সেই ফেস্টুন। —নিজস্ব চিত্র
রাস্তাটা দেখিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর দল। বলা হয়েছিল— বিজেপির প্রার্থী হতে চাইলে নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে ‘মিসড কল’ দিলেই হবে।
এখন যখন তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ‘গোপন আঁতাঁত’ নিয়ে জল্পনা ক্রমশ হাওয়া পাচ্ছে, তখন প্রচারের জন্য বিজেপির ফেলে আসা সেই রাস্তাই নিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কৃষ্ণনগর (দক্ষিণ) কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী উজ্জ্বল বিশ্বাস।
গত সপ্তাহ দুয়েক ধরে ফ্লেক্স আর লিফলেট ছেয়ে ফেলেছে গোটা এলাকা। তাতে বড় বড় করে লেখা— ‘মাননীয় মন্ত্রী শ্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস মহাশয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য মিসড কল করুন’। এক দিকে দলনেত্রীর মুখ, অন্য দিকে প্রার্থীর। নীচে মোবাইল নম্বর।
কী হচ্ছে মিস্ড কল করলে?
কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য একটি নম্বর থেকে আসছে উজ্জ্বল-কন্ঠে ভয়েস এসএমএস— “আমি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলছি। আপনি ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। শীঘ্রই আপনার সঙ্গে দেখা করছি।” গত দু’দিন ধরে জবাবি ফোনে সরাসরি ভোট চেয়ে ভয়েস এসএমএস-ও আসছে। উজ্জ্বল-কণ্ঠ বলছে— ‘‘আমিই সেই উজ্জ্বল বিশ্বাস। …আমার লক্ষ্য মানুষের উন্নয়ন, মানুষের বিকাশ। উন্নয়নের লক্ষ্যে ২১ এপ্রিল শপথ নিন, জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দিন।’’
যা দেখে-শুনে মুচকি হাসছেন সিপিএম নেতারা। তাঁদের কটাক্ষ, সোজা রাস্তায় জিততে পারবে না বুঝে তৃণমূল তো বিজেপির সঙ্গে তলায়-তলায় আঁতাঁত রয়েছে। তার প্রভাব পড়ছে প্রচারেও। সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সদস্য সুমিত বিশ্বাস বলেন, “দেশের শাসকেরা যেমন শেখাচ্ছে, রাজ্যের শাসকেরা সেই ছকেই চলছে। গভীর বন্ধুত্ব কি না!’’
মিস্ড কলে সদস্য হওয়ার দরজা খুলে বিজেপি বিশেষ সুবিধে করতে পারেনি। তবু টিপ্পনী কাটতে ছাড়ছেন না বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা কৃষ্ণনগর (দক্ষিণ) বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী মহাদেব সরকারও— ‘‘পাঁচ বছর মন্ত্রী থাকাকালীন মানুষের কথা ওঁর মনে পড়ল না! এখন ভোট আসতেই সরাসরি যোগাযোগ করার কথা মনে পড়েছে।” মহাদেবের মতে, “আসলে ওঁর জনসংযোগ নেই। তাই আমাদের পন্থা অনুকরণ করে মিসড কলের রাস্তা ধরেছেন।’’
উজ্জ্বল অবশ্য দাবি করছেন, “সকলের সঙ্গেই নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে আমার। তবু ভোটের প্রচারে প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ক্ষতি কী?’’ বিজেপির পদাঙ্ক অনুসরণ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই প্রযুক্তি তো বিজেপি তৈরি করেনি! আমরা সদস্য সংগ্রহও করছি না। ফলে কাউকে অনুকরণ করার প্রশ্নই নেই।”
কেমন সাড়া পাচ্ছেন মিস্ড কলে?
উজ্বলের দাবি, “গত ১৫ দিনে প্রায় ৪০ হাজার নম্বর থেকে মিসড কল পেয়েছি। ভয়েস এসএমএসে উত্তরও পাঠিয়েছি। আগামী দিনে সেই সব মোবাইল নম্বর ধরে-ধরে সরাসরি কথাও বলব।”
গাঁটের কড়ি কত খসছে?
‘‘আপাতত পঁচিশ হাজার দিয়েছি। আমার ধারণা, লাখখানেক টাকা খরচ হবে’’— সাবধানী মন্তব্য উজ্জ্বলের।
প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিন্দেমন্দ করলেও নিজেরা কিন্তু ভোটের প্রচারে প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই সিপিএম। এক সময়ে যাঁরা দেশে কম্পিউটার ঢোকার বিরোধিতায় আসমান-জমিন এক করে ফেলেছিলেন, তাঁদের ছানাপোনা ভাইপো-ভাতিজারাই এখন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে প্রচার চালাতে ব্যস্ত। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে আলিমুদ্দিন থেকেও না কি এসএমএস এবং ভয়েস এমএমএস আসার কথা শোনা যাচ্ছে কানাঘুষোয়।
উজ্জ্বলের প্রচারে বিজেপির ছায়া দেখছেন সিপিএমের যে সুমিত, তিনি নিজেও মানছেন, এটা কথার কথা নয়। তবে তাঁর যুক্তি, ‘‘আমরা তো বিজেপি বা তৃণমূলের মতো টাকা উড়িয়ে ভোট করি না। দলের কর্মীরা ব্যক্তিগত ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা হোয়াটসঅ্যাপে প্রচার চালাচ্ছেন। জেলায় দলের সব প্রার্থীর নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেও ভোটের প্রচার করা হচ্ছে।’’
জনতা কী বলছে?
আপাতত যে পারছে সে-ই ফ্লেক্সে দেখা নম্বরে এক বার রিং করে শুনে নিচ্ছে উজ্জ্বল-আর্জি। শুনলেই ভোট দিতে হবে, এমন তো কথা নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy