ইলামবাজারের গ্রামে প্রচারে জোট প্রার্থী তপন হোড়।
রোদ যত চড়ছে, ভিড় যেন তত-ই বাড়ছে! দীর্ঘ হয়েছে মিছিল।
টুকটুকে লাল নিশানে ফের ঢাকছে ইলামবাজার। পাঁচ বছর বড় দীর্ঘ মেয়াদ হলেও, উঠোনে চেনা নেতাকে দেখে খুশি এলাকার গাঁ-ঘর।
নেতা? নেতা মানে, বোলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী তপন হোড়। রবিবার ইলামবাজারের ধরমপুর পঞ্চায়েতের উপর দেলোরা, শিহালাই, নান্দার, গোপীনাথপুর, আকোনা প্রভৃতি এলাকায় তাঁর প্রচার কর্মসূচি ছিল। আর তপনবাবুর প্রচার কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল এলাকার দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।
এ দিন দুপুরে ৩৫ ডিগ্রী ছুঁইছুঁই তাপ মাথায় নিয়েই বহু দিন পরে লাল নিশান নিয়ে পথে নেমেছেন পশ্চিমপাড়ার হাসিবা বিবি, কুবেরা বিবি ও আমেরা বিবি এবং উত্তরপাড়ার সালেহার বিবি, মহুলি পাড়ার লক্ষ্মী সরেনরা। ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্বাধীন ভাবে কোনও কাজকর্ম করা বা অন্যের সুখ দুঃখে সামিল হওয়া তো অনেক দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমাদের। আর বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তাই বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী নিরাপত্তা জুগিয়ে দেওয়া এবং উপযুক্ত ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা বলায় স্বস্তি মিলেছে।’’ বলছিলেন স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র বসির আহমেদ এবং শেখ সফিকুল্লারা।
এলাকার সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা বলছিলেন গত পাঁচ বছরের কথা। ২০১১ সালের সেই বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর এলাকায় তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দলের হয়ে পরিচিতি কার্যত অপরাধীর সমান হচ্ছিল। দলীয় কর্মসূচী তো অনেক দূরের ব্যাপার, অন্য দলের কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় মাথা তুলে হাঁটা এক রকমের দায় হয়ে পড়েছিল। এক সমর্থকের কথায়, ‘‘সন্ত্রাস আর ভয়ের আবহে তাই এত দিন মুখ বুজে থাকতে হয়েছে। কিন্তু সেই পরিবেশ আর নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়েছে।’’
চেনা নেতাকে দেখেই ভিড় ভোট-প্রচারের মিছিলে। এ দিন উপরদেলোরা থেকে শুরু করে আশেপাশের প্রায় ৮৩৫ কাছাকাছি ভোটারের এলাকা ঘুরে প্রচার করেন জোট প্রার্থী আর এস পি নেতা তপনবাবু। তপনবাবুকে কাছে পেয়ে কেউ ক্ষোভের কথা জানান। প্রার্থীর কাছে অভয় পেয়ে কেউ আবার সপরিবারে এলাকার প্রচারে নামেন। উল্লেখ্য, লোকসভা ভোটের সময়ে কোনও প্রচার কর্মসূচি ছাড়াই এই ধরমপুর পঞ্চায়েতের নান্দার সংসদ এলাকার নামো দেলোরা, গোপীনাথপুর, নৃপতি গ্রামের প্রত্যেক বুথে শতাধিক ভোটে এগিয়ে ছিলেন বামফ্রন্টের প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম। বিধানসভা ভোটে রাজ্যে পরিবর্তনের সরকার আসার পর পঞ্চায়েতে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলে তৃণমূল বিরোধী দলগুলি। কিন্তু গত পাঁচ বছরের বেশি দিন ধরে এই এলাকায় বামেরা দলীয় কোনও কর্মসূচি করতে পারেনি।
ঘড়ি তখন দুপুরের দিকে।
তপনবাবু আদিবাসী পাড়া হয়ে ঢুকে পড়লেন মুহুলিপাড়ায়। উঠোনে বসে ছিলেন নিয়তি সরেন। পাশেই পড়শি লক্ষ্মী সরেন। বছর পাঁচেক আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। কুশল জিজ্ঞেস করতেই চিনতে পেরে উঠে দাঁড়ালেন নিয়তি-লক্ষ্মী। স্বামী হারানোর কথা বলছিলেন লক্ষ্মী। বলতে বলতেই চোখের কোণ চিকচিক। একমাত্র মেয়েকেও হারিয়েছেন। তপনবাবু ভাতার কথা জিজ্ঞেস করছিলেন। কথায় কথায় ভিড় জমে গেল। পুরনো মুখ দেখে তপনবাবু ব্যক্তিগত খবরা-খবর নিচ্ছিলেন। তপনবাবুকে দেখেই অনেকে ঘরের কোণ থেকে লাল নিশান টেনে নিয়ে পথে নামেন।
প্রচারের ফাঁকে তপনবাবু বলেন, ‘‘সন্ত্রাস এবং ভয়ের বাতাবরণের কারণে রাজ্য জুড়ে নিরপরাধ মানুষ সমস্যায় রয়েছেন। কিন্তু এ বার মানুষ বুঝতে পারছেন। শাসকও বুঝতে পারছে সন্ত্রাস আর ভয় দেখিয়ে আর যাই হোক মানুষের আস্থা অর্জন করা যায় না।’’ প্রচারে নেমে তপনবাবু গ্রামের মানুষকে নারদ কাণ্ডে তৃণমূল সরকারের মুখ আর মুখোশের কথাও তুলে ধরেন। দিনভর কোথাও ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে এলাকার মানুষজন এবং ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছেন। আবার কোথাও কার্যত দরবারের কায়দায় এলাকার বাসিন্দা, দলীয় কর্মী-সমর্থক ভোটারদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ, আপত্তি ও অভিযোগ শুনছেন। চড়া রোদ মাথায় নিয়েই নিজের দলের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন মণ্ডল, ওই অঞ্চলের সম্পাদক আবুল হোসেন, সিপিএমের জোনাল কমিটি সম্পাদক অন্নপূর্ণা মুখোপাধ্যায়, জেলা কমিটি সদস্য মহম্মদ কামালুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে শতাধিক জোট কর্মী-সমর্থকদের মিছিলে পা মেলান চার বারের বিধায়ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy