E-Paper

‘সান্তা আমাদের ভুলেছে’, আক্ষেপ চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের

চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ফের নিয়োগের পরীক্ষা কবে হবে, তার সূচি এখনও দেয়নি স্কুল সার্ভিস কমিশন। তার পরে রয়েছে নথি যাচাই ও ইন্টারভিউ-পর্ব। গ্রুপ-সি পরী‌ক্ষার্থীদের জন্য আছে টাইপের পরীক্ষা। সব শেষে বেরোবে মেধা তালিকা।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৩
উত্তরপাড়ার একটি দোকানে কেক বিক্রি করছেন চাকরিহারা এক শিক্ষাকর্মী অচিন্ত্য মণ্ডল।

উত্তরপাড়ার একটি দোকানে কেক বিক্রি করছেন চাকরিহারা এক শিক্ষাকর্মী অচিন্ত্য মণ্ডল। — নিজস্ব চিত্র।

গত এক বছরে পাল্টে গিয়েছে অনেক কিছুই। বড়দিনের উৎসবে যখন মেতে আছে সবাই, তখন গত ন’মাস ধরে বেতন না পেয়ে অন্ধকারে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, বড়দিনের উৎসব পালন নয়, সংসার চালানোর জন্য মুদির দোকানে কাজ, এমনকি মজুরের কাজও তাঁদের কাছে এখন অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। ইচ্ছে থাকলেও এখন পরিবারের জন্য কেক কিনতে অপারগ তাঁরা। বরং, জীবিকা নির্বাহের জন্য কেক বিক্রি করতে রাজি। কারণ, পরিজনেদের মুখে হাসি ফোটাতে বড়দিনে সান্তাক্লজ়ের দেখা পাননি তাঁরা।

যেমন, গত ন’মাস ধরে বেতনহীন উত্তরবাড়ার বাসিন্দা, চাকরিহারা গ্রুপ-সি কর্মী অচিন্ত্য মণ্ডল বলেন, ‘‘মাসের পর মাস বেতন না পেলে সংসার চালাব কী ভাবে? বাড়িতে অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ লাগে। মাসে আট হাজার টাকা ঋণের কিস্তি শোধ করতে হয়। বাড়িতে স্ত্রী ও মেয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় সংসার চালাতে কিছু তো করতেই হবে। বাড়ির কাছেই একটি মুদির দোকানে কাজ ধরেছি। বড়দিন উপলক্ষে দোকানে কেক এসেছে। সেই কেক বিক্রি করছি। বড়দিনে পরিবার নিয়ে আনন্দ করা আমাদের কাছে এখন বিলাসিতা।’’ অচিন্ত্যের প্রশ্ন, ‘‘এই অবস্থা আর কত দিন? দাগি শিক্ষাকর্মীদের তালিকা ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে এসএসসি। আমাদের নাম তো সেই তালিকায় নেই। তা হলে কেন আমাদের স্কুলে ফেরানো হবে না? যে শিক্ষকেরা দাগি নন, তাঁদের তো স্কুলে ফেরানো হয়েছে। তাঁরা বেতন পাবেন আগামী বছরের ৩১ অগস্ট পর্যন্ত। তা হলে এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন?’’

একই প্রশ্ন তুলছেন আর এক চাকরিহারা গ্রুপ-সি শিক্ষাকর্মী অমিত মণ্ডল। সল্টলেক সেক্টর ফাইভের বাসিন্দা অমিত জানাচ্ছেন, এক বছরে পুরো চিত্রটাই পাল্টে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর বন্ধুদের সঙ্গে বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটে গিয়েছিলাম। পরিবার ও বন্ধুরা অনেকেই পাশে আছেন। কিন্তু বড়দিনের উৎসবে মেতে ওঠার মতো মানসিকতা নেই।’’ অমিত জানান, পরিস্থিতি এমন যে, সংসার চালাতে তাঁদের কেউ ওষুধের দোকানে, কেউ হার্ডওয়্যারের দোকানে, কেউ দিনমজুর বা আনাজ বিক্রিও করছেন।

স্ত্রী মাঝেমধ্যেই কারও সঙ্গে কথা বলেন না। অবসাদে ডুবে থাকেন। অথচ, এমন ছিলেন না তিনি। যে কোনও উৎসবে যোগ দেওয়ার উৎসাহ ছিল খুব— জানাচ্ছেন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মী পূরবী মণ্ডলের স্বামী মিঠুন বিশ্বাস। মিঠুন বলেন, ‘‘নতুন করে পরীক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু পরীক্ষা দিলেই যে চাকরি ফেরত পাবে, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? এই অবস্থায় কেক কেটে বড়দিন পালনের কোনও ইচ্ছে নেই।’’

চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ফের নিয়োগের পরীক্ষা কবে হবে, তার সূচি এখনও দেয়নি স্কুল সার্ভিস কমিশন। তার পরে রয়েছে নথি যাচাই ও ইন্টারভিউ-পর্ব। গ্রুপ-সি পরী‌ক্ষার্থীদের জন্য আছে টাইপের পরীক্ষা। সব শেষে বেরোবে মেধা তালিকা। এত কিছু কি আসন্ন নির্বাচনের আগে শেষ হবে? প্রশ্ন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের। তাঁদের মতে, যে গতিতে পুরো প্রক্রিয়া চলছে, তাতে সামনের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিয়োগ হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। অমিত বলেন, ‘‘এই অনিশ্চয়তার জীবনে এ বার দুর্গাপুজো যেমন অন্ধকারে কেটেছে, তেমনই কাটছে বড়দিন। এ বারের বড়দিনে সান্তাক্লজ় আমাদের বাড়ির পথ ভুলেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC WB Teachers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy