড়া হয়েছে।

শনিবার ভোট নেওয়া হবে কলকাতা পুলিশ এলাকার ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রে। যার মধ্যে রয়েছে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর ভবানীপুর। ফলে শাসক দলের তরফে পুলিশের ওপর চাপ বেশি থাকারই আশঙ্কা। যদিও লালবাজারের প্রত্যয়ী কর্তারা বলছেন, নজরদারিতে ছেদ তো পড়বেই না, উপরন্তু গত বারের ফাঁকফোকর বুজিয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভোট আয়োজনের পরিকল্পনা হয়েছে। কলকাতায় প্রথম দফা ভোটের আগে অভিযোগ উঠেছিল, বেলেঘাটার মতো নানা জায়গায় শাসক দলের ‘দাদা’রা রাতের আঁধারে পাড়ায় ঢুকে বিরোধীদের চোখ রাঙাচ্ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ বার নৈশ টহলের বন্দোবস্ত। সে দিন কিছু জায়গায় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়হীনতার নালিশও ছিল। তাই এ বার আধা সেনার প্রতিটি দলের সঙ্গে স্থানীয় থানার এক জন অফিসার থাকছেন। এ-ও ঠিক হয়েছে, বন্দর, কসবা-তিলজলার যে সব দাগি এখন বাইরে, আগামী ক’দিন তাদের কলকাতার চৌহদ্দিতে পা রাখতে দেওয়া হবে না। তা ছাড়া বন্দর, তিলজলা-তপসিয়া, কসবা, যাদবপুর, টালিগঞ্জের কিছু ‘দাদা’র উপরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বেচাল দেখলেই তাদেরও ‘তুলে নেওয়া’ হবে।

উপরতলার এই হাবভাবে নিচুতলাও উজ্জীবিত। শাসক দলের সমর্থকদের হামলা থেকে মাথা বাঁচাতে ক’দিন আগে যে পুলিশ টেবিলের তলায় ঢুকেছিল, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ তাদের মনোবল কিছুটা হলেও চাঙ্গা করেছে। দরকারে উর্দির মান বাঁচানোর স্বাধীনতা পাবেন বলেই তারা আশাবাদী। এই আস্থার জায়গাটা টিকিয়ে রাখাই লালবাজারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। জেলা পুলিশের মনোভাবও ভিন্ন নয়। ভোটের দিন আইনের শাসন কায়েম রাখার বার্তা দিচ্ছে তারাও।

আর ‘আমাদের লোকেরা’ এ ভাবে অচেনা হয়ে ওঠাতেই উদ্বেগ বাড়ছে শাসক দলে। বুক ফেটে উঠে আসছে দু’টি নাম, পুলিশ ও ভূত।

assembly election 2016 Sonia gandhi MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy