Advertisement
E-Paper

হাওয়া কোন দিকে, কর্মীকে প্রশ্ন প্রার্থীর

এক জন দলের কর্মী থেকে শুরু করে বুথে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান— সবাইকে অনুরোধ করছিলেন রিগিং যাতে না হয় সেটুকু শুধু দেখতে। অন্য দিকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ শুনে নিজেই বিশ্বাস করলেন না শাসকদলের প্রার্থী।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:২১
যুযুধান। ভালুকবাসা প্রাথমিক স্কুলের বুথে অমিয় পাত্র। (ডান দিকে), কাজের ফাঁকে সিমলাপালে কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা সমীর চক্রবর্তীর। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

যুযুধান। ভালুকবাসা প্রাথমিক স্কুলের বুথে অমিয় পাত্র। (ডান দিকে), কাজের ফাঁকে সিমলাপালে কর্মীদের সঙ্গে আড্ডা সমীর চক্রবর্তীর। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

এক জন দলের কর্মী থেকে শুরু করে বুথে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান— সবাইকে অনুরোধ করছিলেন রিগিং যাতে না হয় সেটুকু শুধু দেখতে। অন্য দিকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ শুনে নিজেই বিশ্বাস করলেন না শাসকদলের প্রার্থী। ভোটের দিন তালড্যাংরা কেন্দ্রের সংক্ষিপ্ত ছবিটা এ রকমই।

সোমবার শ্যাওলা রঙের এসইউভিতে চড়ে দিনভর নিজের বিধানসভা এলাকা চষে বেড়ালেন তালড্যাংরা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী অমিয় পাত্র। বুথের আশেপাশে কর্মীরা বিশেষ ঘেঁষতে না পারলেও, ঘুরে ঘুরে তাঁদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করে গেলেন। ভালুকবাসা গ্রামে পৌঁছে নিজেই বলেন, “তিন চারটি বুথে আমরা এজেন্ট দিতে পারিনি। এমন নয় যে লোক নেই। এজেন্ট ঠিক করেছিলাম। কিন্তু আগের রাতে তাদের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।” একটু থেমে বলেন, ‘‘আমার জেতার দরকার নেই। অন্তত ওরা বেঁচে থাক।” বুথে মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদেরও অনুরোধ করেন, “দেখবেন যাতে ছাপ্পাটা অন্তত না হয়।”

খালগ্রাম, মণ্ডলগ্রাম, ভালুকবাসা, রাঙামেট্যার বিভিন্ন বুথে ঘুরে দুপুরে তালড্যাংরা জোনাল অফিসে এসে থামে অমিয়বাবুর গাড়ি। সেখানে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে খোস গল্পে মজে যান প্রার্থী। সুনীল হাসদা, লক্ষ্মীকান্ত দে, উজ্বল মাঝিদের মতো নেতারা তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, বুথের আশেপাশে জড়ো হচ্ছে শাসকদলের লোকজন। বিচলিত না হয়ে অমিয়বাবুর উত্তর, “গ্রামের রাস্তায় লোক তো থাকবেই। আমাদের আমলেও তো থাকতো।’’ কিন্তু ভোটের আগের রাতে অবাধ মোচ্ছব? কর্মীদের আশ্বস্ত করতে অমিয়বাবু বলেন, ‘‘এক মাস আগে থেকে কাকে ভোট দেবেন, সবাই ঠিক করে ফেলেন। এ সব না ভেবে শুধু রিগিং আটকাও। তা হলেই হবে।’’

লোক লস্কর— কোনও কিছুর অভাব না থাকলেও স্বস্তিতে ছিলেন না তালড্যাংরার তৃণমূল প্রার্থী সমীর ওরফে বুয়া চক্রবর্তী। তালড্যাংরা ব্লকের বিভিন্ন বুথ চষে ফেলে বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ সিমলাপাল হাইস্কুলের সামনে এসে দাঁড়াল তাঁর গাড়ি। সেখানে ক্যাম্প করে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বসেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র। তাঁকে সমীরবাবুর প্রশ্নে, ‘‘বল, ট্রেন্ড কোন দিকে বুঝছিস?’’ চটজলদি উত্তর মিলল, “আপনি জিতছেন। আবার কী!” কিন্তু আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগতে নারাজ সমীরবাবু। বলেন, “ও সব কথা ছাড়। সিপিএমকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। তবে ওদের যে কিছু কমিটেড ভোটার রয়েছে সেটা তো অস্বীকার করতে পারবি না!” উপস্থিত এক কর্মী বলে ওঠেন, “ও সব জানি না দাদা। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। সিপিএম এ বার সাফ হয়ে যাবে।’’ এমন সময় বেজে ওঠে সমীরবাবুর ফোন। অন্য প্রান্তের কথা শুনে ধাতানি দিয়ে ফোন রেখে দিলেন তিনি। ব্যাপারটা কী? সমীরবাবু জানান, হাড়মাসড়ার দিকে কোনও বুথে প্রিসাইডিং অফিসারকে দলে টেনে সিপিএমের এজেন্ট বুথে লোক ঢোকাচ্ছে বলে ফোনে অভিযোগ করছিলেন এক জন। কিন্তু দিনভর নিজের চোখে কেন্দ্রে বুথে বুথে যে ছবিট দেখেছেন, তাতে যুযুধান দলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ স্বয়ং প্রার্থীরই খুব একটা বিশ্বাস হয়নি। তাই ধাতানি। তবে, কিছুক্ষণ পরে জেলা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তীকে ফোন করে ব্যাপারটা একটু খোঁজ নিয়ে দেখতে বললেন শুধু। এর পর সিমলাপাল। সেখানে স্থানীয় নেতা শীতল দে, নিখিল সিংহ মহাপাত্রদের বলেন, “প্রার্থী তোমাদের ইচ্ছে মত সব জায়গায় ঘুরেছে। এ বার তোমরা নিজেদের কাজটা ভাল করে করো।”

সংগঠন শক্তিশালী হলেও শাসক শিবিরের প্রার্থীর কপালে চিন্তার ভাঁজ। আবার সব বুথে এজেন্ট দিতে না পেরেও আত্মবিশ্বাসী সিপিএম প্রার্থী। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ অমিয়বাবুর খাস তালুকে ঘাসফুল ফোটে, না লাল পতাকা ওড়ে সেটাই এখন প্রশ্ন। ভোটারেরাও বলছেন, “দু’টাকা কিলো চাল ও সাইকেল দিলেও অঞ্চল স্তরের নেতাদের দুর্নীতি রুখতে পারেননি দিদি। কাজেই খুব সহজেই তৃণমূল প্রার্থী জিতছেন এটা বলব কী করে?’’

assembly election 2016 west bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy