Advertisement
E-Paper

পরীক্ষা শেষ, তবু বদল নেই রুটিনে

সকাল সবে ন’টা। বাড়িতে হুলুস্থূল কাণ্ড। কর্তা খেয়ে-দেয়ে বেরোবেন। তবে খাওয়া তো, কোনও মতে নাকেমুখে চাট্টি গোঁজা। তার মধ্যেই ঘন ঘন বেজে উঠছে ফোন। —‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ, এই বেরোচ্ছি।’’ এ কথা বলে ফোন কাটামাত্র ফের...।

সুস্মিত হালদার ও কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০২:৩০
রান্নাঘরে ব্যস্ত তাপস, চায়ের কাপে সাদি। — নিজস্ব চিত্র

রান্নাঘরে ব্যস্ত তাপস, চায়ের কাপে সাদি। — নিজস্ব চিত্র

সকাল সবে ন’টা। বাড়িতে হুলুস্থূল কাণ্ড। কর্তা খেয়ে-দেয়ে বেরোবেন। তবে খাওয়া তো, কোনও মতে নাকেমুখে চাট্টি গোঁজা। তার মধ্যেই ঘন ঘন বেজে উঠছে ফোন। —‘‘হ্যাঁ হ্যাঁ, এই বেরোচ্ছি।’’ এ কথা বলে ফোন কাটামাত্র ফের...।

‘‘পার্টি কমরেডদের ফোন আসছে বারবার। পলাশি সুগার মিলে শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক রয়েছে,’’ মোবাইল ফোনে খুটখুট করতে করতেই বললেন পলাশিপাড়া বিধানসভার প্রার্থী এস এম সাদি।

এই তো ‘পরীক্ষা’ দিয়ে উঠলেন, এর মধ্যেই ‘পড়াশোনা’ শুরু করে দিয়েছেন? অবসরের প্রশ্নই নেই। সাদি সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠন সিটুর জেলা সম্পাদক। বললেন, ‘‘ভোট নিয়ে অনেক দিন ব্যস্ত ছিলাম। তাই শ্রমিক সংগঠনের জন্য তেমন সময় দিতে পারিনি। এ বার তাই বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক করতে হচ্ছে।’’ এ দিন পলাশি সুগার মিলে যাওয়াটাও সেই কারণেই। সেখান থেকে ফিরে দুপুরে পার্টির মিটিং। মধ্যাহ্ন ভোজনটা জেলার কার্যালয়েই সেরে ফেলবেন।

অতএব ভোট মিটেছে, কিন্তু ব্যস্ততা এতটুকু কমেনি? ছুটিও নেই? বিনোদন, তা-ও নেই? —‘‘না না, তা ঠিক নয়।’’ খানিক ইতস্তত করে জানালেন, সংগঠনের কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। ছেলে মাধ্যমিক দেবে এ বার। পড়াশোনার ফাঁকে গান শুনতে ভালবাসে। রাতে বই পড়তে পড়তে ছেলের চালানো গানগুলো শোনেন সাদি। বিদেশি গান শুনতেও ভাল লাগে। এ ছাড়া রয়েছে বসার ঘরের আলমারি ঠাসা বইগুলো। নানা বিষয়ের। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘‘এই বইটা পড়েছেন।’’ মলাটে জ্বলজ্বল করছে সিঙ্গুর লেখাটা। এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘ভাল বই। পড়ে দেখতে পারেন।’’

তা হলে কি পরীক্ষার পর ছুটি আর আসন্ন রেজাল্টের চাপ কাটাতে বই ও গান? প্রশ্নটা পাতে পড়তেই ফের বেজে ওঠে ফোন। দেরি হয়ে যাচ্ছে। পলাশি রওনা দিতে হবে। গাড়িতে উঠতে উঠতে কিছুটা সিরিয়াস হয়েই বললেন, ‘‘না। আসলে নির্বাচনটা আমাদের কাছে দলের আর পাঁচটা রাজনৈতিক কর্মসূচির মতোই।’’

প্রতিদ্বন্দ্বী তাপস সাহার অবস্থাও প্রায় একই রকম। সারা দিন দলীয় কার্যালয়ে পড়ে রয়েছেন। ছুটি নেই। ঘনিষ্টরা জানালেন, উনি শুধু ঝান্ডাই ধরেন না, ভাল রাঁধেনও। দলীয় মধ্যে কাজে বেরনোর আগে প্রতিদিন হেঁশেল সামলাতে হয় তাপসবাবুকে। স্ত্রী মারা গিয়েছেন বছর সাতেক আগে। ছেলে থাকে বেঙ্গালুরুতে। বাড়িতে বৃদ্ধা মা। কর্তা বলুন কর্তা, গিন্নি বলুন গিন্নি, সব দায়িত্বই তাঁর।

ঘুম থেকে উঠে পড়েন খুব ভোরে। তার পর চা খেয়ে শরীরচর্চা। এরই মধ্যে বাড়িতে শুরু হয়ে যায় মানুষের আনাগোনা। সে সব সারতে সারতেই বসে পড়েন বটি আর সব্জি নিয়ে। কথা বলতে বলতে চলে রান্নার আয়োজন। রান্নার পাট সেরে খাওয়াদাওয়া। তার পর খানিক বিশ্রাম করে বেরিয়ে পড়েন। কখনও তেহট্ট তো কখনও পলাশিপাড়া। বেতাইয়ের দলীয় কার্যালয়ে উঁকি মারলেও দেখা মিলতে পারে তাঁর। তবে ইদানিং শরীরটা ঠিক সঙ্গ দিচ্ছে না। কিন্তু এ সব তো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা? তা হলে ঘর-সংসার-রাজনীতি ছেড়ে পরীক্ষা শেষে আর ছুটিতে যাওয়া হল না?

ঘরের লাল মেঝেতে বসে অভ্যস্ত হাতে সজনে ডাঁটা কাটতে কাটতে হেসে বললেন, ‘‘মা সকলের আগে।’’

assembly election 2016 CPM Vote
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy