Advertisement
E-Paper

Bengal Polls 2021: কুরুক্ষেত্রে অর্জুন বনাম দ্রোণাচার্য

মেখলিগঞ্জ কেন্দ্রে এ বার তিন শিবিরের প্রার্থীরাই একসময় ফরওয়ার্ড ব্লকে ছিলেন।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ০৫:৪৮
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

চ্যাংরাবান্ধা, ভোটবাড়ি, কুচলিবাড়ির গ্রাম জুড়ে নানা রঙের পোস্টার, ব্যানার। তৃণমূলের পরেশ অধিকারী ছাড়াও ভোট লড়াইয়ে বিজেপির দধিরাম রায়, ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী গোবিন্দ রায়ের সমর্থনে একেবারে ‘যুদ্ধং দেহি’ প্রস্তুতি সমর্থকদের। দোকানে গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তুফান তুলছিলেন মেখলিগঞ্জের কয়েক জন যুবক। এলাকার ভোটযুদ্ধের উত্তাপ বাড়ছে। ভোটের কথা তুলতেই চ্যাংরাবান্ধার বাসিন্দা বছর তিরিশের যুবক হেসে ফেললেন। বললেন, “যুদ্ধ কী বলছেন, পুরো কুরুক্ষেত্র! লড়াই পূর্বপরিচিতদের।” মাথাভাঙায় প্রেক্ষাপট আলাদা। সেখানে ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব’তে কুরুক্ষেত্রের আঁচ।

মেখলিগঞ্জ কেন্দ্রে এ বার ওই তিন শিবিরের প্রার্থীরাই একসময় ফরওয়ার্ড ব্লকে ছিলেন। পরে পরেশ তৃণমূলে, দধিরাম বিজেপিতে যোগ দেন। গোবিন্দবাবু অবশ্য ‘সিংহ’ শিবিরেই আছেন। ফব প্রার্থীর কথায়, “পরিচিতদের দেখে অর্জুন বিষাদগ্রস্ত হওয়ায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, প্রত্যেকের কৃতকর্মের ফল নির্দিষ্ট হয়ে আছে। কেউ আগে দলে ছিল বলে ছাড় নেই, এটা নীতির লড়াই।” পরেশ বলছেন, “এখানে লোকসভার লিড বিজেপি পাবে না। আমিই জিতব। দধিরাম তো আমার হাতেই তৈরি।”

আবার পুরাণে ফিরে যান দধিরাম। বলেন, “লক্ষ্যভেদ অর্জুনই করেছিল। দ্রোণাচার্য নয়। কৌশলের সব পাঠই আমার জানা।”

মাথাভাঙার প্রেক্ষাপটটা অবশ্য একটু আলাদা। তবে কুরুক্ষেত্রের আঁচ এখানেও মিলছে। যেমন, চড়া রোদেও দিনভর গ্রামকে গ্রাম চষে ফেলছেন গিরীন্দ্রনাথ রায়, ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। কপালের ঘাম মুছে উন্নয়ন আর আগামী দিনের পরিকল্পনার কথা অনর্গল বলে চলেছেন। গিরীন্দ্র বলছিলেন, “আমি টিকিটের আবেদন করিনি। দল চেয়েছে, লড়ছি। জিতবও। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন। তাঁর হাত শক্ত করার জন্যই দিনভর চষে বেড়াচ্ছি। সাড়াও পাচ্ছি।” প্রচারে জোর টক্কর দিচ্ছেন বিজেপির সুশীল বর্মণ, সিপিএমের অশোক বর্মণরাও। গত ভোটে ওই কেন্দ্রে জয়ী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণকে টিকিট না দেওয়া নিয়েও বিঁধছেন। শোলমারি গ্রামে প্রচার সেরে বেরনোর সময় সুশীল বলছিলেন, “প্রার্থী বদলেও তৃণমূলের লাভ হবে না। এলাকায় উন্নয়ন তো কিছুই হয়নি।” ঘোকসাডাঙায় প্রচারের ফাঁকে সিপিএম প্রার্থী অশোক বর্মণ বলেন, “নীল-সাদা রং ছাড়া তৃণমূল কিছু করেনি। সে জন্য জেতা প্রার্থীকে অন্য এলাকায় লড়তে হচ্ছে। এ সব কথা মানুষ বলছেন।”

২০১১ সালের পর গত বিধানসভা ভোটেও মাথাভাঙা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ। দু’বারই দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিপিএম, বিজেপি তৃতীয়। গত নির্বাচনে তৃণমূলের মেখলিগঞ্জে অর্ঘ্য রায় প্রধান ফরওয়ার্ড ব্লকের পরেশ অধিকারীকে হারিয়ে জয়ী হন। সেখানে তৃতীয়ও স্থানে ছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটে অবশ্য দুই কেন্দ্রেই ‘লিড’ নিয়েছে বিজেপি।

সেই ছায়া মাথায় নিয়ে গিরীন্দ্র শোনাচ্ছেন উন্নয়নের কথা— এ বার বিধানসভা ভোটের আগে জয়ী সেতু হয়েছে। দূরত্ব কমেছে মেখলিগঞ্জ-হলদিবাড়ির। প্রচারে সেতুর কৃতিত্ব নিয়েও দাবি, পাল্টা দাবি উঠছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, প্রার্থী বদল— ভোট অঙ্কে সবই আতস কাচের নীচে। মাথাভাঙার বদলে কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রে এ বার তৃণমূল প্রার্থী করেছে মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণকে। বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে তিনি বলেন, “রাস্তা, পানীয় জল, পথবাতি থেকে সেতু, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস— প্রচুর কাজ হয়েছে। দলের নির্দেশে অন্যত্র লড়ছি।” মেখলিগঞ্জের বিদায়ী বিধায়ক অর্ঘ্য রায় প্রধান এ বার মাথাভাঙায় প্রচারের দায়িত্বে। অর্ঘ্য বলেন, “দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেটা পালন করছি।” দুই কেন্দ্রে ভোট-চর্চায় ওঠে পুরনো কথা। কুরুক্ষেত্রের কাহিনির মতো।

BJP TMC CPM West Bengal Assembly Election 2021
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy