Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: আকাশ পথে ভোট প্রচারেই ১০০ কোটি

১৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত শুধু কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেছে ভোট-প্রচারে ভাড়া নেওয়া প্রায় ৩০০টি হেলিকপ্টার।

দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টার।

দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টার। ছবি: পিটিআই।

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৫৬
Share: Save:

রাজ্য-সহ সারা দেশে কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে রকেট গতিতে। অথচ হাসপাতালে শয্যা বাড়ন্ত। অপর্যাপ্ত প্রতিষেধক। অনেক জায়গাতেই চিকিৎসা-পরিকাঠামো কার্যত ভেঙে পড়ার জোগাড়। ‘গরিব দেশে টাকার অভাবে’ যা হয়। কিন্তু সেই ‘গরিব দেশেরই’ একটি মাত্র রাজ্যের ভোটে শ’য়ে শ’য়ে কোটি টাকা উড়ছে শুধু আকাশযানে! বিমান আর হেলিকপ্টারের ভাড়ায় যে বিপুল অঙ্ক রাজনৈতিক দলগুলি (বিশেষত বিজেপি) গুনছে, তার ভগ্নাংশেও কত জনকে নিখরচায় টিকা দেওয়া সম্ভব হত কিংবা বাড়ানো যেত কতগুলি কোভিড-শয্যা, তা হিসাব করা শক্ত।

১৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত শুধু কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেছে ভোট-প্রচারে ভাড়া নেওয়া প্রায় ৩০০টি হেলিকপ্টার। বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা প্রচারে আসছেন, তাঁরা সাধারণত ব্যবহার করেন বেল অথবা ইউরোকপ্টারের তৈরি দু’ইঞ্জিন ও ছয় আসনের হেলিকপ্টার। ভাড়া ঘণ্টায় প্রায় ২ লক্ষ টাকা। এক দিনে ভোট প্রচারে তা যদি পাঁচ ঘণ্টাও ওড়ে, তা হলেই খরচ ১০ লক্ষ টাকা।

নেতা-নেত্রী যখন সভায় বক্তব্য রাখেন, তখন প্রথম দু’ঘণ্টায় ভাড়া লাগে না। তার পর থেকে ঘণ্টায় ১০ হাজার টাকা করে ‘ওয়েটিং চার্জ’। রাতে কপ্টার থাকলে, বাড়তি ভাড়া প্রায় ৫০ হাজার টাকা। সুতরাং, এখনও পর্যন্ত ৩০০ কপ্টারেই খরচের অঙ্ক প্রায় ৩০ কোটি।

এর বাইরেও ব্যবহৃত হচ্ছে দু’ইঞ্জিনের ২০ আসনের হেলিকপ্টার। ভাড়া ঘণ্টায় ২.৫ লক্ষ টাকা। এক ইঞ্জিনের হেলিকপ্টার তুলনায় সস্তা। ভাড়া ঘণ্টায় এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি। তবে, প্রচারে আর ভেঙে পড়ার ভয় সঙ্গী করে উড়তে চান কোন নেতা? তাই এর ব্যবহার বেশ কম। জনসভায় ধুলোর ঝড় তুলে হেলিকপ্টার নামা দেখতে যাঁরা ভিড় করেন, তাঁদেরও অনেকে বলেন, ‘জীবনের দাম সকলের সমান নয়।’

এ বার বঙ্গ-ভোটে ছোট বিমানও ব্যবহার হচ্ছে খুব। ভিন্‌ রাজ্য থেকে অভিনেতা, নেতা-নেত্রীরা তা ভাড়া নিয়ে চলে আসছেন কলকাতায়। বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে প্রচার সেরে আবার সেই ছোট বিমানে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা। কলকাতায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০টি এমন ছোট বিমান আসার খবর রয়েছে। বাদ যায়নি অন্ডাল বিমানবন্দরও। ১৫ মার্চের পর থেকে সেখানে ১৩টি ছোট বিমান ও ২১ টি হেলিকপ্টার নেমেছে। বাগডোগরা, এমনকি বন্ধ হয়ে থাকা কোচবিহার বিমানবন্দর থেকেও বিশেষ অনুমতিতে ওঠা-নামা করছে ছোট বিমান ও কপ্টার।

সূত্রের খবর, ঘণ্টায় একটি ছোট দু’ইঞ্জিন বিমানের ভাড়া ৯৫ হাজার থেকে ১.১ লক্ষ টাকা। কিন্তু, জনসভার মাঠে তা নামতে পারে না বলে হেলিকপ্টারের ব্যবহার বেশি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন। কিন্তু মোট ব্যবহারের প্রায় ৯০ শতাংশ বিজেপির। তাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ভিন্‌ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বড় নেতারা যাতায়াত করছেন হেলিকপ্টারেই।

এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রথম জন বায়ুসেনার বিমানে আসছেন কলকাতা বা অন্ডালে। সেখান থেকে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারেই প্রচারে ঘুরছেন। খরচ মেটাচ্ছে দল। এই রকম ভিভিআইপি সুরক্ষার বিমানের ঘণ্টা প্রতি ওড়ার খরচ ৩ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। দিল্লি থেকে এক বার যাতায়াতেই খরচ ১০-১২ লক্ষ টাকা। অমিত শাহের বিমানের ভাড়া সেই তুলনায় কম, তবে অবশ্যই ফেলনা নয়।

ভিভিআইপিদের অনেকে নতুন এমব্রয়ার বিমান ব্যবহার করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার ভাড়া ঘণ্টায় প্রায় এক লক্ষ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর সফরে নিরাপত্তার জন্য আবার হেলিকপ্টার লাগে তিনটি। ফলে সব খরচ জুড়লে, বাংলায় শুধু আকাশপথে ভোট-প্রচারেই খরচ হচ্ছে একশো কোটির বেশি।

গ্রামে-গঞ্জে হেলিকপ্টারকে মজার ছলে ‘ভোট-পাখি’ বলেন অনেকে। কোভিডে প্রাণ-পাখি যায় যাক, ভোট-পাখি উড়লেই হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE