তিনি নির্বাচনী প্রচারের সূচনা করেছেন জঙ্গলমহলের জেলাগুলো থেকে। সভা থেকে একের পর এক বিজেপি-র বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে বিজেপি-কে শূন্য করে দেওয়ার ডাক দিয়েছেন জনসভাগুলো থেকে। শুধু তাই নয়, বিজেপি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন বার বার। লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের কয়েকটি জেলা থেকে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এ বার সেই জঙ্গলমহলে নিজেদের সর্বশক্তি উজাড় করে দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তারা। খোদ মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক জনসভা করছেন জঙ্গলমহলের জেলাগুলোতে।
বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা, কেশিয়াড়ি এবং কলাইকুণ্ডায় সভা করেন মমতা। শেষ সভা ছিল কলাইকুণ্ডায়। সেখান থেকে তিনি বিজেপি-র বিরুদ্ধে তোপ দাগেন, “বাংলায় জিতলেই দিল্লিতে ঝাঁপাব। দিল্লিছাড়া করে ছাড়ব।” শুক্রবারও তাঁর সভা রয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পর শুক্রবার মমতার সভা রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, পটাশপুর এবং মেচেদায়।
এগরার জনসভা থেকে কী বলছেন মমতা—
• যদি কেউ মনে করে কিছু গদ্দার নিয়ে এসে তারা মানুষের উপর অত্যাচার করবে। অনেক সহ্য করেছি। অনেক অন্ধ ভালবাসা দিয়েছি। তার পরিণামে ওরা যা আমায় দিয়েছে, জেনে রাখুন আমি এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না।
• ওরা মুখে বলে হরি হরি, আর পিছনে ডাকাতি করি। বাংলা ওদের জায়গা নয়।
• বিজেপি যদি আসে চোটের থেকেও বড় আঘাত। আমার মা-বোনেরা কেউ ঘরবাড়িতে থাকতে পারবে না। ওদের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাতে হবে।
• আমাকে আগেও সিপিএম মেরেছে। আমার এই দুটো হাত ভাঙা। আমার কোমরে, পেটে, চোখে মেরেছে। পা-টা শুধু বাকি ছিল। নির্বাচন সামনে। ভাবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেরোতে দেব না। পা-টা চোট করে দিই।
• নরেন্দ্র মোদীর সরকার, মনে রাখবেন, একটা দাঙ্গাবাজ সরকার, একটা ইনকপিটেন্ট সরকার, একটা করাপেটড সরকার। লুঠ, দাঙ্গা, মানুষ খুন, বিজেপি-র তিনটে গুণ। তাই ওদের একটা ভোটও নয়।
• ওরা দাঙ্গা করে, ওরা দুর্নীতি করে। ৫০০ টাকা চুরি করলে ওটা চোখে দেখা যায়। আর লক্ষ লক্ষ টাকা চুরি করলে সেটা চোখে দেখা যায় না। ওটা ভ্যানিশ হয়ে যায়।
• বিজেপি-কে জিজ্ঞাসা করুন আপনাদের দলে মহিলারা সুরক্ষিত। কত মা-বোনেদের কত অভিযোগ আছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে।
• মনে রাখবেন যাঁরা গদ্দার, মিরজাফর তাঁরা আজকে বিজেপি-র প্রার্থী। বিজেপি-র পুরনো প্রার্থীরা আজ ঘরে বসে কাঁদছে। আর কিছু সিপিএমের হার্মাদ, আর কিছু তৃণমূল থেকে চোর-চোরটা চিটিংবাজ কয়েকটা গিয়েছে, এখানে গিয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে।
• শিক্ষকদের সংখ্যা দ্বিগুণ বাড়ানো হবে। চাকরি নিয়ে অনেকে আগে গদ্দারি করেছে। চিন্তা করবেন না, এ বার কাজকর্ম সরাসরি হবে। কারও মাধ্যমে হবে না।
• আগামী দিনে আরও ২৫ লক্ষ গরিব লোককে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে।
• দিঘাতে কনভেনশন সেন্টার করে দিয়েছি। ইকো ট্যুরিজম করে দিয়েছি। জগন্নাথের মন্দির হবে বলে দিয়েছি।
• আগামী দিন দিঘায় তাজপুরে বন্দর তৈরি করে দিচ্ছি। এই বন্দর হলে কয়েক লক্ষ বেকার ছেলেমেয়েরা সুযোগ পাবেন।
• ছোট শিল্পের জন্য বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করব। ৫ বছরে ৫ লক্ষ কোটি টাকা। লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়র চাকরি হবে।
• মা বাবাদের আগে চিন্তা করতে হত মেয়েদের বিয়ের জন্য। আখন আমরা মেয়েদের ১৮ বছর হলে কন্যাশ্রী করলেই ২৫ হাজার টাকা দিই আমরা। রূপশ্রীতেও ২৫ হাজার টাকা পায়। এ বার আমরা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বছরে ১০ লক্ষ টাকার অ্যাকাউন্ট করে দেব। মাত্র ৪ শতাংশ সুদের হারে। বাবা-মাকে তাঁর পড়াশোনার খরচ চালাতে হবে না।
• পড়ুয়ারা উঁচু ক্লাসে যখন উঠবেন ১০ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। নবম শ্রেণিতে উঠলে সবজু সাথীর সাইকেল পাবে পড়ুয়ারা প্রতি বছর।
• সব মহিলাদের ৫০০ টাকা করে হাতখরচ দেবে আমাদের সরকার। ক্ষমতায় এলে মহিলাদের জন্য এই প্রকল্প চালু করব।
• কৃষকরা এখন ৬০০০ টাকা করে পাচ্ছেন বছরে। আমাদের সরকার এলে তা ১০ হাজার টাকা দেব।
• অনেক মৎস্যজীবী আছেন। তাঁদের কার্ড আমি প্রথম করে দিয়েছি।
• কৃষকদের জমির খাজনা মকুব করা হয়েছে।
• রেশন পাচ্ছেন বিনা পয়সায়। আমরা রেশন পৌঁছে দেব আপনার বাড়িতে।
• আপনাদের কারও কাছে যেতে হবে না। দুয়ারে সরকার আপনাদের কাছে আসবে। বাইরে যাওয়ার দরকার নেই।
• আমাকে অনেকে বলেছিল, তুমি নন্দীগ্রাম থেকে লড়ছ। অনেক দূর যেতে হবে। আমি বললাম বাংলাটাই আমরা নিজের ঘর।