অবশেষে বসন্ত ঘুম কাটিয়ে সামান্য নড়েচড়ে বসল লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বাধীন লোকসভার নীতি (এথিক্স) কমিটি! তবে সেই সঙ্গে এই প্রশ্নটিও তৈরি হল, ঘুমের রেশ কাটিয়ে তদন্তের অন্তিমে পৌঁছতে গতিমন্থরতা আদৌ কাটবে কিনা। কমিটির অন্যতম সদস্য ভর্তুহরি মহতাব আজ জানালেন, গোটা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে তদন্তের ‘প্রাথমিক প্রক্রিয়া’ শুরু হয়েছে মাত্র। কমিটির সদস্যরা এই নিয়ে প্রথম বৈঠকটিই কবে করবেন তার কোনও তারিখ এখনও স্থির হয়নি।
নারদা-কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বভার পাওয়ার প্রায় একপক্ষ কাল পর আজ নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের কাছে ফুটেজ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। স্যামুয়েল জানিয়েছেন, নীতি কমিটির সচিবালয় থেকে ফোন করে তাঁর কাছে মূল সিডি-টি (অসম্পাদিত) চাওয়া হয়েছে। তাঁর ঠিকানাও জেনে নিয়েছে সচিবালয়। বলা হয়েছে যে শীঘ্রই এই ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক চিঠি যাবে। স্যামুয়েলের কথায়, ‘‘আমার ফুটেজ তৈরি রয়েছে। সরকারিভাবে চিঠি পেলেই গিয়ে যাবতীয় নথি দিয়ে আসব।’’
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে এই ফুটেজ নিয়ে কবে বসছে নীতি কমিটির বৈঠক? খুব শীঘ্রই যে বসার কোনও সম্ভাবনা নেই এমন ইঙ্গিতই দিলেন বিজু জনতা দলের লোকসভার নেতা ভর্তুহরি মহতাব। তাঁর কথায়, ‘‘এখনই কোনও বৈঠক ডাকা হয়নি। তদন্তের একেবারে প্রাথমিক ধাপ শুরু হয়েছে। নিয়ম হল, সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়া নথি ও তথ্যাদি সংগ্রহ করবে কমিটির সচিবালয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কাছে গোটা বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। অভিযোগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা খতিয়ে দেখা হবে। তারপরে কমিটির সদস্যের কাছে গোটা বিষয়টি পেশ করা হবে।’’
নীতি কমিটির পাশাপাশি রাজ্যসভার সচিবালয় থেকেও তাঁর কাছে সিডি’টি চাওয়া হয়েছে বলে আজ জানিয়েছেন স্যামুয়েল। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, রাজ্যসভার নীতি কমিটিতে কিন্তু এখনও বিষয়টি পাঠানোর কোনও সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন তাঁকে রাজ্যসভার অফিস ফোন করল? স্যামুয়েল জানাচ্ছেন যে, তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্যসভার অধিবেশন চলাকালীন সিডি প্রকাশের পর কিছু অভিযোগ এনেছিলেন। ডেরেক বলেছিলেন, নারদ-অর্থের সঙ্গে দুবাইয়ের যোগ রয়েছে। স্যামুয়েলের ফোন থেকে বারবার দুবাইয়ের নম্বরে যোগাযোগ করা হয়েছে এমন অভিযোগও তুলেছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার ওই নেতা। এরপর পাল্টা অভিযোগ জানিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি লেখেন স্যামুয়েল। সেই সূত্রেই তাঁর কাছে সিডি’টি চাওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। রাজ্যসভা সূত্রে অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক এবং আলোচনা শুরু হওয়ার পরই বিজেপি কিছুটা লোকদেখানো ভাবে হলেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর তাই এই সিডি তলব? সম্প্রতি প্রশ্ন উঠছিল, এথিক্স কমিটিতে পাঠানোর অর্থ কি তদন্তকে ঠান্ডা ঘরে ঠেলে দেওয়া? কেননা উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেস সরকারের বিধায়ক কেনাবেচা নিয়ে ঘুষ কাণ্ডের একটি সিডি প্রকাশিত হওয়ার পরই বিদ্যুৎ গতিতে পদক্ষেপ করেছিল কেন্দ্র। এ ক্ষেত্রে তার ছিঁটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে সিপিএম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে উঠছে বিজেপি-তৃণমূল ম্যাচ ফিক্সিং-এর অভিযোগ।
তদন্তে কতটা ঐকান্তিক কমিটি, কিছুদিনের মধ্যেই তা স্পষ্ট হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy