Advertisement
০৩ মে ২০২৪

চোর ভাবলে দেবেন না ভোট, বলে ফেললেন দিদি

চার দফা পেরিয়ে ভোট এগোচ্ছে শেষের দিকে। আর তাঁর মাথায় ঘুরছে একটাই শব্দ। চোর! সারদা থেকে নারদ যত তাড়া করে বেড়াচ্ছে শাসক দলকে, তত সুর পড়ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরে সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শহরে সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৪৩
Share: Save:

চার দফা পেরিয়ে ভোট এগোচ্ছে শেষের দিকে। আর তাঁর মাথায় ঘুরছে একটাই শব্দ। চোর!

সারদা থেকে নারদ যত তাড়া করে বেড়াচ্ছে শাসক দলকে, তত সুর পড়ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বিরোধীরা এ বার একটাই মূল স্লোগানে বেঁধে ফেলেছে ভোটের প্রচারকে— ‘চোরেদের সরকার, আর নেই দরকার’! জবাব দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সেই প্রাণপণ চেষ্টাতেই বেরিয়ে পড়ছে আরও বেফাঁস স্বীকারোক্তি!

যাদবপুর কেন্দ্রের মধ্যে পাটুলিতে প্রচার-সভায় গিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় যেমন দিদি বলেই ফেললেন, ‘‘যদি মনে করেন আমি চোর, ভোট দেবেন না! চাই না! মানুষ না চাইলে থাকব না!’’ যাদবপুরের প্রার্থী মণীশ গুপ্তের জন্য ভোট চাইতে গিয়ে আরও বললেন, ‘‘মণীশদা’কে তো ভোটটা দেওয়া যায়। মণীশদা তো চোর নয়!’’ ঠিক যে ভাবে বাঁকুড়ার ওন্দায় অরূপ খাঁকে দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওকে ভোট দিন। ও তো চোর নয়!’’

কেউ কেউ বলছেন, নিজেকে সততার প্রতীক বলে চিরকাল জাহির করে আসা দিদির এ বার প্রবল অভিমান হয়েছে! বিরোধীরা সবাই সমস্বরে চোর, চোর বলে চিৎকার জুড়েছে। অভিমানটা তাই এ বার প্রকাশ্য মঞ্চেই বেরিয়ে আসছে। আর বিরোধীদের কটাক্ষ, তৃণমূলে এখন দু’রকমের লোক দেখছেন স্বয়ং দলনেত্রীই। হয় চোর, নয়তো চোর নয়! কারণ এই মমতাই কয়েক দিন আগে কলকাতায় বলেছিলেন, ভোটের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার আগে নারদ-কাণ্ড প্রকাশ্যে এলে তিনি ভেবে দেখতেন। তার মানে তিনি মনে করেন, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্রেরা চুরি করে থাকতেও পারেন!

যদিও শাসক দলের একাংশের আবার ব্যাখ্যা, রক্ষণাত্মক সুর হলেও আসলে জেনেশুনেই ঝুঁকি নিয়েছেন মমতা। যে ভাবে তিনি বলে আসছেন ২৯৪টা আসনেই তিনি প্রার্থী, সে ভাবেই ভোটের শেষ পর্ব পার করতে নিজেকেই বাজি রাখছেন তিনি। হতে পারে নারদের ফুটেজে দলের সাংসদ-বিধায়কদের দেখা গিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর ছবি তো নেই! তাই নিজের ঘাড়ে বন্দুক রেখেই বৈতরণী পার হতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তাঁর এ দিনের মন্তব্য শুনে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলছেন, ‘‘চোর মনে করলে ভোট দেবেন না বলছেন। আবার তাঁর ৩৪ বছরের লড়াইয়ের কথাও মনে করাতে হচ্ছে! তার মানে খুব ভয় পেয়েছেন! বুঝেছেন, ইতিবাচক ভোট আর হবে না। সেই ৩৪ বছর তুলে নেতিবাচক ভোট টানার চেষ্টা করতে হবে!’’ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘মনে অপরাধবোধ হয়তো চেপে বসছে! তাই নানা কথা বেরিয়ে যাচ্ছে!’’

মমতা নিজেও অবশ্য এই বিপদের কথা জানেন। তাই রক্ষণাত্মক সুরের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস দেখাতে চেষ্টা করছেন। পাটুলির ওই সভাতেই বলেছেন, ‘‘আজ পর্যন্ত যা ভোট হয়েছে, তাতে সরকার গড়ে ফেলব। বাকি দু’দফায় প্লাস হবে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর আবেদন, ‘‘যাদবপুরের মানুষকে হাতজোড় করে বলছি। খুনিদের আর ফেরাবেন না! ফেরাবেন না নরকঙ্কালের ব্যাপারীদের!’’

চাপের মুখেই দিদি-মোদী আঁতাঁত নিয়েও বিরোধীদের প্রচারের পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মমতা। নিজের কেন্দ্র ভবানীপুরের কলিন্স স্ট্রিটে এ দিন এক পথসভায় তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম সব এক! মোদী যা বলেন, সীতা (সীতারাম ইয়েচুরি) তা-ই বলেন। আর সীতা যা বলেন, সনিয়াজি তা-ই বলেন।’’

সারদা থেকে নারদ-কাণ্ডের তদন্তে মোদী সরকারের টালবাহানা এবং‌ একদা বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারে মমতার যোগদানকে সামনে রেখে বিরোধীরা ‘মোদী-দিদি’র সম্পর্ক নিয়ে সরব। মূলত সংখ্যালঘু অধ্যূষিত কলিন্স স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে সেই প্রেক্ষিতেই মমতা এ দিন বহু পুরনো প্রসঙ্গ টেনে এনে ব্যাখ্যা দেন, ‘‘আমি বিজেপিকে সমর্থন করে এনডিএ-তে যোগ দিইনি। বেঙ্গল প্যাকেজ আদায়ের জন্য আমি বাজপেয়ীজিকে (অটলবিহারী বাজপেয়ী) সমর্থন করেছিলাম।’’ তিনি যে কট্টর বিজেপি-বিরোধী, তা বোঝাতে পাকিস্তানের গজল গায়ক গুলাম আলিকে এনে অনুষ্ঠান বা কলকাতায় ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের কথা উল্লেখ করেছেন মমতা।

কলিন্স স্ট্রিট থেকে শেক্সপীয়র সরণিতে রানা প্রতাপ উদ্যানে অবাঙালি ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছে প্রচারে গিয়েছিলেন মমতা। ওই সভায় সি কে ধনুকা, উৎসব পারেখ প্রমুখ ছিলেন। সেখানে তৃণমূল
নেত্রী বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যের পরম্পরা সবাই একসঙ্গে কাজ করে, বাস করে। আপনারা আমাদের থেকেও বেশি বাঙালি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE