Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মমতা হাঁটলেন, দৌড়লেন বাকিরা

শহরবাসী জানতেন পদযাত্রা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কার্যকালে ব্যাপারটা প্রায় ম্যারাথন দৌড় হয়ে উঠল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের দম ফুরিয়ে যাওয়ার জোগাড়।

গলদঘর্ম নেতা-কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র

গলদঘর্ম নেতা-কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৬
Share: Save:

শহরবাসী জানতেন পদযাত্রা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কার্যকালে ব্যাপারটা প্রায় ম্যারাথন দৌড় হয়ে উঠল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের দম ফুরিয়ে যাওয়ার জোগাড়।

রবিবার সকাল থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রা ঘিরে বাঁকুড়া শহরে ছিল সাজো সাজো রব। লালবাজারের হিন্দু স্কুলের মাঠ থেকে পাঁচবাগা মোড় পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাঁটার কথা। সেই রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকেই মাইকে প্রচারের গান বাজাচ্ছিলেন দলের তৃণমূল কর্মীরা। দুপুর থেকেই বাস এবং গাড়িতে দলীয় কর্মীরা এসে সতীঘাট বাইপাস এলাকায় জড়ো হচ্ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে এলাকার মানুষও ভিড় করতে শুরু করেন।

ওন্দার জনসভা শেষ করে সওয়া ৪টে নাগাদ হিন্দুস্কুলের হেলিপ্যাডে নামে মুখ্যমন্ত্রীর চপার। অরূপ চক্রবর্তী, সৌমিত্র খাঁ, মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত, শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ স্থানীয় নেতারা নেত্রীর সঙ্গে হাঁটার জন্য পা বাড়িয়েই ছিলেন। সঙ্গে ছিল বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রায় ১৫ হাজার কর্মী-সমর্থকও। চপার থেকে নেমেই সটান হাঁটতে শুরু করেন মমতা। প্রথম থেকেই দ্রুত গতিতে। স্থানীয় নেতারা তাঁর পিছনে হাতে-হাতে ব্যারিকেড করে এগোতে থাকেন। পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনের সঙ্গে কখনও হাত মেলান নেত্রী। কখনও হাত নাড়েন। পুরো সময়টাই তাঁর মুখে লেগেছিল হাসি। কিন্তু এতটা পথ পেরোতে গিয়ে ক্রমশ মুখের হাসি মিইয়ে গেছে তাঁর পাশে থাকা তাবড় নেতাদের।

মিছিল শুরু হওয়ার পর ভিড় সামলাতে কার্যত হিমসিম খাচ্ছিলেন আইজি (পশিমাঞ্চল) জ্ঞানবন্ত সিং, জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার সবরি রাজকুমার কে-র মত জাঁদরেল পুলিশ কর্তারা। লালবাজার এলাকায় তাঁদের চোখ এড়িয়ে ব্যারিকেড টপকে কয়েক জন ঢুকে পড়েন। দৌড়ে গিয়ে স্বয়ং আইজি তাঁদের অন্য পারে ফেরান। মাচানতলা মোড়ে ফের দুই বয়স্ক মহিলা ব্যারিকেড পেরিয়ে নেত্রীর সামনে চলে এসে তাঁকে প্রণাম করে বসেন। নেত্রী জি়জ্ঞাসা করেন, ‘‘সব ঠিক আছে তো?” দুই বৃদ্ধা বলেন, “জল পাচ্ছি না।” শুনেই পাশে দাঁড়ানো অরূপ চক্রবর্তীর দিকে ফেরেন নেত্রী। কাঁচুমাচু অরূপবাবু বলেন, ‘‘জল আসছে। কিন্তু খুবই নোংরা। তাই আমরা দিতে পারছি না। কিছু দিন পরেই ঠিক হয়ে যাবে।’’ নেত্রী নির্দেশ দেন, ‘‘এই সমস্যার কথা সাধারণ মানুষকে জানাও।” মিছিল এগোয়। চার্চমোড়ের সামনে এসে নেত্রীর পিছনে থাকা নেতাদের প্রায় জগিং করার ঢঙে ছুটতে দেখা গেল। গরমে ঘেমে নেয়ে একসা সবাই। কারো চশমার কাচ বাস্প জমে আবছা হয়ে গিয়েছে। তাঁদের অবস্থা দেখে নেত্রী হেসে বলেন, “তোরা সাবধানে হাঁট। ধাক্কা মেরে আমায় ফেলে দিস না যেন।” এই অবস্থায় নতুন চটি এলাকায় পৌঁচে মহাপ্রসাদবাবুকে হঠাৎ ছুটতে দেখা গেল। জিজ্ঞাসা করায় বলেন, ‘‘সামনে পুষ্প বৃষ্টি করার কথা। দিদি শুনে বারণ করলেন। কর্মীদের সেটাই বলতে যাচ্ছি।’’

শাসকদলের নেতাদের এই অবস্থা দেখে ভিড়ের মধ্যে অনেকে বলতে শোনা গিয়েছে, “দিদির অভ্যাস আছে। কিন্তু গাড়িতে চড়ে ভাইয়েরা সবাই অভ্যাস খারাপ করে ফেলেছেন।’’ এ দিন নেত্রীর সঙ্গে জেলার নেতারা থাকলেও যাঁর জন্য প্রচারের এত আয়োজন, বাঁকুড়া কেন্দ্রের সেই প্রার্থী মিনতি মিশ্রের দেখা মেলেনি পদযাত্রায়। দলীয় কর্মীদের একাংশের মতে, বয়স হওয়ায় এতটা হাঁটার ঝুঁকি নেননি প্রার্থী। হিন্দুস্কুলে মমতার সঙ্গে দেখা করেই গাড়ি নিয়ে তিনি সটান চলে গিয়েছিলেন পাঁচবাগায়। সেখানেই নেত্রীর সঙ্গে ফের দেখা করেন। এই বিষয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা তালড্যাংরা কেন্দ্রের প্রার্থী অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, “নেত্রী তো বলেই দিয়েছেন, সব কেন্দ্রের প্রার্থী তিনিই। সে ক্ষেত্রে আসল প্রার্থীদের রাস্তায় নামার আর দরকার কী!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 west bengal mamata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE