Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Nandigram

Bengal Polls: বহিরাগত-ছায়া, নজরদারি কই

এ বারের বিধানসভা ভোটে রাজ্যের সব চেয়ে ‘হাই প্রোফাইল’ কেন্দ্র ঘুরে দেখলে যদিও সংশয় জাগছে, সবই কি আসলে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো?

প্রস্তুতি: নিজেদের থার্মাল গান পরীক্ষা করে নিচ্ছেন নির্বাচনকর্মীরা। বুধবার হলদিয়ায়।

প্রস্তুতি: নিজেদের থার্মাল গান পরীক্ষা করে নিচ্ছেন নির্বাচনকর্মীরা। বুধবার হলদিয়ায়। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

সন্দীপন চক্রবর্তী
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২১ ০৪:০৭
Share: Save:

ভোটের আগেই জমে উঠল ‘খেলা’!

এমনিতে থমথমে পরিবেশ। মোড়ে মোড়ে গঞ্জ-সুলভ জটলা। মূল রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল অবশ্য দেখা যায়নি বললেই চলে। যুযুধান দুই শিবির তৃণমূল এবং বিজেপি পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, নজরদারি এড়িয়ে বাইরে থেকে লোক ঢোকানোর। বিজেপির বিরুদ্ধে আরও নির্দিষ্ট করে অভিযোগ উঠছে, সন্ধ্যা নামতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি চলছে ভোট দিতে না যাওয়ার জন্য। অশান্তি এড়াতে আজ, বৃহস্পতিবার ভোটের দিন সকাল ৬টা থেকে ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা হয়েছে। যার অর্থ, এলাকার চায়ের দোকান বন্ধ থাকবে এবং চার জনের বেশি জড়ো হওয়া নিষেধ।

প্রশাসনের তরফে মাইক নিয়ে ১৪৪ ধারার প্রচার শুরু হওয়ায় সন্ধ্যার পর থেকেই দোকানপাটের ঝাঁপ বন্ধ হতে শুরু করেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, গ্রামের দিকে মহিলাদের দল বেঁধে ভোট দিতে যাওয়াই রেওয়াজ। তা হলে কি ১৪৪ ধারার কোপে সেটাও চলবে না? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের এক আধিকারিক অবশ্য বলেন, ‘‘বৈধ পরিচয়পত্র নিয়ে ভোট দিতে গেলে কোনও সমস্যা আছে বলে মনে করি না। নিষেধাজ্ঞা হয়েছে জটলা করার ক্ষেত্রে।’’

ভোটের বুথে লাইন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এ বারের বিধানসভা ভোটে রাজ্যের সব চেয়ে ‘হাই প্রোফাইল’ কেন্দ্র ঘুরে দেখলে যদিও সংশয় জাগছে, সবই কি আসলে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো? মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর উচ্চগ্রামে ওঠা মহারণ যেখানে হচ্ছে, সেখানে নিরাপত্তার জালে মাছিও গলতে পারার কথা নয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা হুগলিতে প্রচার সেরে নন্দীগ্রামে ভোটের জন্য নেওয়া বাড়িতে এসে রয়েছেন। তার মধ্যেও বোমা উদ্ধার হচ্ছে। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের সোনাচূড়ায় সন্ধ্যায় হলদিয়ার বাসিন্দা এক যুবককে বোমাসমেত পাকড়াও করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল কর্মীরা। বিজেপির মণ্ডল সভাপতির ‘নির্দেশে’ তিনি বোমার ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে ভিডিয়োয় স্বীকার করতে দেখা গিয়েছে ধরা পড়া যুবককে। নন্দীগ্রাম থানা এমন কোনও ঘটনার কথা জানা নেই বললেও তৃণমূল প্রার্থী মমতার নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান বলছেন, ‘‘সব ঘটনা কমিশন ও প্রশাসনকে জানাচ্ছি। কিন্তু কোথায় কী? বিরুলিয়া, বয়াল, সামসাবাদ, জামবাড়ি, গোকুলনগর-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির লোকজন গিয়ে মানুষকে হুমকি দিচ্ছে।’’ ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্বদেশ পাত্রেরও অভিযোগ, নন্দীগ্রামে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার পরিকল্পনা করছে বিজেপি। তৃণমূল সমর্থকদের কেউ কেউ বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ।

বিরুলিয়া ও সামসাবাদ এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূল সমর্থকদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বিজেপি, এমন অভিযোগও তুলেছে শাসক দল। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল সব অভিযোগ নস্যাৎ করে পাল্টা বলছেন, ‘‘ভয় দেখানো বিজেপির সংস্কৃতি নয়। বোমা উদ্ধারের গল্পও সাজানো ঘটনা। ওরাই বরং কেন্দেমারি ঘাট দিয়ে এ দিনও বাইরের লোকজন নিয়ে এসেছে।’’ বিজেপি প্রার্থীর কার্যালয় চত্বরে যাদের জটলা এ দিন সন্ধ্যায় চোখে পড়েছে, তাঁরা সকলে ‘ভূমিপুত্র’, এমন দাবি অবশ্য স্থানীয় মানুষ করছেন না।

সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের এজেন্টেরও বক্তব্য, তৃণমূল ও বিজেপি দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই ভয় দেখানোর অন্তত ১৭টি অভিযোগ তাঁরা কমিশনের পর্যবেক্ষককে জানিয়েছেন।

রাত পর্যন্ত যা ছবি, অভিযোগের সংখ্যা শাসক দল তৃণমূলের দিক থেকেই বেশি। তাদের জন্য আরও বাড়তি উদ্বেগের কারণ, এত দিন এই তল্লাটের গোটা নির্বাচন পরিকাঠামো তৃণমূলের তরফে নিয়ন্ত্রণ করত অধিকারী পরিবার। তারা বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে সেই সাংগঠনিক যন্ত্রের অনেকটাই চলে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরে। আর যে অংশটা রয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে ‘বিভীষণ’ কোথায় কে আছে, তার সঠিক হদিস তৃণমূল নেতাদের কাছে নেই। রেয়াপাড়ার দোকানে বসে প্রবীণ এক শিক্ষক বলছিলেন, ‘‘মেদিনীপুর ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামে বিখ্যাত। এখন মীরজাফরের নাম নিয়ে চর্চা হচ্ছে। তলে তলে রায়দুর্লভ, জগৎ শেঠ, উমিচাঁদ কত আছে, কে জানে!’’

সে না হয় গেল রাজনীতির অঙ্ক বদলের কথা। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের ভোটের আগে এত অভিযোগ কেন আসবে? নজরদারি কোথায়? পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক স্মিতা পাণ্ডে বলছেন, ‘‘পুলিশ সুপারকে বলছি ওই বুথগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চ করাতে।’’ পুলিশ সুপার সুনীল কুমার যাদবের বক্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রামের প্রতিটি এলাকায় হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। যেখানে অভিযোগ উঠছে, সেখানে কিউআরটি, এইচআরএফএসের মতো বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।’’

নন্দীগ্রামে ভোটের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের (নির্বাচনী বিধি মেনে এলা্কা ছেড়েছেন) প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটিন রুটমার্চটুকুও হয়নি। আর কবে ব্যবস্থা নেবে? রাতেই যদি অনেক কিছু দখল করে খেলা শেষ করে দেয়, তার পরে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE