এক কিশোরকে চড় মেরেছিলেন তার বন্ধুর বাবা। সেই ঘটনাই গড়াল রাজনৈতিক সংঘর্ষে। ভাঙচুর করা হল বেশ কয়েকটি বাড়ি, গাড়ি ও দোকান। এমনকি, এক রাউন্ড গুলি চলারও অভিযোগ উঠল। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। রবিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত লিলুয়ার আনন্দনগরে।
বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পরেই হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক সংঘর্ষ। রবিবার দক্ষিণ হাওড়ায় বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই সেখানকার লিচুবাগান এলাকায় দেওয়াল লিখন ঘিরে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। ওই রাতেই লিলুয়ার আনন্দনগরের ঝাউতলা এলাকার তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে সুকান্তপল্লির বিজেপি কর্মীদের। বিজেপির অভিযোগ, রাত ১১টা নাগাদ তাঁদের দলের সমর্থকেরা যখন একটি জায়গায় পিকনিক করছিলেন, সেই সময়ে ঝাউতলা থেকে তৃণমূলের ৫০-৬০ জনের একটি সশস্ত্র দল এসে বিজেপি কর্মীদের বাড়িতে ঢুকে ভোজালি ও ছুরি নিয়ে হামলা চালায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। ফুটবল খেলা নিয়ে গোলমাল বেধেছিল দুই কিশোরের। তখন এক কিশোরের বাবা অন্য কিশোরকে চড় মারেন। এই ঘটনাই রাজনৈতিক রং নেয়। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, রবিবার রাতে দু’পক্ষ বিষয়টি মিটিয়ে নেবে। কিন্তু অভিযোগ, মীমাংসার কথা বললেও রাতে এলাকার তৃণমূল কর্মীরা সুকান্তপল্লিতে এসে বিজেপি কর্মীদের উপরে চড়াও হন। এলাকার বাসিন্দা, টুম্পা পণ্ডিত নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘আমাকে ও আমার শাশুড়িকে মেরেছে। বেলচা, লোহার রড নিয়ে আক্রমণ করেছে। বাচ্চাদেরও ওরা রেয়াত করেনি।’’
ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি আছেন দীপঙ্কর শেঠ এবং মন্মথ হালদার নামে দু’জন। এ দিন হাসপাতালে শুয়ে দীপঙ্কর বলেন, ‘‘আমার ভাইকে কোনও ভাবে বাঁচিয়েছি তৃণমূল কর্মীদের হাত থেকে। ওরা গুলিও চালিয়েছে এক জনের উপরে। আমার মাথায় ভোজালি দিয়ে মেরেছে। মাথায় সাতটি সেলাই পড়েছে।’’
রবিবারই ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হিসাবে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনা প্রসঙ্গে রাজীববাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল তো খেলা হবে বলে খেলা শুরু করে দিয়েছে। আমাদের বহু কর্মী আহত হয়েছেন। আসলে ডোমজুড়ে তৃণমূল হেরে যাবে বলেই এই সব শুরু করেছে।’’
যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করে ডোমজুড়ের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ ঘোষ বলেন, ‘‘এর সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই। ঘটনাটা ঠিক কী হয়েছে, তা-ও আমি জানি না। যতটুকু শুনেছি, ফুটবল খেলার সময়ে একটি ঝামেলা ঘিরে এই ঘটনা। বিজেপি এখন সব জায়গাতেই তৃণমূলকে জড়াচ্ছে।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘দু’পক্ষে একটা মারপিট হয়েছিল। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় বিজেপির দু’জন ও তৃণমূলের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’