Advertisement
E-Paper

‘আদরে’ ক্রটি না রেখেও বাহিনীর আচরণে হতাশ ভোট ম্যানেজাররা

‘কাল রাতে মদ-মাংস খাইয়ে বারোশো টাকার বেশি খরচা করেছি। আর আজ সকালে বুথের কাছে যেতেই বন্দুকের নল দুলিয়ে বলে কি না ভাগ হিঁয়াসে’!

পীষূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০২:২০
সিপিএমকে ভোট দেওয়ার শাস্তি পেলেন মোল্লা মোশাররফ। ছবি: মোহন দাস।

সিপিএমকে ভোট দেওয়ার শাস্তি পেলেন মোল্লা মোশাররফ। ছবি: মোহন দাস।

‘কাল রাতে মদ-মাংস খাইয়ে বারোশো টাকার বেশি খরচা করেছি। আর আজ সকালে বুথের কাছে যেতেই বন্দুকের নল দুলিয়ে বলে কি না ভাগ হিঁয়াসে’!

হতাশা চেপে রাখতে না পেরে এ সব বলতে বলতে চিৎকার করছিলেন আরামবাগের নৈসরাই ৪ নম্বর বুথে ভোট করানোর দায়িত্বে থাকা তৃণমূল নেতা মীর চঞ্চল।

তবে এটা ভেবে তিনি সান্ত্বনা পেতেই পারেন, শুধু তাঁর প্রতিই নয়, এ দিন আরামবাগ, গোঘাট, পুরশুড়া ও খানাকুল—মহকুমার চারটি কেন্দ্রের ১১৬৫টি বুথের সবকটিতেই কোনও দলের নেতাদেরই দাঁত ফোটাতে দেয়নি কমিশনের কেন্দ্রীয় বাহিনী।

যেমন গোঘাটের বালি অঞ্চলের ২৬১ বুথের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিকাশ কাবরির ক্ষোভ, “কেন্দ্রীয় কমিটির লোকগুলো রোদে কষ্ট পাবে বলে নিজেরা খরচ করে তাদের ছাউনি করে দিয়েছি। কাল রাতে খাবারের যাবতীয় ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম। আজ বুথের কাছাকাছি গেলিই তেড়ে আসছিল।” একইরকম অভিজ্ঞতা খানাকুল এবং পুরশুড়ার তৃণমূল নেতাদেরও।

আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার গ্রাম বলুন্ডিতে ১৪৩ ও ১৪৪ নম্বর বুথে সকাল থেকেই বাহিনী অবাঞ্ছিত কাউকে ঘেঁষতে না দেওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিলেন দলের নেতারা। দুপুর ১ টা নাগাদ দলের নেতারা বাপ্পা নামে একজনকে ঢুকতে বললে, কেন্দ্রীয় বাহিনী বৈধ কাগজ পত্র না পেয়ে তাকে আটকে রাখে। পরে কমিশনের পর্যবেক্ষক পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখে ওই যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

গোঘাটের গুরুলিয়া ভাতশালার ১২৭ নম্বর বুথে বিরোধী দলগুলির কোনও এজেন্ট না থাকায় তৃণমূলের এজেন্ট ভবানীপ্রসাদ চৌধুরী প্রভাব খাটিয়ে ভোটারদের দলের অনুকূলে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে গিয়েছিলেন। আর তা করতে গিয়েই হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের হাতে মার খেয়ে বুথ থেকে বেরিয়ে যেতে হল তাকে। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বহড়াশোল গ্রামে ১১৭ নম্বর বুথে অবাঞ্ছিত ভিড় দেখে বাহিনীর জওয়ানের তাদের হটে যেতে বলে। না সরায় বেধড়ক লাঠি পেটা করে নিমেষেই জায়গা ফাঁকা করে দিল জওয়ানেরা। পাল্টা ইট-পাটকেলও উড়ে এল তাড়া খাওয়া লোকজনদের কাছ থেকে। দিনভর বারবার চেষ্টার করেও বাহিনীর চোখ রাঙানিতে শেষ পর্যন্ত নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে ভোট ম্যানেজারদের।

তবে সকাল থেকেই বাহিনীর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে বিকল্প রাস্তা হিসাবে তাঁদের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের ভোট ম্যানেজার, কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ জেলার সিপিএম নেতৃত্বের। হামলার প্রথন ঘটনাটি ঘটে সকাল ৯টা নাগাদ আরামবাগের পুইন গ্রামে। সেখানে ১৫ নম্বর বুথে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় সিপিএম কর্মী মোল্লা মোশাররফ ওরফে এম বাবুকে গ্রামের চৌধুরী পাড়ায় আটকে লাঠি মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনায় তৃণমূলের আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সিপিএম, তাদের মধ্যে শেখ ইসমাইল এবং জহুর আলিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বহড়াশোলের ১১৭ নম্বর বুথে গোমলারে খবর পেয়ে বেলা ১২টা নাগাদ সেখানে হাজির হন গোঘাটের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী বিশ্বনাথ কারক। তাঁর অভিযোগ, বুথ পরিদর্শন করে বেরিয়ে আসার পথে তৃণমূলের লোকজন তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করেয় গায়ে হাতও চালায়। অভিযোগ পেয়ে তৃণমূলের চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুরশুড়া বিধানসভার খানাকুল থানার সারদা গ্রামে সিপিএম সমর্থকদের ভোট আটকাতে না পেরে বিকালে গ্রামে চড়াও হয়ে মারধর করে ৭০ জনকে ঘরছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও খানাকুলের কিশোরপুর ১ ও ২, আরামবাগের আরান্ডি ১ সহ মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত মারধরের ঘটনা ঘটে। তৃণমূলের অভিযোগ, মহকুমা জুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে মার খেয়ে তাদের দলের প্রায় ৮৫ জন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।

assembly election 2016 CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy