Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খবর শুনেই বিছানা নিলেন কামারহাটির দাদা

দাদা জেলে। তাই তাঁর ফাঁকা চেয়ারের পাশে বসেই টানা কয়েক মাস ধরে ভোট যুদ্ধের রণনীতি স্থির করেছিলেন ভাইয়েরা। আশা করেছিলেন, যুদ্ধে দাদাই জিতবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ভোট বাক্স খুলতেই কামারহাটিতে দাদার গদি হারানোর বিষয়টা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হতে শুরু করল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:১৩
Share: Save:

দাদা জেলে। তাই তাঁর ফাঁকা চেয়ারের পাশে বসেই টানা কয়েক মাস ধরে ভোট যুদ্ধের রণনীতি স্থির করেছিলেন ভাইয়েরা। আশা করেছিলেন, যুদ্ধে দাদাই জিতবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ভোট বাক্স খুলতেই কামারহাটিতে দাদার গদি হারানোর বিষয়টা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হতে শুরু করল।

এ দিন দলীয় কর্মীদের মতো সকালেই পানিহাটির গুরুনানক ইনস্টিটিউটে পৌঁছে গিয়েছিলেন কামারহাটির তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্রের বড় ছেলে স্বরূপ মিত্র। কিন্তু বেলা বাড়তেই বাবার পরাজয় সম্বন্ধে এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে তিনি বেরিয়ে যান। শেষে দেখা যায়, সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায়ের কাছে ৪১৯৮ ভোটে হেরেছেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী।

কিন্তু দাদার এই হারকে কোনও অঙ্কেই মেলাতে পারছেন না কামারহাটির তৃণমূল কর্মীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘জেলে থেকেও মদনদা এলাকার উন্নয়নের কাজ করেছেন। নিজের অনুপস্থিতির অভাব বুঝতে দেননি। তার পরেও এই হাল হয় কী করে!’’ তবে জেলবন্দি হওয়ার কারণেই হয়তো এই বিপর্যয় ঘটেছে, মেনে নিচ্ছেন কর্মীদেরই একাংশের।

ভোটের প্রচারের প্রথম লগ্ন থেকেই সিপিএম দাবি করেছিল, এ বার যেন ভোটদাতারা জেলবন্দি প্রার্থীকে না জেতান। যদি কোনও ভাবে তিনি জিতে যান তা হলে নাগরিকদের সাধারণ একটা শংসাপত্র নিতেও জেলে ছুটতে হবে। তাই তাঁকে ভোট দেওয়ার আগে যেন ভোটাররা ভাবনা চিন্তা করেন। স্রেফ বিরোধীদের এই প্রচারই মদনকে পরাজিত করেছে বলেই মনে করছেন অনেকেই।

স্থানীয় তৃণমূল সূত্রের খবর, যে সমস্ত মানুষ হাওয়া বুঝে ভোট দেন, তাঁরা বিরোধী-প্রচারে প্রভাবিত হয়েই নিজেদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। এক নেতার কথায়, ‘‘মানুষ হয়তো ভেবেছে, জেলবন্দি বিধায়ককে দিয়ে এলাকার উন্নয়ন করা যাবে না।’’ পুরসভা ভোটে কামারহাটির প্রতিটি ওয়ার্ডে যে মার্জিন তৃণমূল পেয়েছিল তা অনেকটাই কমেছে। কমেছে সংখ্যালঘু ভোটও। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ১ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডেও মদনের বেশ কিছু ভোট কেটেছে সিপিএম। তবে এ দিন জয়ের পরেও কামারহাটিতে সিপিএম কর্মীদের মধ্যে তেমন উন্মাদনা দেখা যায়নি।

এ দিন নিজের পরাজয়ের খবর পাওয়ার পরেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন মদন। এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা জানান, কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরেও বুধবার রাতে তাঁর একেবারেই ঘুম হয়নি। বৃহস্পতিবারও সকাল থেকেই তিনি ছিলেন যথেষ্ট গম্ভীর। তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই চিকিৎসক সকাল থেকেই তাঁর পাশে পাশে ছিলেন। মোবাইলে তাঁরাই ভোটের ফলাফলের সমস্ত খবর জেনে মদনকে বলছিলেন। গোড়ায় এগিয়ে থাকার কথা জেনে উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলেন। পিছিয়ে পড়ার খবর পেয়েই শুয়ে পড়েন। বহু চেষ্টা করেও তাঁকে ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করানো যায়নি। দুপুর ১টা নাগাদ দুই সিনিয়র চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে যান। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এ দিন প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর তাঁর রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয়েছে। শুক্রবার তাঁর আরও কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা হবে। সকালে মনোবিদেরও আসার কথা আছে।

নিজের জয়ের সম্বন্ধে যেমন আশাবাদী ছিলেন মদন, তেমন তিনি বারবারই বলতেন, এ বার তাঁর দল অন্তত ২০০টি আসন পাবে। এ দিন একটি কথা হুবহু মিলে গেলেও আরেকটি দূর অস্ত্ থেকে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE