Advertisement
১৭ মে ২০২৪

অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে নাকি গড়াপেটা, ধন্দ পুলিশেই

সব ভোটের আগেই বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়ে থাকে। এ বারেও হচ্ছে। যতটুকু হয়েছে, তাতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পুলকিত। কিন্তু ওই সব অস্ত্রের কতটা ‘উদ্ধার’ হয়েছে আর কতটাই বা ‘সমর্পণ’, সেই প্রশ্ন উঠছে পুলিশের সংসারেই। সমর্পণ মানে পুলিশের মুখ রাখতে ‘পুলিশ-বান্ধব’ দুষ্কৃতীদের তরফে নিজের থেকে তাদের হাতে কিছুমিছু পিস্তল-রিভলভার-বুলেট তুলে দেওয়া!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪২
Share: Save:

সব ভোটের আগেই বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়ে থাকে। এ বারেও হচ্ছে। যতটুকু হয়েছে, তাতে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পুলকিত। কিন্তু ওই সব অস্ত্রের কতটা ‘উদ্ধার’ হয়েছে আর কতটাই বা ‘সমর্পণ’, সেই প্রশ্ন উঠছে পুলিশের সংসারেই। সমর্পণ মানে পুলিশের মুখ রাখতে ‘পুলিশ-বান্ধব’ দুষ্কৃতীদের তরফে নিজের থেকে তাদের হাতে কিছুমিছু পিস্তল-রিভলভার-বুলেট তুলে দেওয়া!

কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলছে, ভাল কথা। কিন্তু দু’টি সমস্যা থাকছে। ১) বাজেয়াপ্ত করা হাতিয়ার, কার্তুজের মধ্যে কতগুলো সত্যি সত্যিই পুলিশ তল্লাশি অভিযান চালিয়ে কিংবা ‘সোর্স’ মারফত খবর পেয়ে উদ্ধার করেছে, সেটা দেখতে হবে। আর দেখতে হবে, পুলিশের ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীরা নিজেদের বিপুল সংগ্রহ থেকে কতগুলো অস্ত্র বার করে দিয়েছে এবং সেগুলো দেখিয়েই পুলিশ মুখরক্ষা করছে! ২) কলকাতায় দুষ্কৃতীদের হাতে যত আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, তার তুলনায় ৪০-৪৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার যথেষ্ট কি না, সেটাও ভাবা দরকার!

এন্টালিতে অল্প দিনের ব্যবধানে গুলি চলে দু’বার। জখম দুই যুবক। ট্যাংরায় বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের মধ্যে গন্ডগোলেও গুন্ডারা রিভলভার নিয়ে ভয় দেখিয়েছে। জোড়াসাঁকোয় বাসে বন্দুক নিয়ে ধরা পড়েছে চার জন।

এই সব নজির তুলে ধরে পুলিশের একাংশ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আশঙ্কা, ভোটের মুখে খাস কলকাতায় প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকেছে। তবে নির্বাচনী প্রচারের উত্তপ্ত আবহে মঙ্গলবার লালবাজারে ক্রাইম কনফারেন্সে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার নিয়ে বাহিনীর কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর।

কলকাতায় প্রথম দফার ভোট ২১ এপ্রিল। পুলিশ জানাচ্ছে, এ দিন ক্রাইম কনফারেন্সে সিপি-র সন্তোষ প্রকাশের কারণ, ফেব্রুয়ারিতে মহানগরে ২৯টি চোরাই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তার মধ্যে ১১টি ওয়ানশটার, পাঁচটি দেশি রিভলভার এবং দু’টি দেশি পিস্তল। মিলেছে ৩২ রাউন্ড বুলেট এবং ৩০টি বোমা। মার্চে এ-পর্যন্ত শুধু লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ ১০টি বন্দুক বাজেয়াপ্ত করেছে।

কিন্তু পুলিশেরই এক কর্তার তোলা প্রশ্নগুলো ধন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সত্যি সত্যি অস্ত্র উদ্ধার, নাকি পুরোটাই ‘গট আপ’?

গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসার বলেন, ‘‘সত্যিকার পুলিশি অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র ধরা পড়লে তবেই ভোটের সময়ে গন্ডগোলের আশঙ্কা কিছুটা কমবে। নইলে ‘গট আপ’ অস্ত্র উদ্ধারে শুধু সিপি-কে তুষ্ট করে লাভ নেই।’’

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডা দমন শাখা এবং কয়েকটি থানা সত্যি সত্যিই ভাল সংখ্যায় অস্ত্র উদ্ধার করেছে। কিন্তু আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। আরও বেশি সংখ্যায় অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।

পুলিশ অফিসারদের একাংশের বক্তব্য, বিধানসভা ভোট তো অনেক বড় ব্যাপার। কলকাতায় সম্প্রতি একটি কলেজে ছাত্রভোটের মনোনয়নপত্র দাখিলকে ঘিরে গন্ডগোলে
গুলি চলে। এক পুলিশ অফিসার মারা যান। শাসক দলের মদতে পুষ্ট দুষ্কৃতীদের গুলিতেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। হরিদেবপুরে একটি পানশালার সামনে স্বয়ংক্রিয় পিস্তল থেকে ২০ রাউন্ডের বেশি গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। মহানগরের দুর্বৃত্তদের হাতে কত অস্ত্র আছে এবং তারা কতটা বেপরোয়া, এগুলোই তার প্রমাণ।

‘‘ভোটের প্রচারে শাসক-বিরোধী হাতাহাতি, মারামারি শহরে শুরু হয়ে গিয়েছে কলকাতায়। তবে গুলি যাতে না-চলে, সেটা নিশ্চিত করতে সত্যি সত্যি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে ঝাঁপাতে হবে। সিপি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে আত্মতুষ্ট হয়ে ঢিলে দিলে চলবে না,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election Police Arms
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE